মহাভারত পর্ব ১০: যদুবংশের কথা এবং কৃষ্ণের জন্ম
মহাভারতের এই পর্বে সদগুরু পুরুর ভাই যদুর বংশধরদের কথা বলছেন। এই যদুই যদুবংশের স্থাপনা করেন- যে বংশে কৃষ্ণের জন্ম হয়েছিলো।
কয়েক প্রজন্ম পরে এই বংশে বসুদেবের জন্ম হয়। পৃথা আর শ্রুতদেবী ছিলেন বসুদেবের দুই বোন। পৃথাকে তাঁর কাকা কুন্তীভোজের কাছে দত্তক দেওয়া হয়- যার কোনো সন্তান ছিল না। এই মেয়েটিকে তিনি এতবেশি ভালোবাসতেন যে তিনি তাঁকে নিজের নাম প্রদান করেন। পৃথা বলে না ডেকে, তিনি তাঁকে কুন্তী বলে ডাকতেন।
বসুদেবের দুই স্ত্রী ছিলেন- দেবকী ও রোহিণী। দেবকীর এক ভাই ছিল, যার নাম ছিল কংস। এক ধর্ষণের পরিণামে কংসের জন্ম হয়। অন্যত্র, সেযুগের ধর্ম ও ঐতিহ্য ছিল যে কিভাবে একটি শিশুর জন্ম হলো তা কোনো ব্যাপার নয়, শিশুটির জন্মদাত্রী মা যদি নির্দিষ্ট কোনো গোষ্ঠীভুক্ত হয়ে থাকেন, শিশুটিও সেই গোষ্ঠীর বৈধ অংশ হয়ে উঠবে। কিন্তু যাদবরা কংসকে প্রত্যাখ্যান করলেন। তাঁরা কংসকে অবৈধ সন্তান বলে ডাকতে লাগলেন। একজন মহান যোদ্ধা হওয়া সত্ত্বেও কংসের চালচলন আপত্তিকর ও কুরুচিকর হওয়ায় যাদবরা তাঁকে নিয়ন্ত্রক পরিষদে অন্তর্ভুক্ত করতে অস্বীকার করলেন। তবে তিনি পূর্বপ্রদেশের আরেক শক্তিশালী রাজা জরাসন্ধের সাথে মিত্রতা স্থাপন করেন। জরাসন্ধের সহযোগিতায় কংস নিজের চারপাশে দলভারী করলেন আর যদুবংশে এই প্রথমবার তিনি পরিষদ ভেঙে দিলেন এবং রাজমুকুট ধারণ করে নিজেকে রাজা বলে ঘোষণা করলেন।
একবার রাজা হওয়ার পর, কংস অবিসংবাদিত ক্ষমতা হয়ে ওঠেন। নিজের অশিষ্ট উপায়ে নানারকম কার্যকলাপ চালাতে থাকেন। মানুষজন অনেক যন্ত্রণা ভোগ করতে থাকে কিন্তু তারা কিছু করতে পারছিলো না, কারণ জরাসন্ধ খুবই দোর্দণ্ড প্রতাপশালী ছিলেন। কংসের দৌরাত্ম্য যখন চলতেই থাকলো, তখন তিনি অভিশাপ পান যে দেবকীর অষ্টম সন্তানের হাতে তিনি মারা পড়বেন। তাই দেবকী ও বসুদেবকে তিনি কারাগারে বন্দী করে রাখলেন আর যখনই একটা করে সন্তানের জন্ম হলো, কংস তার পাদুটো ধরে মেঝেতে আছাড় দিয়ে মেরে ফেলতেন।
সপ্তম সন্তানটি যখন জন্মালো, বসুদেব তাকে গোপনে বাইরে বার করে নিয়ে যেতে পেরেছিলেন এবং অন্য জায়গা থেকে একটি মৃত জন্মানো শিশুকে খুঁজে এনে ভেতরে রেখেছিলেন। এই সপ্তম সন্তানটিকে গোপনে যমুনা নদীর ওপারে গোকুলে বসুদেবের আরেক স্ত্রী রোহিণীর কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। এই শিশুটির নাম ছিল বলরাম।
এরপর যখন অষ্টম সন্তান জন্মানোর সময় হলো, তাঁরা কয়েকজন ঐন্দ্রজালিক ব্যক্তি নিযুক্ত করে কারাগারে পাহারারত সৈন্যদের ঘুম পাড়িয়ে রাখলেন। বসুদেব সদ্যোজাত শিশুটিকে নদীর ওপারে গোকুলে নিয়ে চলে গেলেন। সেখানে নন্দের পত্নী যশোদা একটি কন্যাসন্তান প্রসব করেছিলেন। বসুদেব এই সদ্যোজাত পুত্রসন্তানটিকে সেখানে রেখে কন্যাসন্তানটিকে নিয়ে চলে আসেন।
পরের দিন সকালে যখন কংস এলেন, দেবকী মিনতি করেন, "এতো কেবল একটি শিশু কন্যা। এ তো আর পুত্র নয় যে বড়ো হয়ে তোমাকে বধ করবে, এ শিশু কন্যা। বিবাহের পর এতো চলে যাবে। দয়া করে একে প্রাণে মেরো না।" কংস উত্তর দিলেন, "তা হবে না, কেন ঝুঁকি নেবো?" তিনি শিশুটিকে ওঠালেন, বনবন করে ঘুরিয়ে ওপরে ছুঁড়ে দিলেন।
কিন্তু মেয়েটি নীচে পড়লো না। সে অন্য একটি রূপ ধারণ করে বললো, "তোমাকে যে বধ করবে, সে ওখানেই আছে। আমি সেজন নই।" কংস আতঙ্কিত হয়ে পড়লেন। তিনি তাঁর সৈন্যদের নির্দেশ দিয়ে পাঠালেন যে, এই অঞ্চলে তিন মাস বয়স পর্যন্ত সব শিশুদের যেন হত্যা করা হয়। সৈন্যরা বেরিয়ে পড়লো, তিন মাস বয়স পর্যন্ত সব শিশুকে হত্যা করতে লাগলো। কয়েক মাস বয়সের কৃষ্ণ কিন্তু দিব্যি বেড়ে উঠছিলেন।
সুতরাং যদুবংশে, বসুদেবের দুই স্ত্রী, দেবকী ও রোহিণী। দেবকীর একমাত্র জীবিত সন্তান কৃষ্ণ। আর রোহিণীর হলো বলরাম ও সুভদ্রা। বসুদেবের বোনেদের মধ্যে শ্রুতদেবী বিবাহ করেন দমঘোষকে। আরেক বোন পৃথা বা কুন্তী বিবাহ করেন কুরুবংশের পাণ্ডুকে।
চলবে...
Editor’s Note: A version of this article was originally published in Isha Forest Flower August 2015. Download as PDF on a “name your price, no minimum” basis or subscribe to the print version.