ঈশা ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ নাকচ করল ভারতের সর্ব্বোচ্চ আদালত, অভিযোগের অভিপ্রায় নিয়ে প্রশ্ন
ঈশা ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে করা মামলা নাকচ করল সুপ্রিম কোর্ট, সঙ্গে হাই কোর্টের নির্দেশের উপর কড়া আপত্তি, এবং দুই সন্ন্যাসীনির স্বেচ্ছায় ফাউন্ডেশনে থাকার সত্যতা স্বীকার।
ভারতীয় সর্ব্বোচ্চ আদালত নাকচ করেছেন ঈশা ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে আনা আইনি অভিযোগ, যাতে দাবি করা হয়েছিল যে দুই সন্ন্যাসীনিকে, তাঁদের স্বাধীন ইচ্ছার বিরুদ্ধে ঈশা ফাউন্ডেশনে আটক রাখা হয়েছে। দুই সন্ন্যাসীনি, বয়স যথাক্রমে 39 ও 42, ফাউন্ডেশনে আপন স্বাধীন ইচ্ছায় থাকছেন - এর সত্যতা ঘোষণা করেছে আদালত।
ঈশা ফাউন্ডেশনের বিপক্ষে মাদ্রাজ হাইকোর্ট পরিচালিত পুলিশি তদন্তকে খারিজ করেছে সর্ব্বোচ্চ আদালত।
উপরন্তু ভারতের প্রধাণ বিচারপতি ডি.ওয়াই. চন্দ্রচূড় নিরীক্ষা করে জানিয়েছেন, “ব্যক্তিগত মানহানি এবং প্রাতিষ্ঠানিক কলঙ্ক রটানোর জন্য আইনি কার্যধারাকে ব্যবহার করা যাবে না।” মাদ্রাজ হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী সংগঠিত পুলিশি তদন্তকে খারিজ এবং পুলিশি রিপোর্টের তথ্যকেও অস্বীকার করেছে সর্ব্বোচ্চ আদালত ।
আপনার প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের জীবন নিয়ন্ত্রণ করতে আপনি অভিযোগ দায়ের করতে পারেন না।
পূর্বেই এই দুই সন্ন্যাসীনির সাথে প্রধাণ বিচারপতির কথা হয়েছিল, তার ভিত্তিতেই দুই নারীই যে বুদ্ধিমতি এবং তাঁরা যে স্বনির্ভর সিদ্ধান্ত নিতে সম্পূর্ণ সশক্ত তারই আভাস দিয়েছেন প্রধাণ বিচারপতি। পুলিশও স্বীকার করেছে যে এই দুই সন্ন্যাসীনি বাবা-মায়ের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছেন - এর সত্যতা প্রমাণ হয়েছে বেশ কিছু তদন্ত এবং লিখিত প্রমাণের ভিত্তিতে, যার মধ্যে রয়েছে সিসিটিভি ফুটেজ, 70-এরও বেশি সংখ্যক ফোন কল এবং সন্ন্যাসীনি ও বাবা-মায়ের মধ্যে ব্যক্তিগত সাক্ষাৎ । অভিযোগকারীর উদ্দেশ্যে ভারতের প্রধাণ বিচারপতি জানিয়েছেন, ” আপনার প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের জীবন নিয়ন্ত্রণ করতে আপনি অভিযোগ দায়ের করতে পারেন না”।
আদালতের কথায়, “দুই ব্যক্তিই প্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন যখন তাঁরা আশ্রমে যুক্ত হন এবং কোয়ম্বত্তূরের ঈশা ফাউন্ডেশনে থাকার তাঁদের যে ইচ্ছা তা তাঁরা স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেছিলেন। সেই বিচারে, বন্দি-প্রদর্শন আবেদন যথাযথভাবে পূরণ করা হয়েছে। তাই হাই কোর্টের আর অন্য কোনও নির্দেশের প্রয়োজন ছিল না।”
আদালতের নির্ণয়কে অভিবাদন জানিয়ে, মা মায়ূ ও মা মাথি জানিয়েছেন, “আমাদের সন্ন্যাস-জীবন কাটানোর নির্বাচনের স্বপক্ষে সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ে আমরা অত্যন্ত খুশি। আমাদের জন্মদায়ী পরিবারের দায়ের করা অভিযোগে আমরা প্রবল যন্ত্রণা পেয়েছি, কিন্তু ঈশা স্বেচ্ছাসেবী, সদগুরু এবং শুভাকাঙ্খীদের পাশে পেয়ে আমরা কৃতজ্ঞ।”
https://youtu.be/qA7OsEIbDHE?si=cQJsJknly86RKN4b
নারীদের অপমানিত ও অপরাধি সাব্যস্ত করা হচ্ছে তাঁদের নিজেদের নির্বাচনের জন্য
এই অভিযোগেগুলির যে দিকটি সবচেয়ে বেশি বিক্ষোভ সৃষ্টি করছে তা হল এর অন্তর্নিহিত ইঙ্গিত যে দুই প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েকে (বয়স যথাক্রমে 39 এবং 42) নতিস্বীকার করতে হবে পিতার নির্দেশের কাছে। আদতে, এই প্রথমবার নয় যে তাঁদের পিতা এই ধরণের অভিযোগ এনেছেন। 2016 তেও যখন তাঁর স্ত্রী বাস্তবিক এই একই অভিযোগ দায়ের করেন যে তাঁদের কন্যাদ্বয়ের মগজ-ধোলাই করা হয়েছে, এই দুই ব্রহ্মচারিনী যে তাঁদের স্বাধীন ইচ্ছায় ঈশা যোগ কেন্দ্রে আছেন এবং তাঁদের মানসিক কার্যক্ষমতা যে সম্পূর্ণভাবে তাঁদের দখলেই রয়েছে - তা তাঁদের সাথে সাক্ষাত করে নিশ্চিত করার পর মাদ্রাজ হাই কোর্ট এই মামলা নাকচ করে দেয়।
ভারতীয় সংস্কৃতিতে সবসময়েই নারীদের সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিড়ম্বনার বিষয় হল, এই গোটা ঘটনাটি ঘটেছে নবরাত্রির ঠিক আগের দিন - যা দৈব স্ত্রী-শক্তিকে উদযাপন করার ভারতীয় এক ঐতিহ্যবাহী উৎসব। কাজটি শুধু যে সংবেদনহীন তাই নয়, ভয়ানকভাবে অনুপযুক্তও বটে।
ঈশাতে, নারীদের কখনও কোনও লিঙ্গভিত্তিক মূল্যায়ন বা প্রভেদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয় না। এর বিপরীত দিকে, মিথ্যা অভিযোগ এনে, ঐ দুই ব্রহ্মচারিণী এবং বস্তত্ত, ঈশার সমস্ত স্বেচ্ছাসেবীদের ব্যক্তি-স্বাধীনতা ও ধর্মের অধিকারের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করা এটাই স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে এমন অভিযোগের পেছনে কী ধরণের মানসিকতা দায়ী। এই কাজ পিতৃতান্ত্রিক, স্ত্রী-বিদ্বেষী, উৎপীড়নের মানসিকতার পরিচায়ক।
একান্ততার পূর্ণ সীমা লঙ্ঘন
পুলিশি তদন্তের দিনে ফাউন্ডেশন মহালয়া অমাবস্যার গুরুগম্ভীর আচার পরিচালনা করতে ব্যস্ত ছিল। ভারতীয় সংস্কৃতিতে মহালয়া অমাবস্যা এক গুরুত্বপূর্ণ দিন যেদিন মানুষজন তাঁদের পূর্বজদের স্মরণ করে শ্রদ্ধা অর্পণ করে থাকেন। বহু অতিথি ও দর্শনার্থীরা সেদিন এই উদ্দেশ্যেই ঈশা যোগ সেন্টারে উপস্থিত ছিলেন। এমন গুরুত্বপূর্ণ এক উপলক্ষে, তদন্তের নির্দেশ জারি করা ও ঈশা যোগ সেন্টারে উপস্থিত মানুষজনকে জেরা করা বহু দর্শনার্থীকে গভীর ভাবে মানসিক ও আবেগগত আঘাত দিয়েছে, কারণ তাঁরা বোধ করেছেন যে তাঁদের একান্ততার সীমাকে সম্পূর্ণভাবে লঙ্ঘন করা হয়েছে।
দেশীয় সংস্কৃতি এবং সনাতন ধর্মের পুনরুজ্জীবনের প্রতি এক আক্রমণ
স্বদেশী সংস্কৃতির চর্চা ও সনাতন ধর্ম বহু বছর ধরেই এ দেশে পীড়িত এবং আক্রান্ত হয়ে আসছে। এই প্রথমবার নয় যখন ঈশা ফাউন্ডেশনের প্রতি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অভিযোগ নিক্ষেপ করা হল। তিন দশক ধরে এই ফাউন্ডেশন যোগীক সাধনী প্রদান করে ধর্ম-বর্ণ-জাতি-লিঙ্গ নির্বিশেষে সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের রূপান্তর ও কল্যাণের জন্য কাজ করে আসছে। এইসমস্ত সাধনীগুলি সকলকে আপন করে নেওয়ার ও সর্বসমন্বয়ের এক পৃথিবী রচনার ভিত গড়ে দেয়, এবং এধরণের মিথ্যা অভিযোগকারীদের বিভাজনের অভিপ্রায়ের সাথে বৈপরীত্য প্রকট করে তোলে।
হতদরিদ্ররা সবচেয়ে বেশী যন্ত্রণা পায়
লক্ষ লক্ষ ঈশা স্বেচ্ছাসেবীর কাছে, এই সমস্ত অভিযোগের সর্বাধিক যন্ত্রণাদায়ী অংশ তাঁদের নিজেদের মানসিক আঘাত প্রাপ্তি নয়। বরং, সমাজের গ্রামীণ হতদরিদ্র ও দুর্বলতম অংশ, যাঁরা ঈশার প্রসারিত কার্যক্রমের ওপর একান্ত নির্ভরশীল, তাঁদের ওপর এক ভয়ানক আঘাত নেমে আসে। গ্রামীণ ভারতের 50 লক্ষ রোগীই হোন যাঁরা বিনামূল্যে চিকিৎসা পেয়েছেন কিংবা 225000 কৃষক যাঁরা ঈশার কৃষি, মাটি, জল উদ্যোগের সুফল লাভ করেছেন - এঁদের জীবনযাপন ব্যাহত হয় কারণ ফাউন্ডেশনকে এই ভীষণ জরুরি সামাজিক কাজের থেকে মন সরিয়ে নিয়ে অর্থহীন, অসাড় অভিযোগের সাথে লড়াই করতে হয়।