আত্ম-সংশয় ও বড় হওয়ার দ্বান্দ্বিক অনুভূতি
বড় হয়ে ওঠার পথে তারুণ্যের আত্ম-সংশয় বা নিজের ভিতরে তৈরি হওয়া দ্বান্দ্বিক অনুভূতিকে অতিক্রম করার উপায় কী, রেজিনা কাস্যান্দ্রা জানতে চেয়েছেন সদগুরুর কাছে -
রেজিনা কাস্যান্দ্রা: বড় হয়ে ওঠার সময় নিজেকে নিয়ে, নিজের দক্ষতা বা যোগ্যতা নিয়ে অসংখ্য প্রশ্ন আমার মনে ঘুরে ফিরে আসত। আত্ম-সংশয় এমনই এক বিষয় যে, আর সকলের মতোই আমাকেও এর মুখোমুখি হতে হয় এবং কাটিয়ে ওঠার চেষ্টাও করতে হয়। যে কোনও মানুষ, বিশেষত, তরুণ প্রজন্ম কীভাবে আত্ম-সংশয়ের হাত থেকে পুরোপুরি মুক্তি পেতে পারে ?
সদগুরু: নমস্কার রেজিনা! এক অর্থে নিজের প্রতি সন্দিগ্ধ হওয়া ভাল। আমি জানি, সকলেই তোমাকে বলে “নিজেকে বিশ্বাস করতে শেখো”। কিন্তু আমি তোমাকে বলব যে, “দয়া করে নিজেকে সন্দেহ করো”। ভাল বা খারাপ, যাই হোক, প্রথমেই নিজেকে দেখো, হতেও তো পারে যে, তোমারই জন্য ঘটেছে সেটা। তা যদি না হয়, তাহলেই অন্যদের দিকে তাকাও। তথাকথিত আত্মবিশ্বাসী নির্বোধরা সব সময়ই অন্যের স্বার্থ পা দিয়ে মাড়িয়ে চলে যায়। সংশয় থাকলে তোমার মধ্যে বোধের জন্ম হবে। নিরুপদ্রবে এই গ্রহটির বুকে হাঁটতে শিখবে।
বেড়ে ওঠার দ্বন্দ্ব!
আমরা যখন বড় হয়ে ওঠার কথা বলি, তার সঙ্গে মানব জীবনের বিভিন্ন আঙ্গিক জড়িয়ে থাকে – শারীরিক বৃদ্ধি, মানসিক বৃদ্ধি, আবেগের ওঠাপড়া এবং অন্যান্য বহু ভিন্ন ভিন্ন মাত্রার সঙ্গে বড় হয়ে ওঠা সম্পৃক্ত হয়ে থাকে। আধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমরা শারীরিক বৃদ্ধি ও পরবর্তীতে মানসিক বৃদ্ধির মধ্যেই বড় হয়ে ওঠাকে সীমায়িত করে ফেলি। শুধুমাত্র ঘাত প্রতিঘাতের মুখোমুখি হলেই আমরা জীবনের অন্যান্য মাত্রাকে খুঁজে দেখতে চাই। আবেগ প্রবণতার কমাবাড়া, প্রাণশক্তির বা নিজ সত্ত্বার বিকাশের কথা শুধু মনে পড়ে তখনই, যখন জীবনের চড়াই উৎরাই ভাঙতে গিয়ে আমরা বিপর্যস্ত হয়ে যাই। অধিকাংশ মানুষই জীবনের বিভিন্ন পরিস্থিতির প্রতি যেভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে, তা নিজেকেই বিষ্মিত করার জন্য যঠেষ্ট।
শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধির প্রসঙ্গে বলতে গেলে, একমাত্র শরীরের বৃদ্ধির নির্দিষ্ট হার বাহ্যিক ভাবে দৃশ্যমান হয়। কিন্তু তোমার মনোজগতের বৃদ্ধির রূপরেখাটি বাইরে থেকে আদৌ প্রতীয়মান নয়। এই অন্তর্লীন প্রক্রিয়াটি শারীরিক বৃদ্ধির চেয়ে অনেক বেশি নমনীয়, গতিশীল এবং আবছায়া ঘেরা। আর এই কারণেই শারীরিক বৃদ্ধির চেয়ে মানসিক বৃদ্ধির হার অনেক বেশি হওয়ার কথা। বড় হয়ে ওঠার পথে যদি কোনও ব্যক্তির মধ্যে দ্বান্দ্বিক দোলাচল তৈরি হয়, সেক্ষেত্রে এটা নিশ্চিত যে, ওই ধরনের ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে মানসিক বিকাশ তাদের শারীরিক বিকাশের চেয়ে ন্যূনতম এক ধাপও এগিয়ে নেই।
যদিও কোটি কোটি মানুষের জীবনে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে চলেছে অবিরাম, কিন্তু তবুও তারা ভাবে যেন এই প্রথম বার সমগ্র সৃষ্টির বুকে অবতীর্ণ হয়েছে। তারা যে বিষ্মিত হয় বা মানসিক ভাবে আঘাত পায় তার কারণ তাদের মনোজগতের বিকাশ শারীরিক বৃদ্ধির চেয়ে অনেকটাই পিছিয়ে আছে।
সামাজিক পরিসরে এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করা জরুরী যেখানে প্রতিটি শিশুর মানসিক বিকাশ তাদের দেহগত বৃদ্ধির চেয়ে অন্তত যেন এক ধাপ এগিয়ে থাকে। এই একটি মাত্র কাজ যদি সঠিক পদ্ধতিতে করতে পারো, সেক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধির সময়, মধ্য বয়স বা প্রৌঢ়ত্ব, জীবনের যে কোনও পর্বেই আকষ্মিকতার আঘাত বলে কিছু থাকবে না – যে কোনও পরিস্থিতিকেই তুমি সমান দক্ষতায় সামলে নিতে সক্ষম হবে। চড়াই উৎরাইয়ের ধাক্কা বলে কিছু থাকবে না, জীবন প্রবাহের মধ্য দিয়ে তুমি তরতর করে এগিয়ে যাবে।
কিন্তু এই মুহূর্তে মানুষ যেভাবে বেঁচে আছে তাতে টলমল শৈশবে ডায়াপার সমস্যা, বয়ঃসন্ধিতে হরমোনের সমস্যা, পরিণত মানুষদের রয়েছে মধ্য বয়সের সমস্যা আর বৃদ্ধ বয়সের মানুষরা তো অগণিত সমস্যায় জর্জরিত। জীবনের এমন একটি পর্বের কথা বলতে পারো, যেটিকে মানুষ সমস্যার আধার হিসেবে দেখে না ? জীবন কোনও সমস্যা নয়। জীবন একটি নির্দিষ্ট প্রবাহ। শুধু প্রশ্ন হল, জীবনের প্রবাহে হেসে ভেসে যাওয়ার উপযোগী করে তুমি কি নিজেকে প্রস্তুত করতে পেরেছো ?
সম্পাদকের কথা: যে প্রশ্নের উত্তর দিতে সকলেই অপারগ, যদি এমন কোনও বিতর্কিত বা স্পর্শকাতর প্রশ্ন থাকে অথবা যদি কোনও আপাত কঠিন প্রশ্ন নিজেকে ক্রমাগত বিব্রত করতে থাকে, সেক্ষেত্রে জীবনের সব অমীমাংসিত প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার সুযোগ রয়েছে এখানে। সদগুরুকে আপনার প্রশ্ন করুন UnplugWithSadhguru.org.