প্রশ্ন: জীবনে বড় কোনও সিদ্ধান্ত নেবার আগে কোন বিষয়গুলিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত?

সদগুরু: মূলত তুমি যা জানতে চাইছো যে, জীবনকে কার মধ্যে লগ্নি করা উচিত? শুধু এই ভাবনার মধ্যেই আটকে থেকোনা যে, কী চাকরি করা উচিত বা কি পড়াশোনা করা উচিত? সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এই জীবনটা। সকলের কাছেই নিজের জীবনটা যথেষ্ট মূল্যবান। আর এই অমূল্য জীবনকে কোন অভিমুখে লগ্নি করা উচিত? এভাবে যদি জীবনকে দেখো, তবেই সে জীবনের উপযুক্ত কোনও কাজ তুমি খুঁজে পাবে। যদি দিনরাত শুধু রুটি রুজির কথাই ভাবতে থাকো আর কীভাবে এটা ওটা জোগাড় হবে তাতেই ব্যস্ত থাকো, তাহলে তুমি মূর্খের মতো কাজ করবে আর সারা জীবন অনুতপ্ত হবে। 

 

অধিকাংশ মানুষ অনুতাপ নিয়ে বেঁচে থাকে, যে কারণে বিরস মুখে চারপাশে ঘুরে ফিরে বেড়ায় - কিন্তু যেটা তারা চায় সেটাই করে উঠতে পারে না। নিজের জীবনের কাছে যার অর্থ আছে এমন কিছু করার পরিবর্তে, সর্বদা শুধু বেঁচে থাকার জন্যই কিছু না কিছু করছে। প্রতিটি প্রাণী, কীট, পতঙ্গ, পাখি, পশু – সকলেই নিজের অন্ন সংস্থান করতে পারে। শুধুমাত্র অন্ন সংস্থান করা মানুষের জন্য খুব বড় কাজ নয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে, দশ থেকে কুড়িটা প্রজন্ম এমনভাবে এদেশের দারিদ্রেরশিকার হয়েছে যে, মানুষ শুধু অন্য সংস্থানের ভাবনায় ব্যপৃত হয়ে গেছে। বাবা-মাও প্রতিনিয়ত সন্তানকে শেখাচ্ছে, কীভাবে শুধু জীবিকা উপার্জন করতে হয়। একটা কেঁচো যেখানে তার খাবার জোগাড়ে সক্ষম, এত উন্নত মস্তিষ্ক নিয়েও অন্ন সংস্থান করা মানুষের জন্য কি খুব বড় কাজ ? 

প্রশ্ন হল এই জীবনকে কীভাবে তৈরি করতে চাও, কারণ তোমার জীবন বলে যা জানো আসলে তা একটি নির্দিষ্ট সময় আর শক্তির সমাহার। এই যে শক্তিকে তুমি নিজের জীবন বলছো, তাকে কীভাবে তুমি ব্যবহার করতে চাও? যদি সত্যিই সার্থক ভাবে জীবনকে কাজে লাগাতে সক্ষম হও, তাহলে কী ঘটল তা বোঝার আগেই তোমার সময় ফুরিয়ে যাবে। আর যদি অর্থহীন কাজে ব্যস্ত থাকো, জীবনকে দীর্ঘ সময় বলে মনে হবে। এটা খেয়াল করে দেখেছো কি কখনও? কোনও একটি নির্দিষ্ট দিনে যখন তুমি বেশ খুশিতে থাকো, ২৪ ঘন্টা হুস করে বেরিয়ে যায় মুহূর্তের মধ্যে। কিন্তু যদি দুঃখে থাকো, ওই ২৪ ঘন্টাকেই দশ বছর বলে মনে হয়। 

যদি সত্যিই সার্থক ভাবে জীবনকে কাজে লাগাতে সক্ষম হও, তাহলে কী ঘটল তা বোঝার আগেই তোমার সময় ফুরিয়ে যাবে। আর যদি অর্থহীন কাজে ব্যস্ত থাকো, জীবনকে দীর্ঘ সময় বলে মনে হবে।

এই একটা কাজ তরুণদের প্রত্যেকের করা উচিত যে, অন্তত দুই থেকে তিন দিনের জন্য সমবয়সীদের দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে, প্রফেসর বা মা-বাবার দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে নির্জনে বা একান্তে নিজের সঙ্গে সময় কাটাও এবং দেখো যে, এই অমূল্য জীবনকে কোন অভিমুখে লগ্নি করতে চাও তুমি। তা সে যত বড় বা ছোট হোক, কিচ্ছু যায় আসে না তাতে। যে কাজ তোমার প্রকৃতই উপযুক্ত বলে মনে হবে এবং যদি সে কাজেই জীবনকে লগ্নি করো, সেটিই হবে পরিপূর্ণ জীবন।

 

সম্পাদকের কথা: খুশিতে জীবন কাটানোর রাস্তাটা সর্বদা সকলের কাছে স্পষ্ট প্রতিভাত হয় না। কোনও একটি পরিস্থিতিতে কোনটা সঠিক পথ হতে পারে? সদগুরুর এই পডকাস্ট শুনুন আর নিজেই খুঁজে নিন সেই সঠিক পথটি।