আপনার দেহতন্ত্র থেকে অবসাদ দূর করুন
সদগুরু জানালেন, কীভাবে নিজেকে পরিচালনা করে নিজের দেহতন্ত্র থেকে অবসাদ দূর করা যায়: "যোগে, অবসাদকে নিয়ন্ত্রণ করা হয় দেহ, মন এবং শক্তির স্তরে। ভৌত দেহ, মানসিক স্তর এবং প্রাণশক্তির মধ্যে যদি প্রয়োজনীয় ভারসাম্য এবং উচ্ছলতা আনা যায়, তখন পরম আনন্দে থাকাটাই অত্যন্ত স্বাভাবিক হয়ে ওঠে।"
সদগুরু: আমাদের বোঝা প্রয়োজন যে, অবসাদ কী? (এখন) মনমরা ভাবটাই বা কী? আপনার ভিতরে যা ঘটে, সেটা কী? মূলত, আপনি কিছু একটা ঘটার প্রত্যাশা করেছিলেন, আর সেটা হয়নি। আপনি ভেবেছিলেন কেউ বা কোনও কিছু আপনার প্রত্যাশা অনুযায়ী হবে, ভেবেছিলেন বিশ্ব সংসার বা ভবিতব্য আপনার প্রত্যাশা অনুযায়ী হবে, আর তা হয়নি। অন্যভাবে বলতে গেলে, যা ঘটছে, আপনি হলেন একেবারে সোজাসুজি তার বিরুদ্ধে (,এই যা)। হয়তো আপনি কোনও এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে, হয়তো বা একটা সম্পূর্ণ পরিস্থিতির বিরুদ্ধে, অথবা হয়তো জীবনেরই বিরুদ্ধে। এভাবেই হতাশা আরও গভীরে যেতে থাকবে।
কেনই বা আপনি কোনও কিছুর বিরুদ্ধে হবেন? শুধুমাত্র সেই জিনিসগুলো আপনার পছন্দমত হয়নি বলে, তাই না? সারা বিশ্বকে কেন আপনার পছন্দমত চলতে হবে? দয়া করে জেনে রাখুন, সারা বিশ্ব আপনার পছন্দমত চলবে না। হয় সৃষ্টিকর্তার ওপর আপনার কোনও আস্থা নেই অথবা আপনি কোনও কিছুই গ্রহণ করতে প্রস্তুত নন, অথবা দুটোই, কিংবা আপনার একটি অতি-স্পর্শকাতর অহংবোধ আছে। সেই কারণেই আপনি অবসাদে ভোগেন।
হতাশা আপনাকে ঘৃণায় পূর্ণ করে ফেলে এবং এটি গভীর ভাবে আপনার নিজের ক্ষতি করতে থাকে। অবসাদগ্রস্ত মানুষরা কেবল নিজেদেরই আরো আঘাত করতে থাকেন। হত্যা করা মানেই শারীরিক ভাবে হত্যা করা এমন নয়। একজন অবসাদগ্রস্ত মানুষ সর্বদাই নিজের আরো ক্ষতি করে চলেছেন। একজন ব্যক্তি, যিনি তরবারি নিয়ে বেরিয়ে মানুষ মেরে ফেলেন, তার অহংবোধও এত স্পর্শকাতর নয় বা এত যত্নের প্রয়োজন হয় না যতটা একজন অবসাদে ভোগা মানুষের জন্য প্রয়োজন। উন্মত্ত মানুষকেও খুব সহজে শান্ত করা যায়। আপনি রাস্তাঘাটে এরকম দেখেছেন কি? লোকজনের মধ্যে যখন লড়াই বেধে যায়, যদি সেখানে কোনো একজন সামান্য জ্ঞানী ব্যক্তিও থাকেন এবং তিনি যদি এদেরকে শুধু সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, যারা কিনা পরস্পরকে মেরে ফেলতে যাচ্ছিল পরের মুহূর্তেই তারা সব ঝেড়ে ফেলে পরস্পরের বন্ধু হয়ে যায় আর যে যার পথে চলে যায়। কিন্তু অবসাদগ্রস্ত মানুষের বিষয়টা এরকম নয়। তিনি একে সারা জীবন বইতে থাকবেন। সচেতন ভাবে হোক বা না হোক, তারা তাদের ছুরিতে ধার দিতেই থাকেন আর নিজেদের হৃদয়কেই ক্ষতবিক্ষত করতে থাকেন। কেনই বা একজন মানুষ নিজেকে আঘাত করতেই থাকেন? সাধারণত, সহানুভূতি পাওয়ার জন্য। একজন অত্যন্ত অবসাদগ্রস্ত মানুষের জন্য সাধারণ সহানুভূতি যথেষ্ট নয়, তার সাথে অন্য কারোরও রক্ত ঝরতে হবে।
এখন আপনার মধ্যে কী আছে যা আহত হতে পারে? আমি যদি আপনার শরীরে একটা লাঠি দিয়ে মারি, আপনার দেহ আঘাত পাবে, সেটা অন্য বিষয়। তাছাড়া, আপনার ভিতরে এমন কী আছে যা আঘাত পায়? শুধুমাত্র আপনার অহংবোধ, তাই না? মন এবং অন্তর প্রকৃতি আঘাত পেতে পারে না। শুধু অহংবোধই যা আঘাত পেতে পারে। তাই আপনি যদি বলেন "আমি উন্নতি করতে চাই", উন্নতি মানে এর ঊর্ধ্বে যাওয়া, অহংবোধকে পদদলিত করে সামনে এগিয়ে যাওয়া।
একজন মানুষ তার জীবনে যে কোনও ধরনের আবেগকেই সৃজনশীল শক্তিতে পরিণত করতে পারেন। আপনার দুঃখবোধ যদি আপনার অসম্পূর্ণতাকে মনে করিয়ে দেয়, সেটা ভালো; আপনার দুঃখকে আপনার উন্নতির জন্য কাজে লাগান। কিন্তু দুঃখের সময় যদি আপনি খিটখিটে এবং ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠেন, সারা বিশ্বকেই ভুল মনে হয় তাহলে আপনি একটি মূর্খ। আপনি এই দুঃখ কে রাগে পরিণত করতে চান নাকি ভালোবাসা আর সহানুভূতিতে? আপনি যখন দুঃখে আছেন তখন সহানুভূতি প্রবণ হওয়া খুবই সহজ। এটি এক ধরনের বিলীন করার মতো শক্তি, আরো বিলীন হওয়ার জন্য একে কাজে লাগাতে পারেন যা আপনাকে আপনার পরম-মঙ্গলের দিকে এগিয়ে দেবে।
এই মুহূর্তে মানুষের দুর্ভাগ্যজনক বাস্তব এটাই যে, মানবতা কার্যকরী হয় শুধুই যখন তারা জীবনের দ্বারা পিষ্ট হন। বেশিরভাগ মানুষই দুঃখ এবং কষ্টকে বাদ দিয়ে পরিণত হয়ে ওঠেন না। তা না হলে, তারা কখনোই বুঝতে পারেন না যে তাদের সাথে এবং তাদের আশেপাশের কারোর সাথে কী ঘটে চলেছে।
যোগে, অবসাদকে নিয়ন্ত্রণ করা হয় দেহ, মন এবং শক্তির স্তরে। শরীর, মন ও প্রাণশক্তির মধ্যে যদি প্রয়োজনীয় ভারসাম্য এবং উচ্ছলতা আনা যায়, তখন পরম আনন্দে থাকাটাই অত্যন্ত স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। যিনি পরম আনন্দের মধ্যে রয়েছেন, তার অবসাদ থাকতে পারে না।