সদগুরু: যখন আমরা যখন আমরাবলি, এটা বিশ্বকে ধ্বংস করা নয়, এটা আপনার সৃষ্ট জগৎকে ধ্বংস করার ব্যাপারে। আপনার দুনিয়া কেবল অতীতের অভিজ্ঞতা ও অনুভুতির সঞ্চয়। আপনার দুনিয়া অতীতের অভিজ্ঞতা দিয়ে তৈরী। অতীত হলো যা মৃত। এটা শুধু ভ্রম হিসেবে থেকে যায় আর আপনার চিন্তাধারার মাধ্যমে ধীরে ধীরে বর্তমানেও চলে আসে এবং আপনার বাসনার মাধ্যমে এটি আপনার ভবিষ্যতে নিজেকে প্রতিফলিত করে।

যদি আপনি এই সৃষ্টির মাহাত্ম্য জানতে চান সেটা শুধুমাত্র এই বর্তমান মুহূর্ত দিয়ে বোঝা সম্ভব; যেটা এখানে,এই মুহূর্তে।

যদি চিন্তা না থাকতো তাহলে অতীত বর্তমানে আসতে পারতো না। চিন্তন এক ভ্রম এবং বাসনা হ'ল দ্বিগুন ভ্রম কারণ বাসনা নিরন্তর অতীতকে ভবিষতে প্রতিফলিত করছে। অতীতে আপনি যা কিছু জেনেছেন, আপনি যেটা তার চেয়ে ভালো মনে করেন, সেরকম কিছুর জন্যই আপনি বাসনা করেন। যদি আপনি এই সৃষ্টির বিশালতা জানতে চান সেটা শুধুমাত্র এই বর্তমান মুহূর্ত দিয়েই বোঝা সম্ভব; সেটা হল এখানে,এই মুহূর্তে। এটাই একমাত্র দ্বার। যদি আপনি অতীত কে নিয়ে আসেন তাহলে আপনি অলীক কল্পনা করতে শুরু করেন। আপনি যদি 'যার অস্তিত্ব নেই এমন কিছু' দিয়ে ভবিষ্যতের আর একটি ভ্রম সৃষ্টি করেন, তখন ভ্রমটি এতটাই সম্পূর্ণ হয়ে যায় যে জীবনের অভিজ্ঞতায় বাস্তবের আর কোন স্থান থাকে না।

পরম স্থিরতায় কোন অতীত নেই। আবার পরম গতিতেও কোন অতীত নেই। সৃষ্টি ও সৃষ্টির উৎসে পৌঁছোবার জন্য এই দুটি মৌলিক পথের খোঁজ শিব দিয়েছেন। তাই তাকে ক্রমাগত দেখানো হয়েছে হয় উন্মত্ত নর্তক হিসেবে অথবা তপস্বী হিসেবে যিনি একেবারে স্থির।

সতীর সাথে শিবের বিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র;

যোগিক লোককথায় এরকম বলা হয় যে শিব স্থিরতা থেকে নৃত্যে এবং নৃত্য থেকে স্থিরতার দিকে চলে যেতেন। ত্রিজগতের অন্য সকলে, গন্ধর্ব, যক্ষ এবং দেবতারা, সকলেই আশ্চর্য ও মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাঁকে দেখতে লাগলেন। তারা এই চরম গতি এবং পরম স্তব্ধতা উপভোগ করতেন কিন্তু তাঁর অভিজ্ঞতার প্রকৃতি সম্পর্কে তাদের কোনও ধারণা ছিল না। তাঁরা এর স্বাদ পেতে চাইলেন।

তিনি যে অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন সেটাকে তাঁরা কীভাবে আয়ত্ত করতে পারেন, তার জন্য পরিকল্পনা করতে শুরু করলেন।

মন্ত্রমুগ্ধ থেকে তারা আগ্রহী হলেন। আগ্রহ থেকে তাঁরা শিবের আরও কিছুটা কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করলেন, তবে তাঁরা তাঁর নৃত্য এবং তার স্থিরতার তীব্রতা সহ্য করতে পারলেন না। 

শিব যে অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁরা সেটা আয়ত্ত করার জন্য পরিকল্পনা এবং প্রয়োগ করতে শুরু করলেন। তাঁরা একটি সম্মেলন ডাকলেন, যা ক্রমশ একটি ষড়যন্ত্রে পরিণত হলো। তাঁরা ঠিক করলেন, কোনওভাবে শিবের বিয়ে দিতে হবে। “আমাদের পক্ষ থেকে একজন দরকার যিনি আমাদের বলতে পারবেন যে এই ধরনের পরম অভিজ্ঞতার ভিত্তি কী, এইরকম উচ্ছ্বাস এবং একই সাথে মৃত্যুর মতো স্থিরতা । তিনি দুটোই উপভোগ করছেন বলে মনে হচ্ছে। আমাদের একজন ভেতরের লোক দরকার"।

অনেক কিছুই ঘটেছিল - আমি ষড়যন্ত্রের পুরো বিবরণে যাব না, কারণ এটি একটি বিশাল ষড়যন্ত্র। আপনি যদি শিবের অভ্যন্তরীণ অবস্থার কথা জানতে চান, তবে এর জন্য একটি অসাধারণ ষড়যন্ত্র দরকার, যা তারা পরিকল্পনা, প্রয়োগ এবং সম্পাদিত করেছিলেন। সুতরাং তাঁরা শিবকে সতীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করলেন। . তিনি আত্মসমর্পণ করলেন এবং সম্পূর্ণভাবে মগ্ন হয়ে তাঁর প্রতি গভীরভাবে অনুরক্ত হলেন।

সতীর পিতা শিবকে অপমান করেছিলেন।;

তিনি সতীকে তাঁর জীবনের অংশ করে নিয়েছিলেন, কিন্তু সতীর পিতা দক্ষ তার জামাই শিবকে ঘৃণা করতেন। কারণ তাঁর জামাতা শিব রাজা নন, তিনি ভাল পোষাক পরেন না, ছাইভস্ম মেখে থাকেন, তিনি মানুষের মাথার খুলিতে করে খাবার খান, তাঁর সমস্ত সঙ্গীরা হলেন সমস্ত ধরণের দানব এবং প্রেত এবং অদ্ভুত প্রাণী। তিনি সর্বদা হয় ধ্যানমগ্ন, নয়তো নেশায় মত্ত । হয় সে চোখ বন্ধ করে আছে বা সে পাগলের মত নাচছে। এরকম জামাই নিয়ে গর্বিত হওয়ার মতো বা সঙ্গে নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর কিছু নেই।

shiva-shakti-how-54-shakti-sthalas-were-born-sati-offering-berries-to-shiva

কিছু সময় পরে, দক্ষ একটি মহান যঞ্জানুষ্ঠান করতে চেয়েছিলেন যার জন্য তিনি প্রত্যেক রাজা, দেবতা এবং যক্ষদের আমন্ত্রণ করেছিলেন। তবে তিনি শিবকে আমন্ত্রণ করেননি। শিব এবং সতী জঙ্গলে বসে ছিলেন এবং অনুরাগ বসত সতী তাকে বন থেকে আনা ফল খাওয়ানোর চেষ্টা করছিলেন, কারণ তারা এসবই খেতেন। তাদের কোনও বাড়ি বা রান্নার জন্য সঠিক ব্যবস্থা ছিল না, তাই তারা কেবল ফল এবং যা কিছু নৈবেদ্য হিসাবে আসত তাই খেতেন।

তখন তিনি দেখতে পেলেন প্রচুর লোকজন ও যান চলাচল , সেরা রথ, সমস্ত রাজা, দেবদেবীরা পুরোপুরি সজ্জিত হয়ে কোথাও যাচ্ছেন। তখন তিনি শিবকে জিজ্ঞাসা করলেন, “এটা কি? সবাই কোথায় চলেছে? ” শিব বললেন, “তাতে কিছু যায় আসে না। তারা যেখানে যাচ্ছে সেখানে আমাদের যাওয়ার কোন দরকার নেই। ” কিন্তু তিনি খুব উৎসুক হয়ে উঠলেন। “সবাই কোথায় যাচ্ছে? তারা কি সুন্দর পোষাক পরেছে দেখুন। কি হচ্ছে?" তিনি বললেন, “চিন্তা করনা, আমরা এখানে ভাল আছি। তুমি কি সুখী নও? না, তুমি আনন্দে আছো, ওদের নিয়ে চিন্তা করনা। ” কারণ তিনি জানেন যে কী ঘটছে।

কিন্তু তাঁর কৌতূহল এবং স্ত্রীসুলভ উত্তেজনা তাকে কেবল সেখানে বসে গাছের ফল উপভোগ করতে দিল না। তিনি উঠে গেলেন এবং একটি রথ থামিয়ে তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমরা সবাই কোথায় যাচ্ছ?” তারা বলল, “তুমি কি জান না? তোমার পিতা এক বিশাল যজ্ঞের আয়োজন করেছেন - একটি আহুতি - এবং তিনি আমাদের সকলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তুমি কি আসছ না? ” যখন তিনি জানতে পারলেন যে তাঁকে ও তাঁর স্বামীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি, তখন তিনি সম্পূর্ণরূপে আত্মহারা হয়ে গেলেন। তিনি অপমানিত বোধ করলেন। তিনি ভেবেছিলেন এটি শিবের জন্য অন্যায় । তিনি শিবকে বললেন, “আমি বাবার কাছে যাচ্ছি। কেন তিনি এই কাজ করলেন? " শিব বললেন, " আমার এতে কিচ্ছু যায় আসে না।‌‌ তুমি কেন উত্তেজিত হচ্ছো? আমরা এখানে ভাল আছি। আমরা কেন তাঁর যজ্ঞে যাব? ”

কিন্তু আমন্ত্রিত না হওয়ার এই অপমান তাকে খুবই আঘাত দিয়েছিল। তিনি বললেন, “না, আমাকে যেতেই হবে। নিশ্চয়ই কোন ভুল হয়েছে। হয়ত আমন্ত্রণটি হারিয়ে গেছে। এটা হতে পারে না, তারা কীভাবে আপনাকে এবং আমাকে আমন্ত্রণ না জানাতে পারে ? আমি তার মেয়ে। কিছু ভুল হয়ে থাকবে। আমি নিশ্চিত তিনি এই কাজ করবেন না। আমার বাবা সেরকম নন। ” শিব বললেন, “যেও না।” কিন্তু তিনি শুনলেন না এবং তিনি গেলেন।

সতী যজ্ঞের আগুনে নিজেকে দগ্ধ করলেন

তিনি যখন অনুষ্ঠানে গেলেন, তিনি তাঁর সমস্ত বোন এবং সকল গন্যমান্য ব্যক্তিদের সেখানে দেখলেন, তারা পুরোপুরি সুসজ্জিত হয়ে এসেছিলেন। তবে তিনি তার সাধারণ পোশাক পরেই এসেছিলেন, যেটা পরে তিনি পাহাড়ে থাকতেন। তাই লোকেরা তাকে উপহাস করলো এবং হাসাহাসি করতে লাগল। তারা জিজ্ঞাসা করল, “তোমার ছাই -ভস্ম মাখা স্বামী কোথায় ? সেই লোকটি কোথায় যে না-. জানে কত দিন ধরে চুল আচড়াই নি?"

যঞ্জের আগুন জ্বলছিল। তিনি এতে হেঁটে প্রবেশ করলেন এবং নিজেকে দগ্ধ করলেন ।

তিনি সে সব উপেক্ষা করে বাবার সাথে দেখা করতে গেলেন, তখনও এই ভাবছেন যে এরমধ্যে অবশ্যই কিছু ভুল থাকতে পারে। তিনি যখন তাকে খুঁজে পেলেন, দক্ষ খুব রেগে গেলেন। কিন্তু তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, "আপনি কীভাবে শিবকে আমন্ত্রণ জানাননি ?" তারপরে দক্ষ শিবের প্রতি সব সম্ভাব্য উপায়ে কটুক্তি করলেন এবং বললেন, “আমি কখনই তাকে আমার বাড়িতে পা রাখতে দেব না।"

তিনি অত্যন্ত ভেঙে পড়লেন। হোমাগ্নির আগুন জ্বলছিল। তিনি এতে হেঁটে প্রবেশ করে নিজেকে দগ্ধ করলেন । নন্দী এবং আরও কয়েকজন যারা তাঁর অনুসরণ করেছিলেন , তারা যখন এটা ঘটতে দেখল, তখন তারা এতটাই ভয় পেয়ে গেল যে তারা দৌড়ে শিবের কাছে গিয়ে তাঁকে জানাল যে সতী হোমাগ্নির আগুনে নিজেকে দগ্ধ করেছেন, কারণ দক্ষ তাঁকে অপমান করেছিলেন।

শিব বীরভদ্রকে সৃষ্টি করলেন;

শিব কিছুক্ষন স্থির হয়ে বসে থাকলেন। তারপর তিনি আগুনে পরিণত হন। তিনি প্রচন্ড ক্রোধে উঠে পড়লেন। শিব তাঁর জটা থেকে একগোছা চুল ছিঁড়ে পাশের পাথরের উপরে আছড়ে মারলেন এবং এক শক্তিশালী সত্তার জন্ম দিলেন যার নাম বীরভদ্র। তিনি বীরভদ্রকে বলেছিলেন, “যাও এই যজ্ঞ নষ্ট করে দাও। কাউকে ছাড়বে না, এমন কি দক্ষকেও নয়। যারা যারা এই যজ্ঞের সাথে জড়িত, তাদের সকলকে ধ্বংস কর ” বীরভদ্র পুরো ক্রোধে যজ্ঞটিকে নষ্ট করে, প্রত্যেককেই হত্যা করলেন এবং সর্বোপরি দক্ষকেও বধ করলেন ।

শক্তিপীঠ গুলির জন্ম 

তাঁর দেহের প্রতিটি অঙ্গ পড়ে যাওয়ার সাথে সাথে সেখানে শক্তির একটি গুণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এগুলিই ভারতের প্রধান দেবী মন্দির।

তখন শিব এসে, সতীর অর্ধদগ্ধ দেহটি তুলে নিলেন এবং তাঁর দুঃখ বর্ণনাতীত ছিল। তিনি তাকে তার কাঁধে নিয়ে হাঁটতে শুরু করলেন । তিনি প্রচন্ড ক্রোধ ও শোকের মধ্যে দিয়ে চললেন। তিনি দেহটিকে নীচে রাখবেন না, আগুনেও সেটা দগ্ধ করবেন না বা তাকে মাটি চাপাও দেবেন না। তিনি হাঁটতে থাকলেন। তিনি চলতে চলতে সতীর দেহটি পচতে শুরু করল এবং এটি পচার সাথে সাথে অনেকগুলি টুকরোতে পরিণত হল এবং নিচে ৫৪ টি বিভিন্ন জায়গায় পড়ল। এই ৫৪ টি স্থান ভারতে শক্তি স্থল হিসাবে পরিচিত। তাঁর দেহের প্রতিটি অঙ্গ পড়ে যাওয়ার সাথে সাথে সেখানে শক্তির এক একটি গুণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই সব গুলিই হল ভারতের প্রধান দেবী মন্দির। 

তাদের মধ্যে তিনটি গোপনীয় বলে মনে করা হয় এবং সেগুলি কোথায় রয়েছে তা কয়েক জন ব্যতীত কেউ জানে না, তবে ৫১টি জনগণের কাছে পরিচিত।

Editor’s Note: Celebrate Mahashivratri at the Isha Yoga Center with explosive guided meditations accompanied by dance and music, nightlong satsang with Sadhguru, musical performances by eminent artists. Bask in the Grace of Shiva, The AdiYogi!Visit the Mahashivratri webpage for details on the many ways you can participate.