নন্দীকে ধ্যাননিষ্ঠ ষাঁড় বলা হয় কেন ?
সদগুরু এবং শেখর কাপূর শিবের বাহন নন্দীর তাৎপর্য এবং প্রতীকতা নিয়ে আলোচনা করেছেন।
শেখর কাপূর: আমি যেটুকু বুঝছি , নন্দী শিব এর বাহন। সে কি অপেক্ষা করে রয়েছে যে শিব বেরিয়ে এসে তাকে কিছু একটা বলবে ?আমাকে নন্দীর সম্পর্কে আরও কিছু বলুন।
সদগুরু: নন্দী এখানে শিবের বাইরে বেরিয়ে আসার অপেক্ষা করছেন না। তিনি শুধুমাত্রই অপেক্ষ্যা করছেন। নন্দী চিরন্তন অপেক্ষার প্রতীক, কারণ ভারতীয় সংস্কৃতিতে অপেক্ষাকে সর্বশ্রেষ্ঠ গুণ হিসাবে দেখা হয়। যিনি কেবল বসে অপেক্ষারত হতে জানেন, তিনি স্বাভাবিকভাবেই ধ্যানমগ্ন। তিনি প্রত্যাশা করছেন না যে শিব কোনোদিন বেরিয়ে আসবেন। তিনি সর্বদাই অপেক্ষারত। এই গুনটিই গ্রহণযোগ্যতার মূল।
নন্দী শিবের নিকটতম সহকারী কারণ তিনি গ্রহণযোগ্যতার মূলমন্ত্র। কোনো মন্দিরে প্রবেশ করতে হলে নন্দীর মতন হয়েই প্রবেশ করা উচিত - শুধুমাত্র বসে থাকবে। আপনি স্বর্গে যাওয়ার প্রচেষ্টা করছেন না, অথবা আপনি কিছু পাওয়ার চেষ্টা করছেন না। আপনি ভেতরে যাবেন এবং শুধুমাত্র বসবেন। সুতরাং, তিনি এখানে বসে আপনাকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন,”আপনি ভেতরে গিয়ে আপনার আবোল-তাবোল কার্যকলাপগুলো করবেন না, আপনি ভেতরে গিয়ে শুধু আমার মতো করে বসবেন।”
শেখর কাপূর: তাহলে, আমি এটাই বুঝলাম, প্রতীক্ষা আর প্রত্যাশা – এই দুটো ব্যাপার আলাদা?
সদগুরু: তিনি আশা বা প্রত্যাশা কোনোটা নিয়েই বসে নেই। তিনি কেবলই বসে আছেন। এটাই ধ্যান – ব্যাস্, বসে থাকা। তিনি আপনাদের এটাই বলছেন। ভেতরে গিয়ে কেবল বসুন। সজাগ, ঝিমন্ত নয়।
শেখর কাপূর: তাহলে, আমরা ধ্যান বলতে যেটা বুঝি, নন্দি সেই ধ্যানে বসে রয়েছে?
সদগুরু: মানুষ সবসময়ই ধ্যানকে এক প্রকার কার্য ভেবে এসেছেন। এটা ভুল। এটা একটা গুণ। এটাই বোঝার মৌলিক ভুল। প্রার্থনা মানে আপনি ভগবানের সাথে কথা বলার চেষ্টা করছেন, আপনার সংকল্প, প্রত্যাশা সবকিছু ওনাকে বলার চেষ্টা করছেন। ধ্যান মানে আপনি কান পেতে অস্তিত্বের ধ্বনি শুনতে তৈরি। যেটা কিনা সৃষ্টির চরম প্রকৃতি। আপনার আর কোনো বক্তব্য নেই, আপনি তৈরি শুধুই শুনতে। নন্দির গুণ এটাই – তিনি কেবলই বসে রয়েছেন, সজাগ। সজাগ – এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ঝিমন্ত বা অসাড় নন। তিনি খুবই সক্রিয়, খুব সজাগ ও প্রানবন্ত, কিন্তু কোনও আশা-প্রত্যাশা নেই। এটাই ধ্যান। ধৈর্য ধরে বসে রয়েছেন, কিন্তু নির্দিষ্ট কোনো কিছুর জন্য নয়।
আপনি যদি নিজের কার্যকলাপ না করে শুধুমাত্র প্রতিক্ষারত হতে পারেন, তাহলে অস্তিত্ব নিজের কাজ করবে আপনার ওপর। ধ্যান মানে হল ব্যাক্তিগত ভাবে কিছু না করা। ব্যাস, স্থিত হওয়া। যখন আপনি স্তির হয়ে উঠবেন, আপনি তখন অস্তিত্বের বৃহত্তর মাত্রাকে অনুভব করতে পারবেন, যা কিনা সবসময়ই ক্রিয়াশীল। আপনি সেই মাত্রার সম্বন্ধে সচেতন হয়ে উঠবেন। আপনি এখনো সেই অস্তিত্বেরই অংশ। কিন্তু সচেতন হওয়া, যে “আমি এই অস্তিত্বেরই অংশ”, এটাই ধ্যান। নন্দি এটারই প্রতীক। তিনি সবাইকে মনে করাচ্ছেন, “আমার মতন করে বসুন”।
ধ্যানলিঙ্গের সামনে নন্দী
শেখর কাপূর: ধ্যানলিঙ্গের সামনে যে নন্দীর মূর্তিটি রয়েছে, সেটি কীসের তৈরী? আমি দেখতে পাচ্ছি এটা ধাতুর তৈরী, স্টিল কি?
সদগুরু: ইনি সম্ভবত একমাত্র নন্দী, যাকে এই বিশেষভাবে বানানো হয়েছে। ছোট ধাতুর টুকরো, যার প্রত্যেকটি আকারে ছয় থেকে নয় ইঞ্চির বড় নয়, এর বাহ্যিক আকার প্রদান করতে ব্যবহার করা হয়েছে। এর ভেতরের উপকরণের মধ্যে রয়েছে, তিলের বীজ, হলুদ, বিভূতি-পবিত্র ভস্ম, কিছু প্রকারের তেল, কিছুটা বালি আর কিছু অন্য ধরনের মাটি। প্রায় কুড়ি টনের মত পদার্থ একে ভর্তি করতে ব্যবহার করা হয়েছে, তারপর একে ভালোভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই সম্পূর্ণ মিশ্রণ একটি নির্দিষ্ঠভাবে বানানো হয়েছে। এই কারণে, এই ষাঁড়টির থেকে সর্বদা এক শক্তিবলয় বিচ্ছুরিত হতে থাকে।