নদী সংযুক্তিকরণের পরিকল্পনা ভারতের জল সমস্যার সমাধান করবে না
ভারতের কিছু অংশে খরা আবার অন্যান্য অংশে বন্যা, এই অবস্থায় নদী সংযুক্তিকরনই একমাত্র সমাধান বলে মনে হয়। সদগুরু ব্যাখ্যা করছেন কিভাবে এটি ভারতের নদীগুলির জন্য বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
![নদী সংযুক্তিকরণের পরিকল্পনা ভারতের জল সমস্যার সমাধান করবে না নদী সংযুক্তিকরণের পরিকল্পনা ভারতের জল সমস্যার সমাধান করবে না](https://static.sadhguru.org/d/46272/1633503584-1633503582878.png)
![proposed inter basin water transfer map](https://images.sadhguru.org/sites/default/files/inline-images/proposed-inter-basin-water-transfer-map.png)
নদীতে অতিরিক্ত জল থাকা বা নদীতে জলের ঘাটতি থাকার ধারণাটা গ্রীষ্মপ্রধান দেশের নদীর জন্য সঠিক নয়, কারণ এই মুহুর্তে, যখনই বৃষ্টি আসে, নদীগুলোতে বন্যা এসে যায়। আবার বৃষ্টি থেমে গেলে, নদীগুলোতে জলই থাকে না। স্বল্প মেয়াদে তাত্ক্ষণিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য চেক ড্যাম এবং বৃষ্টির জল ধরার জলাশয় নির্মাণ যথাযথ । কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের ক্ষেত্রে, আমাদের নিশ্চিত করা দরকার যাতে নদীর জল দ্রুত শেষ না হয়। এর জন্য, জমিতে প্রকৃতিজাত গাছপালা থাকতেই হবে - এছাড়া আর অন্য কোনও উপায়ই নেই।
নদীর আন্তঃসংযোগের অর্থনৈতিক ব্যয়ও বিশাল। আর তা ছাড়াও যদি আমরা এক নদী থেকে অন্য নদীতে জল পরিবহনের জন্য কয়েক হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ খাল তৈরি করতে যাই, এ দেশে যেখানে তাপমাত্রা গড়ে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের অধিক, সেখানে বেশ ভালো পরিমান জল বাষ্পীভূত হয়ে যাবে। তাছাড়া, মাটি তৃষ্ণার্ত। আপনি যেভাবেই খাল তৈরি করুন না কেন, কোথাও না কোথাও ছিদ্র থেকেই যাবে এবং তৃষ্ণার্ত মাটি জল শুষে নেবে।
সমস্যাটি হল, লোকজন সেখানে চাষাবাস করতে চায় যেখানে জল নেই। শুষ্ক জমিতে অধিক জলের ফসল ফলানোর চেষ্টা করার কোন যুক্তি নেই। জল বহন করে নিয়ে গিয়ে ধান বা গম উৎপাদনের পরিবর্তে , যেখানে অতিমাত্রায় জল রয়েছে সেখানে ধান ও গম উৎপাদন করে সেই ধান গম আপনি পরিবহন করতে পারেন।
নদীগুলির সাগরে না পৌঁছানোর বিপদ
সর্বোপরি, নদী সংযুক্তি পরিকল্পনার ভিত্তি হল এই যে সমুদ্রে জলের নির্গমন আসলে অপচয় । এই ধারণা পরিত্যাগ করা জরুরী। এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক কারণ নদী থেকে জল সমুদ্রে প্রবাহিত না হতে দিলে আপনি সমগ্র জল এবং বৃষ্টির চক্রটির বিঘ্ন ঘটাচ্ছেন। আপনি কি পরিমাণ বর্ষা পাবেন তা সরাসরি নদীর জল কতটা সমুদ্রের মধ্যে প্রবাহিত হয় তার ওপর নির্ভর করে।
নদীগুলোর সমুদ্রে পৌঁছানো আটকালে তা উপকূল সহ উপকূলবর্তী জমিগুলোতেও প্রভাব ফেলবে। যদি নদীর জল সমুদ্রের মধ্যে প্রবাহিত না হয়,তবে ভূগর্ভস্থ জলে নোনা জলের অনুপ্রবেশ ঘটে। উদাহরণস্বরূপ, গুজরাট, লবনাক্ততার জন্য প্রতি বছর প্রায় 550 বর্গকিলোমিটার জমি হারাচ্ছে। সমুদ্র থেকে ভেতর দিকে ৬০ কিলোমিটার অবধি এই লবণাক্ততা বর্তমান। ভারতে প্রায় 7400 কিলোমিটার উপকূলরেখা রয়েছে। অনুমান করা হয় যে নদীর জল সমুদ্রের মধ্যে প্রবাহিত না হলে সামুদ্রিক জল 100 থেকে 130 কিলোমিটার অবধি জমিতে প্রবেশ করতে পারে। এর অর্থ আপনি ভারতের ভূখণ্ডের এক তৃতীয়াংশ সামুদ্রিক জলে হারাবেন। আপনি এই জায়গাগুলোতে একটাও কিছু উৎপাদন করতে পারবেন না।
এমনটা ইতিমধ্যেই ঘটেছে যে, গুজরাট এবং তামিলনাড়ুর গ্রামগুলি পুরোপুরি খালি করতে হয়েছে কারণ আপনি যেখানেই নলকূপ বসাতে যাবেন সেখানেই সামুদ্রিক জল রয়েছে। মাত্র ২৫ বছর আগে, এখানে পুরোটাই মিষ্টি জল ছিল।
নদীর আন্ত সংযোগের পরিকল্পনা উপকারি হতে পারে , যদি তা খুবই বিবেচনা করে কোনও কোনও জায়গায় বন্যা প্রশমনের জন্য করা যায়। ভারতে, একমাত্র কোসি, মহানাদি এবং ব্রহ্মপুত্র নদীতে ধারাবাহিকভাবে এই ধরনের সমস্যা দেখা যায়। যদি কোন জাগায় এর প্রয়োজনীয়তা থাকে, তাহলে তা বিচার বিবেচনা করে করা উচিত,গোটা দেশজুড়ে নদী সংযুক্তিকরণ কাজে আসবে না। আমরা যদি একটি দীর্ঘস্থায়ী ব্যবস্থা চাই, আমাদের মাটি থেকে জলের নদীতে বয়ে যাওয়ার গতি কমাতে হবে। গাছপালা-ই হল এর একমাত্র উত্তর ।
![caca-blog-banner_0](https://static.sadhguru.org/d/46272/1633503980-1633503978986.jpg)