আলেকজান্ডার (চরম মূর্খ) যখন দিওজেনেসের(এক পরম আনন্দময় ভিখারী) সাথে সাক্ষাৎ করলেন।
সদগুরু একটি গল্প বলছেন যেখানে দিওজেনেসের সাথে সাক্ষাৎ হওয়াতে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট ইডিয়েটের / চরম মূর্খ আলেকজান্ডারের জীবন পাল্টে গেছিল। দিওগেনেস ছিলেন একজন পরম আনন্দময় উলঙ্গ ভিখারী, যিনি গ্রীসের এক নদীর তীরে বাস করতেন।
একদিন তিনি নদীর তীরে খুব উৎফুল্ল হয়ে শুয়ে ছিলেন এবং তখনই আলেকজান্ডার ওই রাস্তা দিয়ে আসছিলেন। আলেকজান্ডার কে বলা হয় আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট। আমার ইচ্ছা হয় যে তাঁর তৃতীয় একটি নামকরণ করি – আলেকজেন্ডার দ্যা গ্রেট ইডিয়ট, কারণ তিনি হলেন সেই জন যিনি জীবন অপচয় করেছিলেন। তিনি নিজের জীবন নষ্ট করেছিলেন আর অন্যদেরও। ১৬ বছর বয়স থেকে তিনি যুদ্ধ করতে শুরু করেন। আরো ১৬ বছর তিনি একটানা যুদ্ধ চালিয়ে যান, হাজার হাজার লোক তার হাতে মারা যায়। ৩২ বছর বয়সে তিনি মারা যান, খুব করুণ অবস্থায় কারণ তিনি মাত্র অর্ধেক পৃথিবী জয় করতে পেরেছিলেন, বাকি অর্ধেক তখনো বাদ থেকে গেছিল। একমাত্র নিরেট মূর্খই পারে ১৬ বছর এভাবে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে।
আলেকজান্ডার এলেন তাঁর বিরাট ঘোড়ায় চড়ে, সম্রাটের পোশাক পরে, তাচ্ছিল্য সহকারে তাকালেন দিওজেনেসের দিকে, যে,সেতাঁর চোখ বন্ধ করে বালির উপরে মহানন্দে গড়াগড়ি খাচ্ছিল। আলেকজেন্ডার গলা চড়িয়ে প্রায় চিৎকার করে তাকে বললেন, "জানোয়ার কোথাকার। এক টুকরো কাপড়ও নেই তোমার গায়ে। পশুর মত তুমি। এত মহানন্দে থাকার মত কি ব্যাপার হয়েছে? দিওজেনেস তার দিকে চোখ তুলে তাকালেন তারপর এমন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলেন যা কোনওদিন কেউ কোনও সম্রাটকে করার সাহস পায়নি। জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি আমার মত হতে চান? এটা আলেকজান্ডারের ওপর এতটাই প্রভাব ফেলল, যে তিনি বললেন,"হ্যাঁ, আমার কি করা উচিত?"দিওজেনেস বললেন, "ওই বোকা ঘোড়াটার থেকে নেমে আসুন, সম্রাটের পোশাক খুলে নদীতে ছুড়ে ফেলে দিন। আমাদের দুজনের জন্য এই নদীর তীরে যথেষ্ট জায়গা আছে। আমি পুরোটা দখল করে রাখিনি। আপনি এখানে শুয়ে মহানান্দে থাকতে পারেন। কে আটকাচ্ছে আপনাকে? আলেকজান্ডার বললেন, "হ্যাঁ, আমি সত্যই তোমার মত হতে চাই, কিন্তূ তুমি যা করছো, তা করার সাহস আমার নেই।"
ইতিহাস বই সব সময় আপনাকে বলে এসেছে আলেকজান্ডার মানে সাহস। তবুও আলেকজান্ডার স্বীকার করেছেন যে দিওজেনেস যা করছে তা করার মতো সাহস ওনার নেই। তো, আলেকজেন্ডার উত্তর দিলেন "পরের জন্মে আমি আপনার সাথে যোগ দেব। "তিনি এটা তারপরের জন্ম পর্যন্ত মুলতবি রাখলেন,কেজানে তার পরের জন্মে, হয়তো তিনি একটা আরশোলা হয়ে এলেন। আপনি এই মানুষরূপে এসেছেন বিশেষ কিছু সম্ভবনা নিয়ে। আপনি যদি সেটা নষ্ট করে ভাবেন যে সেটা পরের জন্মে করে ফেলবেন, পরের জন্মে কি হতে চলেছে তা কে জানে।
এক মুহূর্তের জন্য আলেকজান্ডার কাছাকাছি এসেছিলেন। কিন্তু তারপর তিনি তা মুলতবি রাখলেন। এই ঘটনার ফলে এক বিশেষ ধরনের বৈরাগ্য তার ওপরে ছেয়ে যায়। তিনি তাঁর জীবনের শেষে, যুদ্ধের প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে ফেলেন, কিন্তু তবুও অভ্যাসবশত যুদ্ধ করতেন। আকর্ষণ হারিয়ে ফেলাতে , তিনি শক্তি হারিয়ে ফেললেন তারপর মারা গেলেন। মৃত্যুর ঠিক আগে, তিনি তার লোকজনকে একটা অদ্ভুত নির্দেশ দিয়ে গেলেন। তিনি বলেছিলেন, "আমার জন্য যখন কফিন তৈরী করা হবে, দুপাশে অবশ্যই যেন দুটো গর্ত করা হয় যাতে হাতদুটো কফিনের বাইরে বেরিয়ে থাকে, শুধু তোমাদের প্রত্যেকের দেখবার জন্য –যে এমনকি আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেটও খালি হাতে চলে গেলেন।"এই একটা বিচক্ষণের মত কাজ করেছিলেন তিনি তাঁর জীবনে।
সুবুদ্ধিপূর্ণ একটা কাজ করার জন্য নিজের জীবনের শেষ মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করবেন না। সেটা হয়তো অতিরিক্ত দেরি হয়ে যেতে পারে। এই হল সেই সময় যখন সবকিছু আপনার হাতের মুঠোয় রয়েছে। যখন সমস্ত ক্ষমতা আপনার হাতের মধ্যে এবং যখন জীবনে সুসময়, তখনই জীবনের প্রতি যতটা সম্ভব গভীর দৃষ্টিপাত করবার সময়; যখন দুঃসময়, তখন নয়। বেশিরভাগ মানুষ তাদের জীবনের প্রতি কিছুটা গভীর ভাবে দৃষ্টিপাত করেন যখন সবকিছু বিপর্যস্ত অথবা দুঃখজনক কিছু ঘটে যায় তাদের জীবনে। যখন সবকিছু বিপর্যস্ত, হয়তো আপনি তখন ইচ্ছুক হবেন কিন্তু তখন হয়তো আপনার প্রয়োজনীয় শক্তি এবং মনোযোগের ক্ষমতা থাকবে না। যখন সবকিছু ঠিক আছে তখন অবশ্যই জীবনকে আপনার যতদূর সম্ভব গভীরত্তে দেখা দরকার।
Editor’s Note: Here’s another fascinating story from the life and times of Alexander the Great Idiot.