রাশিফল না আতঙ্ক-ফল?
সদগুরু ব্যাখ্যা করছেন রাশিফল আদৌ কাজ করে কিনা এবং গ্রহগুলো আমাদের জীবনে প্রভাব ফেলে কিনা।
সদগুরু: আজকাল মানুষ যা-ই করতে চাক তার জন্য তারা গ্রহ-নক্ষত্রের দিকে তাকাতে চান। আপনি যদি নিজের বাড়ি থেকে বেরোতে চান, গ্রহগুলিকে নিজেদের সারিবদ্ধ করতে হবে সঠিকভাবে। লোকেরা সঠিক সময়, ভুল সময়, রাহুকাল, গুনকাল এবং অন্য কত কী সবের দিকে তাকিয়ে থাকেন। তারা যদি বিবাহিত হতে চান তবে তারা কোন তৃতীয় ব্যক্তিকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেন, "আমি কি আমার স্ত্রীর সাথে সুখে থাকতে পারব?" আপনি যাকেই বিয়ে করুন না কেন, আপনি কেন তার সাথে ভাল থাকতে পারবেন না? বা যদি তারা এমন কোনও নতুন ধরণের পাগলামো করেন যা আপনি প্রত্যাশা করেন নি তবে আপনি কেন তাদের থেকে সরে আসেন না?
আপনার বুদ্ধি যদি কাজ করে তবে আগামীকাল আপনি কী করবেন এবং আপনি কীভাবে আপনার জীবন কাটাবেন তা কেউ ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে না। একজন বুদ্ধিমান মানুষ আগামীকাল কী করবেন তা কি আপনি ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারবেন? না, কারণ তিনি এমন কিছু করতে পারেন যা এ গ্রহে কখনও ঘটেনি। আপনার সমস্ত ভবিষ্যদ্বাণীগুলি হল ইতিমধ্যে ঘটেছে এমন জিনিসগুলি সম্পর্কে। তিনি এমন কিছু করতে পারেন যা আপনি কখনও কল্পনাও করেননি। যদি কোনও মানুষের জীবনী তার বেঁচে থাকার আগেই লেখা যায় তবে এটি অবশ্যই একটি "হরর-স্কোপ"।
রাশিফল হল গ্রহেরা কীভাবে আপনার জীবনকে প্রভাবিত করছে সেই ব্যাপারে। গ্রহগুলি নির্জীব জিনিস। আপনার ভাগ্যের গতিপথ কি নির্জীব জিনিসগুলোর স্থির করা উচিত নাকি মানব প্রকৃতির উচিত নির্জীব জিনিসগুলোর ভাগ্য স্থির করা? মানুষের প্রকৃতিরই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। যদি গ্রহগুলি আপনার নিয়তির গতিপথ স্থির করে তবে এর অর্থ আপনার মানব প্রকৃতি নির্জীব বস্তুর স্তরেও কাজ করে না। কুকুর এবং বিড়ালরাও তাদের জীবনের উপর গ্রহদের প্রভাব ফেলতে দেয় না। তারা যেভাবে চায় সেভাবে জীবনযাপন করে। কিন্তু দুঃখের বিষয় মানবজীবন নির্জীব বস্তুর দ্বারা প্রভাবিত।
তাহলে কি এসব পুরোটাই ভুয়া? এর কিছু গুরুত্ব আছে তবে স্বাভাবিকভাবেই মানুষ এগুলিকে অতিরঞ্জিত করে দেখেন। পূর্ণিমা এবং অমাবস্যায়, কোনও ব্যক্তির যদি কোনও ধরণের মানসিক অসুস্থতা থাকে তবে সে ওই দিনগুলিতে খানিকটা বেশি ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। কিন্তু আমরা কি সবাই পূর্ণিমা এবং অমাবস্যায় পাগল হয়ে যাই? না, কারণ সেই লোকটির তুলনায় আপনি কিছুটা বেশি স্থিতিশীল এবং নিজের মনে প্রতিষ্ঠিত। সেই ব্যক্তিটি এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না; সামান্য চাঁদের অবস্থান বদলই তাকে পাগল করে দিচ্ছে। এটি সবার মধ্যে ঘটছে, তবে এমন পর্যায়ে নয় যে সেটাই সিদ্ধান্ত নেবে আপনার অবস্থার, কারণ আপনি সেই ব্যক্তির তুলনায় বেশি স্থিতিশীল।
একইভাবে, যদি আপনি নিজের মধ্যে প্রকৃতই স্থিতিশীল হন, তবে গ্রহগুলি যেখানে যেতে চায় যাক, আপনি যেখানে যেতে চান আপনি সেখানেই যাবেন। তা নাহলে, প্রতিটি ছোটখাটো পরিবর্তন আপনাকে প্রভাবিত করবে। আপনি যদি কোন এক দুর্বলতার অবস্থায় থাকেন তবে এইসব জিনিস আপনার জীবনে কিছুটা কাজ করবে কিন্তু আপনি যদি নিজের মধ্যে সুপ্রতিষ্ঠিত হন তবে কোনও গ্রহই আপনার জীবনের গতিপথে প্রভাব ফেলবে না। মানুষের প্রকৃতিরই উচিত আপনার জীবনের গতিপথটি স্থির করা। সৃষ্টির উৎস যা আপনার মধ্যে কাজ করছে, যদি সেটা আপনার ভাগ্যের গতিপথ ঠিক না করে বরং যদি গ্রহ - নির্জীব বস্তুগুলি - আপনার নিয়তির গতিপথ নির্ধারণ করে, তাহলে কিছু সমস্যা আছে। আপনি যদি নিজের মধ্যে একটু বেশি একাগ্র হন তবে এই সমস্ত বিষয় আপনাকে প্রভাবিত করবে না। আপনি সেখানেই যাবেন যেখানে আপনি যেতে চান।
যখন কেউ বলে যে "আমি আধ্যাত্মিক পথে আছি,"এর অর্থ হল এই যে "গ্রহগুলি কোথায় তাতে কিছু আসে যায় না, যায় আসে না আমার কী কর্মফল আছে, আমি চলছি যে পথে আমি যেতে চাই। আমি যেতে চলেছি মুক্তির দিকে।” আধ্যাত্মিকতার অর্থ এটাই - নিয়তিকে নিজের হাতে নেওয়া।
আপনি হয় নিজেকে শক্তিশালি করতে পারেন যাতে আপনি নিজের ভাগ্যের গতিপথটি স্থির করে নিতে পারেন, অথবা গ্রহগুলি এবং লক্ষাধিক অন্যান্য জিনিসকে আপনার ভাগ্যের গতিপথ ঠিক করতে দিতে পারেন। দুঃখের বিষয় মানুষ অন্যান্য গ্রহের দিকে খুব বেশি নজর দিচ্ছেন। সময় হয়েছে এই পৃথিবীতে কিছুটা আগ্রহী হওয়ার এবং এটির ব্যাপারে কিছু করার। আমি আশা করি লোকজন এই গ্রহের দিকে একটু বেশি মনোযোগ দেবেন। সেটারই সবথেকে বেশি দরকার এখন।
Editor’s Note: Find more of Sadhguru’s insights in the ebook “Of Mystics and Mistakes”, available at Isha Downloads.