ছোটবেলায় সদগুরু কী বই পড়েছিলেন?
সদগুরু ছেলেবেলায় যে বইগুলো পড়ে তার মন সমুদ্রে হারিয়ে ফেলেছিলেন, আর পরবর্তীকালে যে বইগুলো তাকে রুশ নির্মাণকার্যে আগ্রহী করে তুলেছিল, তার গল্প করছেন তিনি।
সমুদ্রে হারানো শৈশব
আমি প্রথম যে বইটি পড়েছিলাম, জুলে ভার্নের লেখা ‘টোএন্টি থাউসেন্ড লিগস্ আন্ডার দা সি’, সম্ভবত আমি তখন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ি। তিনি সব কিছুই অতিরঞ্জিত করতেন। তিনি একটি এত বড়ো অক্টোপাস কল্পনা করেছিলেন যেটি এসে তাদের ডুবোজাহাজকে আক্রমণ করছে। এরকম কোনও অক্টোপাস আদৌ হয়না। এটি আমার কল্পনাকে সাঙ্ঘাতিকভাবে নাড়িয়ে তুলেছিল। আমি সমুদ্রে গিয়ে ওইরকম অক্টোপাস আর ওরকম অন্য জিনিস খুঁজতে চাইতাম। আমার মনে হয় অন্তত ছয় থেকে আটমাস এই অক্টোপাসগুলি আমার মস্তিষ্কের মধ্যে চলা ফেরা করেছে। এরপরে যেই বইটি আমি আমার কল্পনাকে আচ্ছন্ন করেছিল সেটি হল ‘গালিভারস্ ট্র্যাভেলস্’। যখন আপনার বয়স ৭-৮ বছর, আপনি তখন বিশ্বের কাছে একটি লিলিপুট এবং সবাই আপনার থেকে লম্বা। আমি তাদের মত চিন্তা-ভাবনা করতে পারতাম, কিন্তু তারা সর্বদা আমায় লিলিপুটই ভাবত। তাই আমি সেই দ্বীপ গিয়ে তাদের সাথে দেখা করতে চাইতাম।
এই সমুদ্র-যাত্রার বইগুলো কোনওভাবে আমাকে মুগ্ধ করেছিল, রবিনসন ক্রুসোর মতো। আমরা যখন নবম শ্রেণীতে পড়ি তখন আমি এবং আমার বন্ধুরা একটি নৌকা তৈরি করে তাহিতির উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে চেয়েছিলাম। এমনকি আমরা সমুদ্রের স্রোত পর্যবেক্ষণ করে কিভাবে দিক নির্ণয় করতে হয়, কিভাবে যেতে হয় এবং কোন মরশুম যাত্রা করার জন্য সঠিক এ সবই শিখেছিলাম। তবে আমরা কখনও যাইনি। যখন আমি হাই-স্কুলে পড়তাম তখন আমি রিচার্ড বাখের লেখা ‘জনাথান লিভিংস্টোন সিগাল’ পড়েছিলাম। আমি তার লেখা ‘ইলিউশনস্’ও আনেক বার পড়েছি। হারমান মেলভিল-এর লেখা ‘মবি-ডিক’ বইটিতে তিনি একটি তিমির কথা বলেছিলেন, আবার সেই সমুদ্র।
রুশ নির্মাণকার্য
কিছু বই আছে যেগুলো আপনার জীবন সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা, অনুভবের পরিবর্তন করতে পারে। অনেক মানুষের জীবনে কোনও বই তাদের জীবনের দিশা বদলে দিয়েছে। আমি টলস্টয়-এর প্রায় সমস্ত বই পড়েছি, যদিও আমি ‘আনা কারেনিনা’ কখনওই শেষ করতে পারিনি; বইটা শেষই হতে চায় না। তো, অনেক দিন আগে আমি দস্তয়েভস্কি, কামু এবং কাফকা পড়ি। তাদের বুদ্ধি আমায় মুগ্ধ করেছিল, কিন্তু একটি পর্যায়ে এসে আমি হঠাৎ লক্ষ্য করলাম এই লোকগুলো খুবই বুদ্ধিদীপ্ত হলেও তাদের লেখায় একটি খুবই অপ্রয়োজনীয় মনস্তাত্ত্বিক উপাদান রয়েছে - সব কিছু সম্পর্কে একটা অদ্ভুত বিষাদ, দুঃখকে উদযাপন করার এক প্রবণতা।
তখনকার দিনে ‘নব কর্ণাটক’ বলে বই-এর দোকান ছিল। তারা মূলত রাশিয়ান বই বিক্রি করত। আপনি লিও টলস্টয়-এর "ওয়ার এন্ড পিস" এর মত বড় সাহিত্যের বই দুই টাকায় এবং ইঞ্জিনিয়ারিং এর বইগুলি এক বা দুই টাকার বিনময়ে পাওয়া যেত - সব শক্ত মলাটে বাঁধানো। আমি এক গুচ্ছ রাশিয়ান সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর বই কিনেছিলাম। আমি জলের শোধনাগার সম্পর্কিত বই কিনেছিলাম এবং আমাদের খামারে বসে দিন রাত সেগুলো নিয়ে বসে থেকেছি। এগুলো নিয়ে দুই থেকে তিন মাস কাটিয়েছি। সেগুলো পড়ার পর, নির্মাণকার্যে নামার খুব ইচ্ছে হল। একটি নির্দিষ্ট শিল্পের জন্য জল পরিশোধন প্রক্রিয়াকেন্দ্রের প্রয়োজন ছিল, তাদের টেন্ডার চাইলাম। মালিক এটি দেখে বললেন, “আপনি ত’ মজার লোক! এটা করা সম্ভব না। কোনওভাবেই আপনি এটি করতে পারবেন না। সবথেকে কাছের টেন্ডারটি বত্রিশ-লক্ষ, আর আপনি এক-লাখ-ছিয়াত্তর-হাজার টাকার কথা বলছেন। কিভাবে করবেন?”
আমি বললাম, “আমাকে আর একটি দিন সময় দিন।” আমি ফিরে গিয়ে আবার বইগুলো পড়লাম। আমি ফিরে এসে বললাম, “আমি এটা করে দেব।”
তখন তিনি বললেন, “তোমার কাছে নব্বই দিন আছে। তোমায় এটা শেষ করতে হবে এবং এটি অবশ্যই কার্যকারি হতে হবে। যদি এটি কাজ না করে তবে নিজের খরচে তোমাকেই এটা সরিয়ে ফেলতে হবে, নির্মাণ স্থানটি পরিষ্কার করতে হবে এবং চলে যেতে হবে। এবং আমি অগ্রিম কোনও টাকাও দেব না।”
আমি নব্বই হাজারের থেকে কিছু বেশি টাকায় সত্তর দিনের কিছু বেশি সময়ের মধ্যে এটা শেষ করি। এবং, এক বারে আশি হাজার টাকা রোজগার করে ফেলি। এরকম ভাবেই আমার অভিযান শুরু হয় এবং আমরা একটি বড় নির্মাণ সংস্থাতে পরিণত হই। আমরা খুব বড়ো একটি সংস্থাতে পরিণত হতে যাচ্ছিলাম, কিন্তু ঠিক তখনই আমার আলকপ্রাপ্তি হয়। এবং আমি সব ছেড়ে দিই!