আমার মন কি সত্যিই আমার বিপক্ষে?
সদগুরু উত্তর দেন আমাদের নিজ মন আধ্যাত্মিতার পথে সত্যিই কতটা বিপক্ষে কাজ করে।
প্রশ্নকারী: আমাদের মন কি সত্যিই সবসময় আমাদের বিরুদ্ধে? তাই যদি হয়, তাহলে কেন এমন হয়?
সদগুরু: এখন, আপনার মনের কারণেই আপনি আধ্যাত্মিক নামের একটি শব্দ শুনেছেন। তাই তো? আমি আপনাকে এখন ঠিক কী বলছি, তাও বুঝতে পারেন মনের জন্যেই। যে আপনার বন্ধু, তাঁকে অযথা শত্রু করবেন না। দয়া করে নিজের জীবনের দিকে তাকান, এবং আমাকে বলুন, আপনার মন কি আপনার বন্ধু, না শত্রু? আপনি যা আপনি তা হতে পেরেছেন আপনার মনের জন্যেই, তাই নয় কি? আপনি নিজের মধ্যে যে গণ্ডগোল পাকিয়েছেন, সেটা আপনার ব্যাপার। আপনি যদি এর থেকে মুক্তি চান, তো খুবই সহজ; একটা বড় ঝাঁকানি দরকার। মন কোনও সমস্যা নয়। আপনি জানেন না কিভাবে এটি চালনা করতে হবে, এটাই সমস্যা। তাই মন সম্পর্কে কথা বলবেন না, বরং যে অপ্রাচুর্যের সঙ্গে আপনি এটি পরিচালনা করার চেষ্টা করছেন সেটাই কেবল দেখুন। কোনও অনুভব বা উপলব্ধি ছাড়াই যদি আপনি এটি সামলানোর চেষ্টা করেন, তাহলেই গণ্ডগোল বাধে।
এখন উদাহরণ স্বরূপ যদি ধান চাষের কথা বলি, আপনি কি মনে করেন এটি একটি বিরাট কীর্তি? একজন সাধারণ চাষাই চাষটা করে। আমি আপনাকে ১০০ গ্রাম বীজধান, প্রয়োজন মতন জমি, ও যা যা আপনার দরকার সব দেব। আপনি এক একর জমির ধান চাষ করুন, এবং আমাকে দিন, দেখবেন কী ঝামেলায় পড়েন! এটা এমন নয় যে ধান চাষ করা একটা বিশাল ব্যাপার, কারণ এ ব্যাপারে আপনি বিন্দু বিসর্গ জানেন না, আর সেই জন্যেই এটা এতো জটিল। মনকে মহাকাশের মতো ফাঁকা রাখা কোনও কঠিন ব্যাপার নয়, বরং এটাই সবচেয়ে সহজ। কিন্তু এই ব্যাপারে আপনি কিছুই জানেন না, আর সেইজন্যেই এটা এতো কঠিন। জীবন এভাবে কাজ করে না। আপনি যদি কোনও কিছুকে ঠিকভাবে সামলানোর চেষ্টা করেন, তাহলে সে বিষয়ে আপনার সম্যক ধারণা থাকতে হবে। তা না হলে ঘটনাক্রমে আপনি সাময়িক ভাবে চালিয়ে নিতে পারেন। সবসময়ের জন্যে এটা কাজ করবে না।
একদিন এক মৌলবাদী গির্জায় যাজক মূল পরিষেবার আগে রবিবারের স্কুল বাচ্চাদের লক্ষ্য করে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। আপনি জানেন, এরা বেশ উদ্দীপ্ত ভাবে কথা বলেন, আর তাই বেশ ভালভাবেই বাচ্চাগুলোর ওপর চড়াও হচ্ছিলেন। তিনি দেখতে পেলেন শিশুরা কিছুটা সরল সাদাসিদে গোছের, তাই তিনি ভাবলেন এদের একটা ধাঁধা বলে ঘাবড়ে দেবেন। বললেন “এখন আমি তোমাদের একটা ধাঁধা বলতে চলেছি। কে শীতের জন্যে বাদাম জড়ো করে, গাছের উপরে চড়ে, চারপাশে লাফিয়ে লাফিয়ে চলে, যার লেজটা পশমের?” এক ছোট্ট মেয়ে তার হাত তুলল। “বেশ বল সে কে।” মেয়েটি বলল, “আমি জানি এর উত্তর হোলো যীশু, তবে আমার মনে হচ্ছে এটা কাঠবিড়ালী হবে!” ঠিক আছে? এখনও অব্দি এমনতর জিনিষই পেয়েছেন। আপনার শিক্ষাও এই সূত্র ধরেই আপনাকে প্রদান করা হয়েছে। কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল, কোনটা ঠিক আছে আর কোনটা ঠিক নেই, ঈশ্বর কী, শয়তানই বা কী, সব এই সূত্রেই শেখানো হয়েছে, আপনার নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে নয়।
তা হলে আপনি কিভাবে আপনার মনকে থামাতে পারেন? আপনি যা নন তাই দিয়েই চিহ্ণিত হচ্ছেন। মনের চলা বিরামহীন। ধরুন আপনি প্রচুর তেলমশলা খাবার খেয়েছেন, তাহলে তো গ্যাস হবেই। এবার আপনি সেটা আটকে রাখার চেষ্টা করলে পারবেন না। যদি আপনি ঠিক খাবার খান, আপনাকে কোনও কিছুই আটকে রাখতে হবে না, শরীরও সুস্থ থাকবে। আপনার মনের সাথেও একই – আপনি যে জিনিসগুলি নন তাই দিয়ে আপনি ভুলভাবে চিহ্নিত হন। একবার আপনি ভুলভাবে চিহ্নিত হয়ে গেলে আপনি মনকে থামাতে পারবেন না।
যা নন তাই দিয়ে যদি অকারণ নিজেকে চিহ্নিত না করেন, দেখবেন মন ফাঁকা আর খালি থাকবে। আপনি যদি এটি ব্যবহার করতে চান তবে আপনি এটি ব্যবহার করতে পারেন; অন্যথায় এটি খালি থাকবে। কিন্তু এই মুহূর্তে আপনি এতো কিছুর সঙ্গে নিজেকে চিহ্নিত করে ফেলেছেন, যা আপনি নন। আপনার শারীরিক দেহ থেকে শুরু করে কত কিছুতে আপনি নিজেকে চিহ্নিত করেছেন তা দেখুন। এমন অনেক কিছুর সঙ্গে আপনি চিহ্নিত এবং তারপর মনকে থামাতে চেষ্টা করছেন, ধ্যান করার চেষ্টা করছেন – এভাবে কাজ হবে না। হয় আপনি নিজের সনাক্তকরণগুলি মুছে ফেলুন, নয় জীবন আপনার সঙ্গে এটি করবে। যা দিয়েই নিজেকে চিহ্নিত করুন না, যখন মৃত্যু সামনে আসবে, সব উধাও হয়ে যাবে, তাই তো? কোনও কিছু থেকে শিক্ষা না নিলে, মৃত্যু এসে আপনাকে সঠিক জিনিসটা শিখিয়েই দেবে। যদি কিছুমাত্র বোধ থাকে, এখনই শিক্ষা নিন। তারপরেও যদি না শেখেন, মৃত্যু এসে সব চিহ্ন মুছে দেবে।
নিজেকে পরিচয়হীন করতে হবে। প্রত্যেক দিন সকালবেলা আপনি কেবল ১০ মিনিট সময় ব্যয় করুন, এবং দেখুন যা দিয়ে চিহ্নিত হন, আসলে সে সমস্ত জিনিষগুলি আপনি নন। আপনি কতো হাস্যকর উপায়ে এবং কতো হাস্যকর জিনিসে নিজেকে চিহ্নিত করেছেন তা দেখে অবাক হয়ে যাবেন। আপনার বাড়ির আশপাশের সমস্ত জিনিসকে কেবল মানসিক ভাবেই ভেঙ্গে দেখুন, কী কী দিয়ে চিহ্নিত ছিলেন। ছোট জিনিস, বড়ো জিনিষ, আপনার নিজের বাড়ি, আপনার পরিবার, সবকিছু, মনে মনেই ভাঙুন এবং দেখুন। যা কিছু আপনাকে আঘাত দিয়েছে, অবধারিতভাবেই তাদের সঙ্গে চিহ্নিত হয়েছিলেন। যা নন তার সঙ্গে একবার চিহ্নিত হয়ে গেলে, মন এক্সপ্রেস ট্রেনের মতো হয়ে যায়, থামতে পারে না। যা খুশি করুন, থামাতে পারবেন না। মন চলছে ফুল স্পিডে আর সেই অবস্থাতে আপনি ব্রেক কষতে চাইছেন - কাজ করবে না। ব্রেক করার আগে থ্রোটেল থেকে আগেয় পা সরাতে হবে।