দৈব পথে- স্বামী নিশ্চলা
এই সিরিজে, প্রত্যেক মাসে আমাদের ইশা ব্রহ্মচারী বা সন্ন্যাসীদের মধ্যে একজন করে, তাঁদের নিজস্ব পটভূমি, পর্যবেক্ষণ এবং এই পবিত্র 'দৈবের পথে' হাঁটার যে অভিজ্ঞতা তাঁদের হয়েছে, তা আমাদের বলবেন।
স্মরণে আসা
স্বামী নিশ্চলা: আমন্ত্রণ পত্রের শেষের সম্ভাষণটি আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করল - " আসুন, আমরা এটা সম্ভব করে তুলি" এটা 'ঈশা- উৎসবে' উপস্থিত থাকার নিমন্ত্রণ, যেটা আমাকে পাঠিয়েছেন কোয়েম্বাটুরে ছ' বছর আগে যে ফ্ল্যাটে আমি থাকতাম তার মালিক। " এটা কি সেই দ্যুতিমান ঋষি-তুল্য যোগা শিক্ষকের সাথে কোনও যোগ আছে, যার কাছে আমি যোগা প্রোগ্রাম করেছিলাম?" , আমি ভাবলাম। কারণ এই কথাগুলো আমাকে সেই ক্লাসে ঝুলিয়ে রাখা কাগজের বোর্ডের কথা মনে করিয়ে দিল, যাতে লেখা ছিল, " প্রেম, আলো এবং হাসিতে ভরা এক বিশ্ব, এর সময় এসেছে। আসুন, আমরা এটা সম্ভব করে তুলি।" যেহেতু আমার এই ' প্রেম, আলো এবং হাসি' - এর সমন্বয়টি খুব ভালো লেগেছিল, এটা আমার মনে থেকে গেছিল। এটা আবার দেখতে পেয়ে আমার ১৯৯০- সালে কোয়েম্বাটুরে করা সেই অসাধারণ ক্লাসটির স্মৃতি মনে ঘুরতে লাগলো।
এটা আমার কাছে সম্পূর্ণ নতুন একটা অভিজ্ঞতা ছিল - এরকম মৃদু-মধুর যন্ত্র-সংগীত আমি আগে কখনও শুনিনি, মাইশোরের যোগা শিক্ষক 'সদগুরু' - যাকে দেখে আমার পান্ড্য বংশের সময়ের ঋষি ' মানিক্কাভাসাগর'- এর কথা মনে পড়ে যায় এবং সেইসব স্বেচ্ছাসেবীরা, যারা দীক্ষার দিন সদগুরুর সাথে যোগ দিয়েছিলেন ( ১৩- দিনের ক্লাসের সেই দিন, যেদিন অংশগ্রহণকারীদের একটি আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়ায় দীক্ষিত করা হয় )। আমার মনে আছে দীক্ষার দিন খেলার সময় একবার আমি সদগুরুর একেবারে মুখোমুখি এসে পড়ি, একেবারে কাছাকাছি । তাঁর এমন একটা দীপ্তি আছে যা আমি আগে কখনও দেখিনি, এবং আবারও আমার মনে হয়েছিল যে তিনি কোনও সাধারণ মানুষ নন - এটা সেই একই অনুভূতি যেটা আমার সদগুরু যখন প্রথমবার ক্লাসের জন্য হলের মধ্যে ঢুকেছিলেন তখনও হয়েছিল।
আরেকটা জিনিস যেটা আমাকে নাড়া দিয়েছিল সেটা হ'ল - দীক্ষার দিন স্বেচ্ছাসেবী শ্রীনিবাসন এর বর্ণনা। দুচোখে অবিরত ধারা নিয়ে তিনি বললেন, " সদগুরু আমাদের বলেছিলেন তিরিশ জন ঈশ্বরের সেবা করতে।" তিনি আমাদের এই তিরিশ জনের কথা বলছিলেন, ক্লাসের ৩০ জন অংশগ্রহণকারীর কথা। সেই মূহূর্তে আমার ভেতরে মৌলিক অস্তিত্ব কেঁপে উঠেছিল। আমার জানা ছিল না যে ভৃত্যের মতো সেবা করেও নিজের এত গরিমা নিয়ে বাঁচা যায়। তখন আমার ভলেন্টিয়ারিং সম্পর্কে কোনও ধারনাই ছিল না। 'সদগুরু শ্রী ব্রহ্মা'র ফটোর যে তীব্রতা, যেটা আমি সদগুরুর সাথে শিষ্যদের মিলন- অনুষ্ঠানে দেখেছিলাম এবং তারপর বাকি সন্ধ্যেটা আমি কিভাবে একটা কথাও বলতে পারি নি - এসব আমার মনে জ্বলজ্বল করে উঠলো যখন আমি আমন্ত্রন পত্রটার দিকে দেখলাম।
এসব অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও প্রোগ্রামের অল্প কিছুদিন পরেই আমার মাদুরাই - তে বদলি হয়ে গেল এবং তারপর চেন্নাইতে। আমি নিজের জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলাম এবং কোন এক সময়ে আমার সাধনাগুলিও ছাড়া হয়ে গেল।
• আমি গ্রামের ছেলে এবং পরিবারের প্রথম গ্র্যাজুয়েট এবং সরকারি চাকুরে। আমার বাবার কিছু জমি ছিল, কিন্তু আমাদের খাওয়া এবং পরার জন্য যতখানি প্রয়োজন তার বেশি উপার্জন করার বাবার কোনও ইচ্ছা ছিল না। তিনি বেশ পরিপূর্ণ এবং আনন্দময় থাকতেন এবং নিজের পূজা ঘরে শিবলিঙ্গ এবং গণপতি কে নিত্য পূজা করতেন । সেই সময় আমার দুই ভাইয়ের বিয়ে দেওয়া এবং তাদের ঠিকমতো প্রতিষ্ঠা করে দেওয়া আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল । কাজেই বিগত ওই ছ’টি বছর আমার পরিবারের আর্থিক অবস্থা স্থিতিশীল করার কাজে চলে গেল।
কিন্তু এবার, যখন আমি 'ঈশা -উৎসবের' আমন্ত্রণ পত্রটি দেখলাম, আমার মধ্যে সবকিছু আবার জীবন্ত হয়ে উঠলো- আমি এই পুনর্সংযোগের জন্য আকুল হয়ে উঠলাম। যদিও আমি নিশ্চিত ছিলাম না যে 'ঈশা -উৎসব' এবং সদগুরুর ক্লাসের মধ্যে সত্যিই কোনও সংযোগ আছে কিনা, আমি সুযোগটা নিলাম এবং ১৯৯৬ সালের ২৩-শে সেপ্টেম্বর সেই প্রথমবার আশ্রমে গিয়ে হাজির হলাম।
সেই আত্মজ্ঞানীর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ
পরিবেশটা ভীষণ প্রাণবন্ত ছিল, প্রত্যেকেই খুশিতে ডগমগ এবং উৎসাহে ভরপুর। কেবল উপস্থিত থেকেই খুব উপভোগ করলাম। কিছুক্ষণ পর আমি সদগুরু কে খুঁজতে শুরু করলাম এবং তাকে 'শিবালয়' গাছের কাছে দাঁড়িয়ে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলতে দেখলাম। কিছুক্ষণ পর তাঁকে আমার দিকে আসতে দেখলাম। এই মহান ঋষিকে কিভাবে অভিবাদন করতে হয় আমার জানা ছিল না, তাই তাঁকে শ্রদ্ধা নিবেদন করার জন্য আমি সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করবো ঠিক করলাম। তাঁর চরণ স্পর্শ করার জন্য যখন আমি ঝুঁকছিলাম আমার দৃষ্টি তাঁর চোখের উপর পড়ল, তখন তিনি আমার দিকে তাকিয়েও ছিলেন না। তখন যা ঘটলো, তা বর্ণনার অতীত। শব্দের অভাবে আমি এটুকুই বলতে পারি ওই দুটি চোখ থেকে যেন মনে হল 'করুণা এবং অনুকম্পা ' উপচে পড়ছে - সমগ্র সৃষ্টি যেন এর মধ্যেই সমাহিত।
হঠাৎ করে আমার মধ্যে যেন কিছু একটা ভেঙ্গে পড়ল বা ছিঁড়ে গেল এবং আমার ভেতরে এক সীমাহীন আনন্দ অনুভব করলাম। চারপাশের কথা ভুলে গিয়ে আমি কাঁদতে লাগলাম। হয়তো এক ঘন্টা মত আমি কেঁদেছিলাম। আমার নিজকে এমন মনে হচ্ছিল যেন কেউ তার পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে হারিয়ে গিয়েছিল আর এখন সে ফেরার রাস্তা খুঁজে পেয়েছে। আমি বাড়ি ফিরে এলাম।
সীমার বাইরে এক ঝলক
চলে আসার আগে আমি খোঁজ পেলাম যে চেন্নাইতেও ক্লাস হয়। সেই সময় আমার বাড়ির লোক আমার জন্য মেয়ে দেখতে শুরু করেছিল। বিয়ে করার জন্য আমার বিশেষ কোনও ইচ্ছা ছিল না কিন্তু একটা বিশেষ বয়সে এটা স্বাভাবিক বলে মনে করা হয়। কিন্তু আশ্রমের ওই ঘটনার পর স্বভাবতই আমার বিয়ে করার ইচ্ছা অনায়াসেই চলে গেল। ১৯৯৭ সালের এপ্রিল মাসে আমি আবার আশ্রমে ফিরে এলাম 'ভাব স্পন্দন' প্রোগ্রাম (বি এস পি) করার জন্য। কিন্তু এর পূর্বশর্ত 'ইশা যোগা'-ক্লাসটি যে আমি ১৯৯০ সালে করেছিলাম তা প্রমাণ করার জন্য কোনও নথি আমার কাছে ছিল না । এটা সম্ভবত একদম প্রথমের দিকে সদগুরু কোয়েম্বাটুরে যে কয়েকটি ক্লাস করেছিলেন, তার মধ্যে একটি। কাজেই স্থানীয় 'ঈশা- কেন্দ্রে'ও তার কোনও নথি ছিল না। সুতরাং আমাকে বিএসপি করার অনুমতি দেওয়া হল না। কিন্তু তখনও দুদিন বাকি ছিল বিএসপি হতে। আমি আশ্রম থেকে একটুও নড়লাম না এবং প্রস্তুতি পর্বের হোমওয়ার্ক করতে শুরু করলাম। অনেক অনুনয় -বিনয়ের পর বিএসপি শুরু হওয়ার মাত্র কয়েক মিনিট আগে আমাকে এটা করার অনুমতি দেওয়া হল।
বিএসপি ছিল পরিবর্তনের মোড় । প্রত্যেকটি ক্লাসে আরো বেশি বেশি উৎফুল্ল, এনার্জিতে ভরপুর, আরো বেশি আনন্দে উদ্বেল এবং প্রাণপ্রাচুর্যে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠলাম। এক সময় আমি দেখলাম সদগুরু আমার কাছ দিয়ে হাঁটছেন, আর আমি তাঁর পা দুটো ধরার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়লাম। কিন্তু তাঁর পা সেখানে ছিল না - আমার চেতনায়, এটা কেবলই মহাশূন্য । একটা সময় যখন আমি হল থেকে বেরিয়ে এলাম, পরমানন্দ সইতে না পেরে আমি শরীরের কোনও বোধ ছাড়াই লুটিয়ে পড়লাম। আমি মাটির সাথে এক হয়ে গেলাম, গাছপালা আকাশ, যে খাবার আমি খেয়েছি। আমার কাছে এটা স্পষ্ট হয়ে গেল যে আমার জাগতিক জীবন এবার শেষ।
পরে চেন্নাইতে অফিসে ফিরে আসার পর দুমাস আমি কোনও কাজ করতে পারিনি - আমি কোনও কিছুর দিকে তাকিয়ে থেকে যেতাম, কখনও ভেতরটা খালি মনে হতো আবার কখনো পরম আনন্দে ভরে যেত। আমার অবস্থা দেখে সহকর্মীরা কিছু জিজ্ঞেস করলে বলতাম, "আমি যোগা করছি।" দুমাস পরে আমি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলাম, কিন্তু সদগুরু এবং তাঁর সবকিছুর অংশ হয়ে উঠবার জন্য আমার মন আকুল হয়ে উঠল। আমি ১৩ দিনের ছুটি নিলাম এবং চেন্নাইতে যে 'ঈশা- যোগা' প্রোগ্রাম হচ্ছিল তার তিনটে ক্লাসেই আমি ভলেন্টিয়ারিং করলাম। আশ্রমের আমন্ত্রণ পেয়ে আমি অন্যান্য শিষ্যদের সঙ্গে কাডাপা ভ্রমণ করলাম। সেখানে আমি এক অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী হলাম।
অলৌকিক ঘটনা
এটা একটা প্রখর গ্রীস্মের দিন ছিল। সূর্য উজ্জ্বল এবং ঝকঝকে। প্রায় সাড়ে চারটে নাগাদ সদগুরু ব্রহ্মচারীদের নিয়ে গর্ভগৃহের পাশের একটি ঘরে গেলেন কিছু প্রক্রিয়ার জন্য। তাঁরা হয়ত একঘন্টা হবে ভেতরে ছিলেন। সদগুরু বেরিয়ে আসার মিনিট দশেক আগে, কোথাও কিছু নেই, হঠাৎ করে বৃষ্টি নামল। পরে রাত্রের সৎসঙ্গে ওখানকার স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান বললেন, " আমি গুরুর কাছে বৃষ্টি প্রার্থনা করেছিলাম কারণ আমরা অনাবৃষ্টিতে কষ্ট পাচ্ছি আর আজকেই বৃষ্টি হল ।" তিনি সদগুরুর প্রতি কৃতজ্ঞতায় উচ্ছ্বসিত।
কাডাপা-তে সদগুরু ধ্যানালিঙ্গ সৃষ্টি করার কথাও বললেন। সদগুরু যেভাবে এবং যা কিছু বললেন আমি জানলাম যে মানবজাতির জন্য এটি একটি অসামান্য উপহার। আর এই কাজের অন্তত একটি অতি ক্ষুদ্র অংশ হয়ে ওঠার জন্য আমার হৃদয় সেই ইচ্ছায় উচ্ছ্বাসিত হয়ে উঠলো।কাডাপা থেকে ফিরে আমি ভাবলাম, "আর অফিসে ফিরে যাওয়া নয়"।
আমি আবার আশ্রমে ফিরে গেলাম ফুলটাইম ভলেন্টিয়ার হওয়ার জন্য। আমাকে যত্নে রাখা হল এবং ভলেন্টিয়ার হিসেবে কিছু সাধারন কাজ করতে দেওয়া হল। যাই হোক, চতুর্থ দিনে স্বামী নিসর্গ বললেন, " সদগুরুর অনুমতি ছাড়া আপনি এখানে তিন দিনের বেশি থাকতে পারবেন না।" সদগুরুকে কোথায় পাবো, তা তিনি কিছু বললেন না। কাজেই, আমি চেন্নাই ফিরে এলাম।
অর্পণ
সৌভাগ্যবশত: আমি ফিরে আসার পরে পরেই সদগুরু চেন্নাইতে ক্লাস নিতে এলেন। দীক্ষার পরেরদিন সদগুরুর সাথে দেখা করার জন্য আমাকে একটা নির্দিষ্ট সময়ে দেওয়া হল। আমার সময় ছিল সকাল এগারোটা। সেদিন সকালে আমি উঠলাম এবং হঠাৎ করে আবার সেই সন্ত 'মানিক্কাভাসাগর'- এর গল্প মনে পড়ে গেল। সেই গল্পে মানিক্কাভাসাগর, যিনি এক পান্ড্য রাজার সভায় মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, রাজার আদেশে আরবি ঘোড়া কিনতে যান। কিন্তু রাস্তায় তাঁর সাক্ষাৎ হল শিবের সাথে, যিনি একজন গুরুর বেশে মানিক্কাভাসাগর কে নিজের অংশ করে নিতে আসেন এবং তার জীবন সম্পূর্ণ রূপান্তরিত হয়ে যায়। আমার ভীষণ ভাবে মনে হচ্ছিল যে সেই ধরনের কিছু সেদিন আমার সাথেও ঘটবে। আমি ঠিক করলাম, " আজকে সদগুরুকে শিবের প্রিয় ফুলগুলো দিতে হবে।" সকাল সাড়ে সাতটায় আমি শিবের প্রিয় পাঁচ রকমের ফুল -পাতার খোঁজে বেরিয়ে পড়লাম - নান্দিয়াভাত্তাম, মান্দারাই, জবা ,বিল্ব এবং নাগালিঙ্গ। আমাদের পাশের বাড়ির উঠোনে তিনটে পেয়ে গেলাম, ভেজা কাপড়ে সে গুলোকে মুড়ে নিলাম এবং বিল্লপত্র পাবার আশা নিয়ে দূরের একটি শিব মন্দিরে গেলাম। সেখানে মন্দিরের পাশে বিল্ব এবং নাগালিঙ্গ দুটোই পেলাম। যতক্ষণে আমি ফুল জোগাড় করে সদগুরুর সাথে দেখা করার জায়গায় পৌঁছলাম, ততক্ষণে আমার ভেতরে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে।
প্রথমবার যখন সদগুরু আমার সাথে কথা বললেন
সদগুরু যেই ঘরে বসে ছিলেন সেখানে ঢুকে আমি বজ্রাসনে বসলাম। কাপড়ের টুকরো থেকে ফুলগুলো বার করে সদগুরুর পায়ে দিলাম। সহজাত সংস্কারবসে ওই পাঁচটি ফুলের সাথে আমি নিজেকে যা ভাবতাম, তাও সম্পূর্ণভাবে তাঁর পায়ে অর্পণ করলাম। আমার মনে হল আমি যেন জন্ম-জন্মান্তর ধরে এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করছিলাম। হঠাৎ যেন আমার ভেতরের সবকিছু স্থির হয়ে গেল, আর আমি তাঁর পায়ের দিকে তাকিয়ে বসে রইলাম। অশ্রু বইতে লাগলো। এইভাবে দু-তিন মিনিট পেরিয়ে গেল; ঠিক যেন আমার সত্তা তার পায়ের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছিলো। ওই কয়েকটি মুহূর্ত আমি তাঁর পা-দুটি ছাড়া আর কিচ্ছু দেখিনি।
কয়েক মিনিট পরে সদগুরু বললেন, " এবার কথা বলা যাক ",এবং তাঁর পা দুটি নাড়ালেন। আমার মনে হল তাঁর পা দুটি যেন আমার ভেতরে নড়ে উঠলো।
কি বলবো কিছু খুঁজে পেলাম না, আমার কাছে কোনও শব্দ ছিল না এবং যা কিছু জানতাম সব যেন শূন্য । আমি জানিনা, কোথা থেকে আমার মুখে এই কথাগুলো জোগালো, যখন আমি বললাম, "আমার সময় এসে গেছে!"
"অবশ্যই সময় এসে গেছে", সদগুরু বললেন । "তাহলে এখন আমরা কি করবো?"
আমি সঙ্গে সঙ্গে বললাম, "আমি সন্ন্যাসী হতে চাই।"
তখন তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আমি কি করি, আমার পারিবারিক পরিস্থিতি কিরকম, ইত্যাদি। আমার পারিবারিক পরিস্থিতি জানার পর তিনি জিজ্ঞেস করলেন, " তাহলে তোমার মা-বাবার যত্ন কে নেবে?" আমি তাঁকে আশ্বস্ত করলাম যে আমার বড় ভাইয়েরা ততদিনে পরিবারের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য যথেষ্ট ভালোই উপার্জন করছে ।" ডিসেম্বরে চলে এসো", তিনি বললেন এবং আমাদের সাক্ষাৎ শেষ হল।
তখন জুলাই মাস। আমার জন্য, সবকিছু শেষ হয়ে গেছিল; 'আমি' বলতে যা কিছু বুঝতাম, সব তাঁর পায়ে উজাড় করে দিয়েছিলাম। সেই মুহূর্ত থেকে এখন, এই মুহূর্ত পর্যন্ত, আমি যখন এটা লিখছি, আমার অন্তরের গভীরে সবসময় একটা অন্তহীন আনন্দ রয়েছে । সব রকমের অনুভূতি উপরিতলে ঘটছে কিন্তু ভিতরের আনন্দ সব সময় আছে।
১৯৯৭ -সালের পয়লা ডিসেম্বর আমি আশ্রমে পুরো সময়ের জন্য চলে গেলাম এবং ১৯৯৮ -এর মহা শিবরাত্রিতে ব্রহ্মচর্যের দীক্ষিত হলাম।
ধ্যান লিঙ্গ নির্মাণের উদ্দীপনা
প্রথমের দিকে আমি রান্নাঘরে কাজ করতাম, হাঁড়ি-কড়াই ধুতাম এবং ভাত রান্না করতাম। তিন মাস পরে আমি নির্মাণ দলের অংশ হলাম। একদিন, অন্য আরও দু'জনের সঙ্গে সদগুরুর সাথে একটি মিটিংয়ের জন্য ডাকা হল। সেই মিটিংয়ে সদগুরু আবেদন করলেন, "আমি একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ধ্যানলিঙ্গের উপর একটি ছাদ চাই," এবং কিভাবে ধ্যানলিঙ্গ গম্বুজের ভিত তৈরি করতে হবে সে ব্যাপারে খুঁটিনাটি বিবরণ দিলেন। তিনি জটিল নির্মাণ কার্যের খুঁটিনাটি কোনও চিত্র ছাড়াই যেভাবে মুখে মুখে তাৎক্ষণিকভাবে বললেন - তা থেকে এত বছর ধরে আমি বুঝেছি যে, তিনি যা কিছু আমাদের নির্মাণ করতে বলেন, তার গঠন, আকার, অবস্থান এবং অভিমুখ, সবকিছু তাঁর মনে তৈরি আছে। ওই প্রথম মিটিংয়েই সদগুরু আমাদের জিজ্ঞেস করলেন, "প্রতিদিন এই মন্দিরে কতজন মানুষ আসুক তোমরা চাও?"
"এক হাজার," আমি উৎসাহিত হয়ে বললাম - সবচেয়ে বড় সংখ্যা যা আমি ভাবতে পেরেছিলাম।
উত্তরে সদগুরু বলেছিলেন, "হ্যাঁ, আরো অনেক বেশি আসবে।"
এখন আমি খুব আপ্লুত বোধকরি, যখন দেখি হাজার হাজার মানুষ ধ্যানলিঙ্গ দর্শনে আসছেন।
'অরা সেল' স্টোন এবং চারটি কারখানা
এই মিটিং এর পরে আশ্রমে যারা থাকেন এবং ভলান্টিয়াররা অত্যন্ত উদ্দীপ্ত হয়ে উঠল সদগুরুর দেওয়া নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গম্বুজটি সম্পূর্ন করার জন্য। আমরা দিন-রাত্রি এক করে এই লক্ষ্যের জন্য আমাদের যা কিছু সামর্থ্য ছিল সব নিবেদন করলাম। ভিত এবং দেওয়াল বেশ তাড়াতাড়ি দাঁড়িয়ে গেল। কিন্তু এবার 'অরা সেল' গুলো সম্পূর্ণ করার জন্য আমাদের 'লিন্টেল' পাথরের দরকার ছিল। যোগানদার কথা দিয়েছিল যে এক মাসের মধ্যে এটা দিয়ে দেবে। কিন্তু তার কাছ থেকে আমরা আর কোনও খবর পাচ্ছিলাম না। সুতরাং একমাস পরেও 'কাট-স্টোন' গুলো যখন এসে পৌঁছল না, আমরা পাথর খাদানে যাব ঠিক করলাম। যখন সেখানে পৌছালাম, আমরা তো দেখে হতবাক যে আমাদের দরকার অনুযায়ী ৫৪ -টা পাথরের মধ্যে মাত্র দুটো তৈরি হয়েছে। সে কোনওভাবেই ওই সময়ের মধ্যে বাকি স্টোনগুলো আমাদের দিতে পারবে না। আমরা জানতাম না কি করবো, এবং যথারীতি কথাটা আমরা ভলেন্টিয়ারদের মধ্যে ছড়িয়ে দিলাম।
গোবি-র অরুনাগিরি দাদা এবং সেন্থিল দাদা আমাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন এবং ব্যাঙ্গালোরে একটা পাথর খাদানের ঠিকানা দিয়ে সেখানে যেতে বললেন। শীঘ্রই স্বামী অভিপাদ, যিনি কেনাকাটার দায়িত্বে আছেন এবং স্বামী নিসর্গ, অনুবাদক ,এই পাথর খাদানে গেলেন এবং অমসৃণ পাথরগুলর আনানোর ব্যবস্থা করলেন। তবুও এত অল্প সময়ের মধ্যে কিভাবে এই অমসৃণ পাথরগুলোকে কেটে তৈরি করা যাবে ! গোবির ওই দুজন দাদা আবার একটা সমাধান বার করলেন এবং চারটে পাথর কাটার কারখানা খুঁজে বার করলেন, যেখানে একইসময়ে এগুলোকে কেটে তৈরি করার কাজ হবে। যাতে দেরি না হয়, সেজন্য আমি প্রত্যেকদিন বাসে করে এই চারটে কারখানাতে যেতাম, কাজ কতটা এগোল, তা দেখার জন্য। একটা হৃদয়স্পর্শী ব্যাপার হল রোজ রাত্রে আমি যখন সিঙ্গানাল্লুর অফিসে ফিরতাম, রাত এগারোটা নাগাদ, স্বামী দেবসত্ত্ব আমাকে খাবার না খেয়ে ঘুমোতে দিতেন না। তিনি অন্তত 'উপমা' হলেও বানাতেন এবং আমাকে খাইয়ে ছাড়তেন।
তৈরী ইঁট
সত্যি কথা বলতে কি, সদগুরু আমাদের যে গ্রানাইট বা অন্যান্য সমস্ত মালপত্র ব্যবহার করতে বলতেন, আমাদের মধ্যে কেউই সেসব কোথায় পাওয়া যায়, বা তার উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিশেষ কিছুই জানতাম না। কিন্তু যখনই আমরা আটকে গেছি, কোনও না কোনও ভাবে সাহায্য পেয়ে যেতাম - এটা যেন অলৌকিক ভাবে ঘটে যেত। যেমন গম্বুজের ইঁটের ক্ষেত্রে। সদগুরু একেবারে নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন যে গম্বুজ এর জন্য আমরা দুই -ইঞ্চি পুরু ইঁট ব্যবহার করব। দু -ইঞ্চি কোনও নির্দিষ্ট মাপের ইঁট নয় এবং আমরা তামিলনাড়ুতে এর কোন যোগানদার পেলাম না। কি করব বুঝতে না পারায়, এই কথা ছড়িয়ে পরল এবং যথারীতি একজন ভলেন্টিয়ার এর সমাধান দিলেন। মোহন দাস দাদা কেরালাতে একটা কারখানা খুঁজে বার করলেন যার সমস্ত ইঁট গুলোই ছিল আমাদের প্রয়োজনমতো মাপের। একদম তৈরী অবস্থায় । মোহন কিন্তু আসলে এই যোগানদারের খোঁজে সেখানে যাননি ; তিনি অন্য কোন কাজে কেরালা গিয়েছিলেন - এবং এই যোগানদার এর সাথে তার এমনিই যোগাযোগ হয়ে যায় ।
হোর্ডিস টাইলসের শক্তি
আরেকটা জিনিস হল, ধ্যানলিঙ্গ প্রতিষ্ঠার সময় আমরা যেসব কলাকৌশল এবং মালমসলার ব্যাপারে শিখেছি সেসব এখনো আমরা ভীষণ ভাবে ব্যবহার করছি। যেমন ধরুন ভিতরের পরিক্রমার ছাদ তৈরি করার জন্য সদগুরু আমাদের 'হোর্ডিস টাইলস' ব্যবহার করতে বললেন। সদগুরু যা বোঝালেন তা থেকে টাইলসগুলো কমজোরি মনে হল। আমার চিন্তা হল টাইলস গুলো কোনও ভার নিতে পারবে কিনা। তাছাড়া আমরা তামিলনাড়ুতে এমন কোনও জায়গা খুঁজে পেলাম না যেখানে এটা ব্যবহার করা হয়েছে। আবারও মোহন দাস আমাদের কেরালার কালিকটে একটা 'হোর্ডিস টাইলসের' কারখানায় নিয়ে গেলেন । টাইলসগুলো দেখার পর আমি তাদের এম ডি -কে না বলে পারলাম না যে নির্মাণের কাজে এগুলোকে কিভাবে ব্যবহার করতে হয়, তা আমরা জানি না। এম ডি অবাক হয়ে সেই দিনই একজন ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ করিয়ে দিলেন যিনি বিকেল সাড়ে চারটের সময় একটি হোটেলে আমাদের সাথে দেখা করতে রাজি হলেন। তারপর একে একে এমন সব ঘটনা ঘটতে লাগলো তা ভাবলে এখনো আমি আপ্লুত হয়ে যাই।
যেমনি আমরা হোটেলে ঢুকলাম, একজন ঈশা মেডিটেটারের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল, যিনি আগে কোয়েম্বাটুর এয়ারপোর্ট ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেছেন এবং আশ্রমে গেছেন। তিনি স্বাভাবিক ভাবেই স্বামী অভিপাদ কে চিনতে পারলেন। আমাদের কথা শোনার পর তিনি তার গাড়িটি আমাদের দিলেন কাজের জায়গায় যাওয়ার জন্য এবং তিনি ও তাঁর স্ত্রী অটোতে করে ফিরে গেলেন। সেই ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে যখন আমাদের দেখা হল, জানা গেল যে তিনিও কোয়েম্বাটুরে পড়াশোনা করেছেন। তিনি খুব যত্ন নিয়ে আমাদের বোঝালেন কিভাবে এই টাইলস ব্যবহার করা হয় তার প্রযুক্তিগত খুঁটিনাটি নিয়ে এবং দু-তিন জায়গায় গিয়ে দেখে আসার জন্য অ্যাপোয়েন্মেন্ট করে দিলেন।
প্রথম জায়গাটায় গিয়ে দেখলাম, দৈবক্রমে সেই দোকানের মালিকও আগে ঈশা আশ্রম দর্শন করে গিয়েছেন। এতজন মেডিটেটারের সঙ্গে দেখা হওয়ায়, যখন সেই শহরে ইশার কোনও সেন্টারই নেই, আমরা খুবই আশ্চর্য হলাম। তিনি আমাদের প্রতি এতটাই আন্তরিক ছিলেন, যে আরও খুঁটিনাটি সব বোঝানোর আগে তিনি জোরাজুরি করে আমাদের শরবত খাওয়ালেন। তিনি আমাদের সবকিছু দেখালেন এবং ব্যাখ্যা করে বললেন। তার মেজানাইন ফ্লোরে এই টাইলসগুলো ব্যবহৃত করা হয়েছিল, যার ওপর রেফ্রিজারেটর ইত্যাদির মতো ভারী যন্ত্রপাতি রাখা ছিল । কাজেই এই টাইলসের শক্তি সম্পর্কে আমি আশ্বস্ত হলাম এবং অন্য জায়গাগুলো যাওয়ার আর প্রয়োজন হল না। এমনকি আজও অনেক ইশা বিল্ডিংয়ে আমরা 'হোর্ডিস টাইলস' ব্যবহার করছি।
C - আংটার বন্ধন
এই নির্মাণ কার্যের আরেকটা দিক হল... আমরা যা কিছু জানতাম এবং আমাদের যা কিছু গুণাগুণ সবটাই ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়েছিল। একবার আমি নিজে থেকেই একটা C- আকারের লোহার আংটা ডিজাইন করেছিলাম, সামনের মণ্ডপের বিশাল থামগুলোকে তোলার জন্য। দেখে মনে হচ্ছিল এগুলো একটা থামকে ভালোভাবেই ধরে রাখতে পারবে। কিন্তু আমি ওগুলো ব্যবহার করার ক্ষেত্রে ভীষন ভয়াতুর হয়ে পড়লাম। "যদি থামটা পিছলে পড়ে যায়, কি হবে, যদি কারো আঘাত লাগে, যদি কেউ মারা যায়…" সারারাত্রি এসব ভেবে আমার ঘুম হল না। আমি এত ভয়াতুর হয়ে গেছিলাম যে পরের দিন সকালে আমার আমাশা হয়ে গেল। তখন আমি ধ্যানলিঙ্গে গিয়ে তিন ঘণ্টা বসে থাকলাম এবং নিজেকে সুস্থির করলাম। আমি যখন বেরিয়ে আসছিলাম স্বামী নন্দিকেশার সাথে দেখা হল, যিনি একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। আমি তার সাথে পরিস্থিতিটা আলোচনা করলাম। কয়েক মিনিট চিন্তা করে তিনি বললেন যে আমরা কাঠের টুকরো ঢুকিয়ে আংটা গুলোকে আঁট করতে পারি এবং থামের গোড়ার দিকে একটা বাড়তি আংটা ব্যবহার করতে পারি। সমাধানটা খুব ভালোভাবে কাজ দিল। সেও তখন সদ্য পাশ করা এবং তার বিশেষ কোনও অভিজ্ঞতাও ছিলনা। কিন্তু আমরা নিজেদেরকে যতটা সম্ভব কাজে লাগালাম - এবং এটা কাজে দিল।
কৃপার ছায়াতে জীবন কাটানো
গত কুড়ি বছরে আমার এখানে থাকাকালীন এরকম অনেক ঘটনা ঘটেছে। আসলে ঈশাতে আমরা নির্মাণের নামে যা করি, তা সদগুরুর মস্তিষ্কপ্রসূত এবং তাঁরই ডিজাইন করা। এবং নানাভাবে এগুলো সদগুরুর কৃপাতেই সম্পন্ন হয়েছে। যখন আমরা তাঁর সাথে নির্মাণকাজের মিটিংয়ে থাকি, সদগুরু খুঁটিনাটির বিবরণ দেন, আর সাথে সাথে আমার মাথাতে, তিনি যা বলেন, তার থ্রি -ডি ছবি তৈরি হতে থাকে। পরে যখন ড্রইং তৈরি করা হয়, তিনি স্থাপত্য সংক্রান্ত গঠনের যেসব মাত্রা এবং অনুপাত দেন তা ঠিক ঠাক মিলে যায়।
আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান বলে মনে করি যে সদগুরুর মানবজাতির জন্য যে চিন্তাভাবনা, তা বাস্তব করার কাজে আমি খুব সামান্য হলেও কাজে লাগতে পেরেছি। এবং এখানে থাকাতে আমার ভিতরে যে কি ঘটেছে তা আমার সুদূর কল্পনার অতীত। যখনই আমি সদগুরুর শারীরিক রুপ আমার ভিতর দেখি - তাঁর উজ্জ্বল, দীপ্তিমান মুখখানি - আমি আনন্দে ভরে উঠি, অনেক সময় আপ্লুত হয়ে যাই; যেকোনো জায়গায় এবং যেকোনো সময়। আমি জানিনা কি করে এটা হয়, কিন্তু আমার কাছে সদগুরু স্বয়ং শিব - তার একটুকুও কম নয়, বেশিও নয়।
গুরুকে দর্শণ করলে আসে স্পষ্টতা
(গুরুবাক্য শ্রবণ করলে আসে স্পষ্টতা
গুরু নাম উচ্চারণ করলে আসে স্পষ্টতা
গুরুকে স্মরণ করলে আসে স্পষ্টতা)
[By seeing the Guru's form one gets clarity
By hearing the Guru's words one gets clarity
By uttering the Guru's name one gets clarity
By contemplating on the Guru's form one gets clarity]
ওম শম্ভু, শিব শম্ভু, জয় শম্ভু মহাদেব!
Editor's Note: Watch this space every second Monday of the month as we share with you the journeys of Isha Brahmacharis in the series, "On the Path of the Divine."