কিভাবে আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়া তার গুনমান নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে?
ভারতে আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়ার গুণমান নিয়ন্ত্রণ কিভাবে বজায় রাখা হয়েছিল এবং বহিরাক্রমনের সময় কিভাবে তা হারিয়ে যায় - সদগুরু সে সম্পর্কে বলছেন।
প্র: সদগুরু, আপনি বলেছেন যে আগেকার দিনে আধ্যাত্মিকতার গুনমান নিয়ন্ত্রণ করা হতো কিন্তু হাজার বছরের বিদেশী আধিপত্য সেই নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্যকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আপনি কি অনুগ্রহ করে এই সম্পর্কে বিস্তারিত বলবেন?
সদগুরু: নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য আপনা থেকেই ছিল। কোন আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়া যথাযথ ভাবে আছে কিনা, সেটি সঠিক দিশায় চালিত হচ্ছে কিনা - সেসব যাচাই করার জন্য কোন আলাদা কর্তৃপক্ষ ছিল না। এটি স্ব-নিয়ন্ত্রিত ছিল। আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়া কোনও বিচ্ছিন্ন ব্যাপার ছিল না বলে খুব সহজেই এটি স্ব- নিয়ন্ত্রিত হতে পেরেছিল। কেবলমাত্র কিছু বিক্ষিপ্ত জনতা আধ্যাত্মিকতার পথ অনুসরণ করত না। আধ্যাত্মিকতা ছিল মূলধারার বিষয়। বিশ্বের অন্য কোথাও এমনটা কখনও ঘটেনি। ধর্ম হয়েছে, কিন্তু সমাজের একটি বড় অংশের জন্য একটি সক্রিয় আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়া - আর কোথাও কখনও ঘটেনি।
একই শহরে, অনেক গুরু থাকতেন, প্রত্যেকে ভিন্ন ভিন্ন কথা বললেও তাদের কারও সাথেই কারোর কোন বিরোধ ছিল না। ফলে ব্যাপারগুলো স্বাভাবিকভাবেই একটি খুবই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পরিচালিত হত, কারণ এটি অনেক বিস্তৃত ছিল। এবং লোকজনের কাছে একদিন এক জায়গায়, পরের দিন অন্য জায়গায় এবং তার পরের দিন আবার অন্য একটি জায়গায় বসে থাকার বিকল্প ছিল। গুরুরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতেন না। তারা কাউকে অন্য কোথাও যেতে বাধাও দিতেন না। তারা বলতেন, “আপনি যদি এই জায়গাটিকে সেরা জায়গা বলে না মনে করেন, তবে এখানে থাকবেন না। আপনি যেখানে যেতে চান, যান।" আমি আজকেও সেকথা বলছি। আজকের দিনে একমাত্র সমস্যা হ'ল আপনার খোঁজার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নাও থাকতে পারে। কিন্তু অতীতে, যখন এই ধরণের পরিবেশ ছিল, সেখানে স্বাভাবিকভাবেই নিয়ন্ত্রণ এবং ভারসাম্য বজায় ছিল; কারণ সমাজের অনেক ব্যক্তিই অভিজ্ঞতার গভীর অবস্থানে ছিলেন। যদি কেউ ভুল কিছু বলতেন, সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেকে বুঝতে পারতেন যে এটা ঠিক নয়।
একটি যোগ্য শ্রোতামহল
যেমন, ধরুন আপনি ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত শেখেন। আপনি আটলান্টায় গিয়ে গান গাইতে পারেন, তারা হাততালি দেবে। আপনি দিল্লি বা মুম্বাইতে গান করতে পারেন, তারা হাততালি দেবে। কিন্ত আপনি যখন চেন্নাইতে গিয়ে গান গাইবেন, আপনি যদি সামান্য একটা ভুল করেন, তারা উঠে বেরিয়ে আসবে; কারণ শ্রোতারা এতটাই যোগ্যতাসম্পন্ন এবং সঙ্গীতমনস্ক।
চেন্নাই হল একমাত্র জায়গা যেখানে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে পুরো ষাট দিন ধরে প্রতিদিন পাঁচটি সঙ্গীতানুষ্ঠান চলতে থাকে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায়। লোকজন কনসার্ট থেকে কনসার্টে, কনসার্ট থেকে কনসার্টে যায়। বিশ্বের আর কোথাও এই ধরনের সংস্কৃতি নেই। এটি একটি বিশাল অনুষ্ঠান হতে পারে যা সারা বিশ্বের দর্শকদের আকর্ষণ করবে, তবে তারা এতটাই শুদ্ধতাবাদী যে এর কোন প্রচার বা বিজ্ঞাপন তারা করবে না । তারা বলেন, “আপনার যদি সংবেদনশীল নাক থাকে তবে আপনি সুবাসের টানেই আসবেন। আপনার যদি এই অনুভূতি না থাকে, আমরা চাই না যে আপনি আসুন!"
একইভাবে আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রেও উপযুক্ত একটি শ্রোতামহল ছিল। কিন্তু যখন বহিরাক্রমণগুলো ঘটেছিল, সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তিদেরই প্রথমে হত্যা করা হয়েছিল কারণ হানাদারেরা কেবল জমি, সোনা এবং নারী চায় না। তারা ভালো করেই বোঝে যে যদি আপনার উপর তাদের ধর্ম চাপিয়ে না দেয় তবে আপনাকে পুরোপুরি অধীনে আনা যাবে না। কাজেই তারা প্রথমেই যে কাজটি করেছিল তা হল আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়ার বিনাশ।
এটি মূলত উত্তর ভারতের সমভূমি অঞ্চলে ঘটেছিল, যেখানে অনেক গুরুকেই বেঁচে থাকার জন্য তিব্বতের মালভূমিতে চলে যেতে হয়েছিল। এটি একটি বিশাল স্থানান্তরণ এবং সেই জন্য আজ অনেকে - যারা জ্যোতিষী বা পুরোহিত হওয়ার যোগ্য এবং কিছু ভন্ড মানুষও নিজেদের গুরু বলে দাবী করছেন। যেহেতু যথেষ্ট সংখ্যক আত্মজ্ঞানী মানুষ নেই, প্রচুর উদ্যোক্তারা উঠে এসেছে। তাদের মধ্যে কিছুজনের ভাল উদ্দেশ্য রয়েছে, কিন্ত অজ্ঞতাচালিত সৎ উদ্দেশ্য সর্বদাই এক বিপজ্জনক সম্ভাবনা- খারাপের থেকেও বিপজ্জনক, যদি আপনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন- কারণ সৎ উদ্দেশ্য অজ্ঞতাকে বৈধতা দেয়। অনেক অজ্ঞ মানুষই ভালো। আপনি চাইলে তাদের বিবাহ করতে পারেন তবে আপনার গুরু হিসাবে তাদের বেছে নেবেন না কারণ তারা আপনাকে সোজা নর্দমায় নামিয়ে আনবে।
সত্যকে মূলধারায় আনা
যদি আমরা গুনমান নিয়ন্ত্রণকে ফিরিয়ে আনতে চাই, সবার আগে আমাদের আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়াকে জীবনযাত্রার মূলস্রোতে নিয়ে আসতে হবে, যেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ এর অনুশীলন করছেন - যারা অভিজ্ঞতার মাধ্যমে জানেন এবং কোনটি আসল এবং কোনটি আসল নয়, কোনটি তাদের মুক্তির দিকে নিয়ে যায় এবং কোনটা তাদেরকে বন্ধনে জড়িয়ে দেবে - তার মধ্যে তফাৎ করতে পারেন। যদি একটি যোগ্য শ্রোতামহল থাকে তবে স্বাভাবিকভাবেই এর পরিশোধন ঘটবে।
সত্যকে মূলস্রোত হতে হবে। এখন মিথ্যাই মূলধারার হয়ে উঠেছে, সত্য প্রান্তিক। প্রথমের দিকে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত হয়েই লোকজন মিথ্যা বলেন। দিনে দিনে তারা আরও আত্মবিশ্বাসের সাথে মিথ্যা বলতে শুরু করেন। কিছু সময় পর, সবাই জানে যে প্রত্যেকেই মিথ্যা বলছে কিন্তু যেহেতু এটি মূলধারার, তাই সব ঠিক আছে।
যদি সত্য মূলধারার হয়, কেউ যদি একটি সামান্য মিথ্যাও বলে - প্রত্যেকে সেটি দেখতে পাবে এবং নিজে থেকেই এটা সরে যাবে। আমি আশা করছি সকলে, বিশেষত তরুণেরা দায়িত্ব নেবে এবং সত্যকে মূলধারায় পরিণত করবে।
Editor’s Note: Offering the rare possibility to go beyond all limitations, Sadhguru takes the seeker on a mystical journey towards ultimate liberation. In the ebook, “A Guru Always Takes You For a Ride”, Sadhguru delivers rare insights into the Guru-shishya relationship. Name your price and download.