ভারতবর্ষে জলের আধ্যাত্মিক তাৎপর্য
ভারতে জলের শোচণীয় অবস্থার কারণে গঙ্গা নদীও শুকিয়ে যেতে পারে - যা সমগ্র জাতির অন্তরাত্মা এবং মনস্তত্বকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে।
একসময় যেটা মাটি ছিল সেটাই খাবার হয়ে গেলো। সেই একই জিনিষ যেটা খাদ্য ছিল সেটাই আবার মানুষে পরিণত হলো। যেটা খাবার ছিল সেটা আবার মাটি হয়ে গেলো। এটা ঠিক কি ঘটে চলেছে? মাটি কিভাবে ফল, ফুল, বা অন্য যা কিছু হয়ে উঠছে? এটা শুধু ওই বীজের মধ্যে যে স্মৃতি আছে তার ফল। একজন কেমন করে তার বাবা বা মায়ের মতো দেখতে হয় ? এটা শুধু সেই একটা কোষের মধ্যে যে স্মৃতি আছে তারই ফল। উপকরণ সেই একই - ওই পাঁচটা মৌলিক উপাদান। কিন্তু এটা শুধু সেই অন্তর্নিহিত স্মৃতি- যা মাটিকে খাবার, আর খাবারকে মানুষে পরিণত করছে।
শুধুমাত্র একটা চিন্তা দিয়ে, একটা আবেগের মাধ্যমে বা আপনার প্রানশক্তিকে বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রণ করে আপনি এই স্মৃতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করতে পারেন; এতটাই যে এগুলোর সমস্তকিছু পাল্টে যেতে পারে।
তীর্থের বিজ্ঞান
আজকাল আমাদের কাছে যথেষ্ট বৈজ্ঞানিক প্রমাণ রয়েছে, যা দেখায় যে একটা চিন্তা অথবা আবেগ দিয়ে আপনি জলের আনবিক গঠন বদলে দিতে পারেন, কোনো রকম রাসায়নিক পরিবর্তন ছাড়াই। কি ধরনের স্মৃতি বহন করছে তার উপর নির্ভর করে সেই একই জল- কোন রকম রাসায়নিক পরিবর্তন ছাড়াই হয়ে উঠতে পারে বিষ কিংবা অমৃত।
আমাদের ঠাকুরমারা বলতেন- যে কোন লোকের হাত থেকে জল বা খাবার না খেতে; যারা আমাদের ভালোবাসেন, স্নেহ করেন সব সময় তাদের হাত থেকেই খাওয়া উচিৎ। এই কারনেই ভারতের রক্ষনশীল পরিবারগুলি ঘরে একটি চমৎকার পিতলের পাত্র রাখেন, যেটিকে নিয়মিত পরিস্কার করে পুজো করেন এবং তার পরেই তাতে খাবার জল রাখেন। মন্দিরগুলিতে আপনাকে এক ফোঁটা জল দেওয়া হয়, যেটা পাওয়ার জন্য কোটিপতিরাও ব্যাকুল হয়ে থাকেন কারণ এ জল কোথাও কিনতে পাওয়া যায় না। এই জল দেবত্বের স্মৃতি বহন করছে। এটাই হল তীর্থ। মানুষ এই জল পান করতে চান যাতে করে এটা তাদের অন্তরে দেবত্বের স্মরণ ঘটায়।
আপনি ভাবেন এ সব কুসংস্কার, কিন্তু এখন বিজ্ঞানীরাও একই কথা বলছেন। বিজ্ঞানীরা দেখছেন যে প্রচণ্ড জোরে পাম্প করে পাঠানো জল, লেড অথবা প্লাস্টিক পাইপের অতগুলো বাঁক পেরিয়ে আপনার বাড়ি পর্যন্ত আসতে আসতে জলের আনবিক গঠন পাল্টে যায়। এতগুলো বাঁক এবং ঘূর্ননের ফলে জলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। কাজেই জলের স্মৃতিশক্তি রয়েছে এবং আপনার দেহের - আপনার শারীরিক অস্তিত্বের ৭২ শতাংশ হল জল। আপনি একটি লম্বা জলের বোতল। কাজেই আপনি যদি একটি পাত্রের জলকে মনোরম করতে পারেন, আপনার শরীরের অভ্যন্তরীণ জলকে আপনি আনন্দপূর্ণ করতে পারেন না? এটাই যোগের বিজ্ঞান। 'ভূত' শব্দের অর্থ উপাদান, এবং 'ভূত- শুদ্ধির' অর্থ দেহতন্ত্রে এই পাঁচটি উপাদানের শোধন। ভূত-শুদ্ধি হল যোগের একেবারে গোড়ার কথা। যোগের প্রতিটি ক্ষেত্র যা আপনি অনুশীলন করেন, তা ভূত-শুদ্ধি প্রক্রিয়ারই একটি ছোট অংশ।
ভারতে জলের শোচনীয় পরিস্থিতি
আপনার বেঁচে থাকার জন্য জল একটি অত্যাবশ্যক উপাদান, কিন্তু আজকাল ভারত যেরকম জল সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে তা সত্যিই ভয়ানক। ভারতে ১৯৪৭ সালে মাথাপিছু যে পরিমাণ জল উপলব্ধ ছিল, আজকের দিনে তার মাত্র ১৮ শতাংশ আছে। বর্তমানে ভারতের অনেক শহরে মানুষ তিন দিনে মাত্র একদিন স্নান করে। ভারতের সংস্কৃতি এমন যে যাই হোক না কেন, আপনি খাবার না খেলেও স্নানটা ঠিক করবেন। আজকাল লোকজন স্নান করা বাদ দিচ্ছে। এটা উন্নতি নয়; এটি ভালো থাকাও নয়। হয়তো এমন পরিস্থিতি আসতে চলেছে যখন আপনি একদিন ছাড়া জলপান করবেন। একটি জাতি হিসেবে, আমরা যথেষ্ট পরিমাণে সঙ্ঘবদ্ধ নই অথবা আমাদের এমন সংস্থান নেই যে আমরা লক্ষ লক্ষ লিটার জল এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাব এবং এটা নিশ্চিত করব যে মানুষের পান করার মত জল আছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ জলের অভাবে মারা যেতে পারেন।
কয়েক বছর আগে আমি যখন হিমালয়ে ট্রেকিং করছিলাম, গঙ্গার উপর নির্মিত তেহরি বাঁধ- এর উপর গিয়েছিলাম। আমি শুনেছিলাম, গঙ্গার জলস্তর এত নিচে নেমে গেছে যে মাত্র ২১ দিন চলার মত জল আছে। যদি ২১ দিনের পথে মধ্যে বৃষ্টি না আসে, সেই বছর গঙ্গার কোন নিম্নপ্রবাহ থাকবে না। গঙ্গার প্রবাহ বন্ধ হলে ভারতীয় জনমানসে তার ক্ষতিকর প্রভাব আপনি কল্পনা করতে পারেন? গঙ্গা আমাদের জন্য শুধুমাত্র একটি নদী নয়। কিছু আধ্যাত্মিক গোষ্ঠী সক্রিয়ভাবে গঙ্গা সংরক্ষণে ব্রতী, এবং কেমন করে এটা সঠিকভাবে পরিচালনা করা যায় সে ব্যাপারে তারা খুবই সচেতন। আবেগের দিক থেকে ভারতীয়দের কাছে গঙ্গা একটি মহান শক্তির প্রতীক। শহুরে লোকজন এটা নাও ভাবতে পারেন কিন্তু একজন সাধারন ভারতীয়ের কাছে গঙ্গা জীবনের থেকেও অনেক বেশি- এটা কোন সামান্য নদী নয়, অনেক বড় কিছু। আমাদের কাছে এটা জীবনের প্রতীক।
যদি বৃষ্টি মাত্র দুই বা তিন সপ্তাহ দেরিতে আসে, সেটা যেকোন বছর ঘটতে পারে, তখন আর গঙ্গার নিম্নপ্রবাহ থাকবে না; আমরা এরকম একটি অবস্থায় আছি। সুতরাং ব্যাপার এটাই; হয় আমরা সচেতনভাবে আমাদের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করব অথবা প্রকৃতি নিষ্ঠুর ভাবে আমাদের সাথে এটা করবে। আমাদের আর কোন বিকল্প নেই। আমার এটা নীতি নয় যে আমরা আমাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি করব না। ব্যাপার এটাই- আমরা সজ্ঞানে এটা নিয়ন্ত্রণ করব, অথবা প্রকৃতি নির্মমভাবে সেটা করবে। আমরা যদি মানুষ হই, আমাদের সচেতনভাবে এটা নিয়ন্ত্রণ করা উচিত, এবং আমাদের সাথে যাতে এসব বিপর্যয় না ঘটে- সেটা দেখা উচিত।
Editor’s note: Cauvery Calling is a campaign to support farmers in planting 242 crore trees and save Cauvery. This will increase water retention in the basin, while improving the income of farmers five-fold. Contribute to plant trees. Visit: CauveryCalling.Org or call 80009 80009. #CauveryCalling
A version of this article was originally published on Speaking Tree.