সচেতনতা এবং বেদনানাশক ওষুধের মধ্যে ভারসাম্য
মৃত্যুর মুহূর্তের সচেতনতাকে বেদনানাশক ওষুধ কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে সে সম্পর্কে একটি প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন সদগুরু।
প্রশ্ন: আমি সম্প্রতি এক মারাত্মক প্রকৃতির ক্যান্সারের কারণে আমার এক বন্ধুকে হারিয়েছি। শেষের দিকে, তিনি তীব্র যন্ত্রণায় ছিলেন। ব্যথা কমানোর জন্য ও তাকে কিছুটা স্বস্তি দেওয়ার জন্য যে পরিমাণ বেদনানাশক ওষুধ ব্যবহার করা হয়েছে তা তাকে একরকম প্রতিক্রিয়াহীন করে তুলেছিল। আমার প্রশ্ন হ'ল, মৃত্যুর সময়, যদি আমাদের পূর্ণ সচেতনতার সাথে দেহত্যাগ করতে হয়, সেটা কীভাবে সম্ভব যখন কেউ বেদনানাশক ওষুধের দ্বারা অসাড় বা অচৈতন্য হয়ে পড়েন। আমাদের কি এমন পরিস্থিতিতে ব্যথার ওষুধ সেবন করা উচিত নয় যাতে আমরা সচেতন থাকতে পারি?
সদগুরু: যখন কেউ তীব্র যন্ত্রনায় আছেন, ওষুধ না খাওয়া নিষ্ঠুর হতে পারে এবং যন্ত্রণার ওই সময়ে সচেতনতা রাখা দুষ্কর হতে পারে। কিন্তু আমি নিশ্চিত একটি মধ্যবর্তী রাস্তা নিশ্চয়ই আছে যেখানে মানুষটিকে অজ্ঞান না করেও ব্যাথা অনেকটা কমিয়ে আনা যায়। সর্বোপরি কেউ যদি বহির্জগতে প্রতিক্রিয়াহীন হয়েও থাকেন, তারা তাদের অন্তরে ভাল ভাবেই সচেতন থাকতে পারেন। ওষুধটি শরীরকে হয়তো অসাড় করতে পারে, শারীরিক অসাড়তার ফলে মানুষটি বাহ্যিক দুনিয়াতে সাড়া দিতে নাও পারেন, কিন্তু অন্তরে এটি একজনের পক্ষে সচেতন থাকার একটি আদর্শ সম্ভাবনা তৈরী করতে পারে। যদিও একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে, বেদনানাশক ওষুধ ও অন্যান্য ড্রাগের মাত্রার জেরে একটি মানুষ সম্পূর্ণ অচেতন হয়ে যেতে পারে।
আমি মনে করি বেশির ভাগ ডাক্তারাই শরীরকে শুধু সেই মাত্রায় অসাড় করেন যেখানে আর ব্যাথা অনুভব হয় না। আরো অনেক রাস্তা আছে যা অন্য দেশের ডাক্তাররা খুঁজে বার করেছেন, যেমন শরীরের কোনো নির্দিষ্ট স্থানে স্নায়ুতন্ত্রের কাজকে বন্ধ করে দেওয়া যাতে শরীর ব্যাথা অনুভব করতে না পারে, বা বিশেষ ভাবে লেসার প্রযুক্তি ব্যবহার করা যাতে স্নায়ুতন্ত্র ব্যাথার অনুভূতি সঞ্চালন বন্ধ করে দেয়। আধুনিক প্রযুক্তি এবং চিকিৎসাবিদ্যা ব্যাথা থেকে মুক্তির নানাবিধ উপায়ের খোঁজ করছে - যেটা ভাল। কেউ কোনভাবেই অন্য কারুর কাছে যন্ত্রনার পক্ষে ওকালতি করতে পারে না।
যদি কেউ সেই দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতিতে থাকেন যেখানে ব্যথা বনাম সচেতনতা, তবে আমি বলব ব্যথাটিকে প্রথমে কমানো উচিত, কারণ সচেতনতা এমন কিছু নয় যা আপনি করেন। সচেতনতা বিভিন্নভাবে ঘটতে পারে কারণ সচেতনতা হল জীবন। এর নিজেকে খুঁজে পাওয়ার নিজস্ব উপায় আছে। সচেতন হওয়ার চেষ্টা করার দরকার নেই। যদি কেউ কমপক্ষে কিছুটা হলেও সচেতন জীবনযাপন করে থাকে, যদি কেউ দীক্ষিত হয়, যদি শক্তির অন্য মাত্রা কারুর মধ্যে সঞ্চারিত হয়ে থাকে তবে স্বাভাবিকভাবেই মৃত্যুর মুহূর্তটি সচেতনতার সঙ্গে ঘটতে পারে। সচেতনতা কোনও কাজ নয় যা আমরা করি - এটি একটি অবস্থা, আমাদের অস্তিত্বের একটি মাত্রা। তো যদি কাউকে তীব্র যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য অবশ করা হয়, তবে চিন্তিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। তারা প্রতিক্রিয়াহীন হতে পারেন, তবে তার অর্থ এই নয় যে তারা সচেতন হতে অক্ষম। যদি ওষুধটি কেবল শরীরকে অসাড় করার জন্য ব্যবহার করা হয় তবে সচেতন হওয়া আসলে খুব সহজ হয়ে যেতে পারে।
The ebook “Life and Death in One Breath” has more about the process of living and dying. It can be purchased at Isha Downloads.
Editor’s Note: This article is based on an excerpt from the January 2015 issue of Forest Flower. Pay what you want and download. (set ‘0’ for free). Print subscriptions are also available.