যোগ- পূর্ণরূপে প্রস্ফুটিত হওয়ার প্রযুক্তি
যোগের পথে ভগবানকে জীবনের সৃষ্টিকর্তা হিসেবে দেখা হয়না, দেখা হয় পূর্ণ–বিকশিত, পরিপূর্ণ এক জীবন হিসেবে। এই বিকাশ কিভাবে আনা যায়? সদগুরু বলছেন, গোটা যোগ বিজ্ঞানটাই ভালো বাগান পরিচর্চা করা ছাড়া আর কিছুই নয়।
যোগের পথে ভগবানকে জীবনের সৃষ্টিকর্তা হিসেবে দেখা হয়না, দেখা হয় পূর্ণ–বিকশিত, পরিপূর্ণ এক জীবন হিসেবে। এই বিকাশ কিভাবে আনা যায়? সদগুরু বলছেন, গোটা যোগ বিজ্ঞানটাই ভালো বাগান পরিচর্চা করা ছাড়া আর কিছুই নয়।
সদগুরু: যোগে পরম বিকাশের প্রতীকি রূপ হল একটি ফুল, কারণ যোগ চর্চার পথে ঈশ্বরকে দেখা হয়েছে এক চূড়ান্ত বিকাশ হিসেবে, শ্রষ্টা হিসেবে নয়, বরং জীবনের উৎস বা বীজ হিসেবে দেখা হয়েছে। আপনি কোথা থেকে এসেছেন যোগশাস্ত্রে তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আপনি কোথায় যাচ্ছেন একমাত্র তা নিয়েই যোগ আগ্রহী। কিন্তু এখন যা আছে তাকে ছাড়া তো যা হতে চলেছে তার দিকে এগোতে পারিনা আমরা। তাই এই বর্তমানের মধ্যেই নিজেদের জন্য জায়গা করে নেওয়ার চেষ্টা করছি আমরা। তা না হলে কি ছিল আর কি আছে তা নিয়ে আমাদের কোন মাথাব্যাথা নেই। আমাদের প্রধান আগ্রহ হল কী হতে চলেছে তা নিয়ে।
বীজের পরিচর্যা
সকলে যাকে পিতা বলে সম্মোধন করে, আমরা তাকে একজন পিতা হিসেবে দেখি না। তার মানে আমরা আমাদের জন্মপরিচয় অস্বীকার করছি। জীবনকে আমরা এভাবেই দেখি। আমরা ঈশ্বরকে সেই রূপে দেখি যার দ্বারা আমরা সম্ভাবনাময় হয়ে উঠতে পারি। যদি সে সম্ভাবনাকে আপনি নিজের মধ্যে লালন করেন তাহলে আপনার মধ্যেই প্রসব করবে সেই সম্ভাবনা। যদি তা না করেন চিরকাল শুধু সেই সম্ভাবনার বীজ নিয়েই থেকে যেতে হবে আপনাকে।
আমরা বীজের প্রতি আগ্রহী হই শুধুমাত্র ফুলের সুগন্ধ, সৌন্দর্য এবং ফলের মিষ্টতা ও পুষ্টির কারণে। যদি সেসব না থাকত, বীজের প্রতি আমাদের কোন আগ্রহই থাকত না। এই সম্পূর্ণ যোগ শাস্ত্র, যাকে আমরা আধ্যাত্মিকতা বলছি সেই প্রক্রিয়াটি আসলে খুব দক্ষতার সাথে একটি বাগান করার মত - বীজের যত্ন নেওয়া, যাতে তা একদিন ফুল হয়ে ফুটতে পারে।
সেই কারণেই যোগীরা আপনাদের ওলোটপালট করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আরামদায়ক দেহ-ভঙ্গির তুলনায় অস্বচ্ছন্দ ভঙ্গিতে আপনি অনেক বেশি স্পষ্ট ভাবে সত্যকে উপলব্ধি করতে পারবেন। যোগ হল, ভিতর থেকে সর্বস্তরে রূপান্তরিত হওয়ার একটি প্রযুক্তি বিশেষ, কিন্তু একটা জিনিস মনে রাখতে হবে যে বিশেষ কোন একটি যোগ, যার মধ্যে রূপান্তর আনার সমস্ত শক্তি নিহীত রয়েছে, তার অনুশীলন করে যাওয়াই কিন্তু সব নয়। কী ভাবে আপনি তা করছেন সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
যদি কোন পদ্ধতিকে প্রকৃত অর্থেই কার্যকরী হয়ে উঠতে হয়, তাহলে প্রথমতঃ এবং প্রধানতঃ, আপনাকে মনস্থির করতে হবে যে আপনি সেটার সদব্যবহার করবেন। তবেই সেটা একটি সঠিক পদ্ধতি হিসেবে কাজ করতে পারবে। চিরকালই কোন আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়া শুরু করার সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থা হল একটি নির্দিষ্ট সময় অবধি তার প্রতি নিঃশর্ত আনুগাত্য রাখা - ছ’মাস পর্যন্ত অনুশীলন করে যান শুধু। কোন ফললাভের প্রয়োজন নেই আপনার। শুধু অনুশীলন করে যান। তার পর মূল্যায়ন করুন আপনার জীবন, কতটা শান্তিপূর্ণ, আনন্দময় আর সুস্থির আপনি। দেখুন এই অনুশীলন কি ভাবে কাজ করছে আপনার উপর?
আলোকিত অন্তর
এল গ্রেসো নামে এক স্প্যানিশ চিত্রকর ছিলেন। বসন্তের এক সুন্দর সকালে তিনি সমস্ত দরজা জানালা বন্ধ করে বসে ছিলেন। তাঁর বন্ধু ঘরে এসে বললেন, “তুমি সব জানালা বন্ধ করে বসে আছ কেন? চল বাইরে যাই। বাইরে এসে দেখ বড় চমৎকার দিনটা, অন্তত জানালাগুলো তো খোল।” তিনি বললেন, “ আমি চাইনা জানালা খুলতে, কারন ভিতরে এমন আলো ঝলমল করছে, আমি চাইনা বাইরের আলো এসে তার বিঘ্ন ঘটাক।”
সুতরাং, বীজকে লালন করে ফুল ফোটাতে হলে আলো জ্বালানোর দরকার আছে কি? না, আলো তো জ্বলেই আছে। শুধু, তুমি একে এত আবর্জনা দিয়ে ঢেকে রেখেছ যে সে আলো বাইরে বেরবার পথই খুঁজে পাচ্ছে না। একবার যদি অন্তরের সেই আলো উদ্ভাসিত হতে থাকে, বাকিটা আপন নিয়মেই ঘটবে। তবে সেটা আমরা খুব সহজেই করতে পারি, আর খুব দ্রুত তেমনটা করার প্রয়োজনীয় আভ্যন্তরীণ প্রযুক্তি আমাদের আছে। অর্থাৎ, স্বাভাবিক নিয়মের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন নেই আমাদের, কারণ তাতে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে। জেনেটিক এঞ্জিনিয়ারিং-এর মত আমাদেরও আছে ইনার এঞ্জিনিয়ারিং! যেখানে একটা নারকেল গাছে নারকেল হতে সময় লাগে আট বছর, সেখানে লাগছে মাত্র দেড় বছর - জেনেটিক এঞ্জিনিয়ারিং! ইনার এঞ্জিনিয়ারিংও ঠিক তেমনই, যে কাজ করতে সময় লাগার কথা দশ জন্ম, তা এক জীবনেই করে দেখিয়ে দেয়।