প্রশ্নকর্তা: ধ্যানলিঙ্গকে অনন্য বলা হয় কেন? এর মধ্যে এমন কি আলাদা ব্যাপার আছে, সদগুরু?

সদগুরু: ধ্যানলিঙ্গের অনুপমতা হ'ল এর মধ্যে সাতটি চক্রের সবকটিই প্রতিষ্ঠিত। লিঙ্গদন্ড- একটি তামার নল যার মধ্যে ঘনীভূত পারদ রয়েছে, তাতে এই সাতটি চক্রই পূর্ণ রূপে প্রতিষ্ঠিত রয়েছে এবং তামার বেড়ি দিয়ে ঘেরা ধ্যানলিঙ্গের বাইরের পরিধিটিও এর পরিপূরক। চক্র কি জানেন তো? আপনার দেহের ভিতর বিভিন্ন কেন্দ্র রয়েছে, সাতটি মৌলিক কেন্দ্র রয়েছে যা জীবনের সাতটি মাত্রা বা জীবনের অভিজ্ঞতার সাত মাত্রাকে উপস্থাপনা করে। এই সাতটি চক্র হ'ল মূলাধার, যা পেরিনিয়ামে থাকে, মলদ্বার ও যৌনাঙ্গের মাঝখানে; যৌনাঙ্গের ঠিক উপরেই থাকে স্বাধিষ্ঠান, মণিপুরকা নাভির ঠিক নীচে; অনাহত হ'ল বুকের পাঁজরগুলি যেখানে মিলেছে তার ঠিক নীচের নরম জায়গাটা; বিশুদ্ধি থাকে গলার গর্তে; আজ্ঞা চক্র ভ্রু-দুটির মাঝখানে এবং সহস্রার মাথার ওপরে।

এই সাতটি মাত্রা কি নির্দেশ করে? মূলাধারে যদি আপনার শক্তি প্রাধান্য পায়, তবে খাদ্য এবং ঘুম আপনার জীবনের সবচেয়ে প্রভাবশালী উপাদান হবে। যদি এটি স্বাধিষ্ঠানে প্রাধান্য পায় তবে আপনার জীবনে ভোগ সবচেয়ে প্রভাবশালী হবে। আপনি ভোগের মাধ্যমে জাগতিক বাস্তবতাকে উপভোগ করতে থাকবেন। মণিপুরকায় যদি শক্তির প্রাধান্য থাকে তবে আপনি একজন কর্মী মানুষ হবেন - আপনি বিশ্বে অনেক কিছু করবেন। অনাহতে যদি এটি প্রাধান্য পায় তবে আপনি খুবই সৃজনশীল এক ব্যক্তি। আপনার শক্তি যদি বিশুদ্ধির উপর প্রাধান্য পায় তবে আপনি একজন খুবই ক্ষমতাশালী ব্যক্তি হয়ে উঠবেন। যদি আপনার শক্তি আজ্ঞা চক্রে প্রাধান্য পায় তবে আপনি শান্তিপূর্ণ হয়ে ওঠবেন । আপনি যদি আজ্ঞাতে পৌঁছে যান, তবে আপনি নিজের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে উপলব্ধি করতে পারবেন। আপনি অভিজ্ঞতা দিয়ে উপলব্ধি করতে না পারলেও, আপনার মধ্যে একটি বিশেষ শান্তি ও স্থিতিশীলতা তৈরি হয় - তা সে আপনার বাইরের জগতে যাই ঘটুক না কেন। যদি আপনার শক্তি সহস্রারে চলে যায়, আপনি এক অজ্ঞাত উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়বেন। আপনার অন্তরে যে অভিজ্ঞতাই ঘটুক না কেন এটি কেবলমাত্র আপনার জীবনীশক্তির একটি বহিঃপ্রকাশ। রাগ, দুঃখ, শান্তি, আনন্দ, পরমানন্দ… সব একই শক্তির ভিন্ন ভিন্ন স্তরের প্রকাশ। এই সাতটি মাত্রার মাধ্যমেই মানুষের ভাব প্রকাশ পায়।

আমার পূর্বজন্মে 'সদগুরু শ্রীব্রহ্মা' হিসেবে আমি 'চক্রেশ্বর' নামে পরিচিত ছিলাম। আপনারা যারা তামিলনাড়ু রাজ্যের তারা হয়তো এর কথা শুনে থাকবেন। এর অর্থ এমন একজন ব্যক্তি, যিনি সবকটি- অর্থাৎ একশো চৌদ্দটি চক্রই সম্পূর্ণরূপে আয়ত্ত করেছেন। এই দক্ষতার কারণেই এখন আমরা মানুষকে বিস্ফোরণের মতো সর্বত্র উড়িয়ে নিয়ে যেতে পারি। তিনি চক্রেশ্বর নামে পরিচিত ছিলেন, তার কারণ তিনি চক্রগুলির উপরে তাঁর সম্পূর্ণ দক্ষতার কিছু গুণাবলী প্রদর্শন করেছিলেন। তিনি একটি অসাধারণ দুর্লভ দৃষ্টান্ত রেখে ছিলেন - যখন তিনি সাতটি চক্রের মধ্য দিয়ে নিজের শরীর ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। সাধারণত, যোগীরা যখন তাদের দেহত্যাগ করেন, তখন তারা একটি নির্দিষ্ট চক্রের মধ্য দিয়ে চলে যান - যার উপর তাদের বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। অন্যথায় তাদের প্রবণতাগুলির উপর নির্ভর করে সেই অনুযায়ী তারা চলে যান, কিন্তু সদগুরু সাতটি চক্রের মধ্য দিয়েই তাঁর দেহত্যাগ করেছিলেন। ধ্যানলিঙ্গের প্রাণ-প্রতিষ্ঠার প্রস্তুতি হিসাবে তিনি সাতটি চক্রের মধ্য দিয়ে তাঁর দেহত্যাগ করেছিলেন। কাজেই এটি একবারেই সত্য ঘটনা।

সুতরাং ধ্যানলিঙ্গের স্বতন্ত্রতা হ'ল এটির মধ্যে থাকা সাতটি চক্র - যা শক্তির সর্বোচ্চ শিখরে সক্রিয় আছে। এটি সম্ভাব্য শ্রেষ্ঠ প্রকাশিত আকার, যার অর্থ হল যে আপনি যদি শক্তি গ্রহণ করে এটিকে খুব উচ্চ মাত্রার তীব্রতার দিকে ঠেলে দেন তবে এটি কেবল একটি নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত আকার ধারণ করতে পারে। এর বাইরে এটি কোনও আকার ধরে রাখতে পারে না; এটি নিরাকার হয়ে যায়। এটি যদি নিরাকার হয়ে যায়, লোকে তখন আর এটিকে অনুভব করতে সমর্থ হয় না। শক্তিকে তার সর্বোচ্চ স্তরে নিয়ে গিয়ে ধ্যানলিঙ্গের প্রাণপ্রতিষ্ঠা করা হয়েছে- যার পরে আর কোনও আকার থাকে না এবং সেই পর্যায়ে এটিকে আকার দেওয়া হয়েছে।

সাড়ে তিন বছর ধরে এক অত্যন্ত তীব্র প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এর প্রাণপ্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। প্রাণপ্রতিষ্ঠার সময় মানুষজন যে ধরণের পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করেছিলেন তা অত্যন্ত অবিশ্বাস্য। অনেক যোগী ও সিদ্ধ পুরুষ ধ্যানলিঙ্গ তৈরির চেষ্টা করেছেন, কিন্তু বিভিন্ন কারণে প্রয়োজনীয় সমস্ত উপাদান কখনও একত্রিত হতে পারেনি। বর্তমানে বিহার রাজ্যে তিনটি সম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠিত লিঙ্গ ছিল, কিন্ত তাদের ভৌতরূপ এখন আর নেই। এগুলি পুরোপুরি মাটিতে মিশে গেছে আর তার উপরে সব ঘরবাড়িও তৈরি করা হয়ে গেছে, তবে শক্তির রূপগুলি এখনও রয়েছে। আমরা জানি সেগুলো কোথায় আছে; আমি তাদের চিহ্নিত করেছি। বাকি সব লিঙ্গগুলি কখনও সম্পূর্ণ করা হয়ে ওঠেনি । আমি কয়েক ডজন জায়গা পেয়েছি যেখানে তারা ধ্যানলিঙ্গ তৈরীর চেষ্টা করেছিলেন, তবে কোনও কারণে সেগুলি কখনই সম্পূর্ণ হয়নি।


1 siddhas: those who have attained perfection or mastery over a certain mystical aspect of life.