বিশ্ব জুড়েই ক্ষুধার নিবৃত্তি হচ্ছেনা কেন ?
সত্যের সাথে যুবসমাজ প্রশ্নোত্তর পর্বে এক ছাত্রের প্রশ্ন ছিল, গবেষণা, প্রযুক্তি ও কৃষিজাত উৎপাদনে অভাবনীয় উন্নতি হওয়া সত্ত্বেও পৃথিবী থেকে এখনও ক্ষুধা নিবৃত্তি হচ্ছেনা কেন ? উত্তরে সদগুরু স্পষ্ট বললেন, ব্যথর্তা কৃষিতে নেই, ব্যথর্তার বীজ লুকিয়ে আছে মানুষের হৃদয়ের গভীরে –
প্রশ্ন: প্রিয় (ভালবাসার) সদগুরু! আমার প্রশ্ন, কৃষি উৎপাদন থেকে শুরু করে গবেষণা ও উন্নয়নের পিছনে কোটি কোটি অর্থ ব্যয় হওয়া সত্ত্বেও আজও পৃথিবী থেকে ক্ষুধা ও অপুষ্টিকে পুরোপুরি নির্মূল করা যাচ্ছে না কেন ? ক্ষুধার্ত মানুষগুলির ভাবনা আমাকে দুঃখে জর্জরিত করে। কী ভাবে এই বিশ্বজনীন ক্ষুধার সমস্যা মিটবে, আধ্যাত্মিকতার পথে কি এর কোনও সমাধান আছে ?
সদগুরু: এই পৃথিবীর অগণিত মানুষ যে আজও ক্ষুধায় পীড়িত, অপুষ্টিতে জর্জরিত – তার কারণ কিন্তু খাদ্যের অভাব নয়। ৭৬০ কোটি মানুষের যে পরিমাণ খাদ্যের প্রয়োজন, তার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ খাদ্য উৎপাদিত হয়, কিন্তু তা সত্ত্বেও সাড়ে একাশি কোটি মানুষ আজও দু’বেলা পেট ভরে খেতে পায়না। এর কারণ কৃষি উৎপাদনের ব্যর্থতা নয় – এটা সম্পূর্ণ মানবিক হৃদয়ের ব্যর্থতা।
কাজের মাধ্যমে ভালবাসার প্রকাশ
তুমি আমাকে “ভালবাসার” কথা বললে। আমার কাছে আড়ম্বর না করে – আমাকে ভালবাসার বদলে – যদি তুমি গোটা পৃথিবীটাকে ভালবাসতে পারো, তাহলেই দেখবো তোমার ভালবাসাকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়। কাজের মধ্যে যদি অন্তরের ভালবাসা প্রকাশিত হয়, তাহলে আর সাড়ে ৮১ কোটি মানুষকে অভুক্ত থাকতে হবে না। যদি খাদ্যের অভাব হতো, তাহলে না হয় অন্যভাবে ভাবা যেত। কিন্তু প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পরিমাণ খাবার মজুত থাকা সত্ত্বেও অত মানুষ যে খেতে পায়না, সেটা কৃষি উৎপাদনের ব্যর্থতার জন্য নয়, তার কারণ মানবিক হৃদয়ের ব্যর্থতা। যদি তুমি কৃষকদের দ্বিগুণ পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন করতে বলো, সেটা দু’বছরের মধ্যেই সম্ভব হবে – কিন্তু সেই অতিরিক্ত খাদ্যকে কীভাবে পৌঁছে দেওয়া যাবে সেই সব অনাহারে থাকা মানুষগুলোর কাছে ? এই প্রশ্নটা সবচেয়ে বড় কারণ, বাজার, কায়েমী স্বার্থ এবং সবার ওপরে রাষ্ট্র মাঝখানে অচলায়তনের মতো এসে দাঁড়াবে।
এর আগে ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের এক সভায় আমার কথা শুনে উপস্থিত নেতৃবর্গ বলেছিলেন, “সদগুরু, আমরা এমনভাবে আপনাকে সাহায্য করতে চাই যাতে আপনি বিশ্ব পরিস্থিতিকে আমূল বদলে সক্ষম হন”। আমি বলেছিলাম, “পঁচিশ জন মানুষের নাম বলছি, আমার কাছে মাত্র পাঁচ দিনের জন্য এনে দিন তাদের, দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে এই পৃথিবীর চেহারাটাই বদলে যাবে উল্লেখ্যযোগ্য ভাবে। আমি এই পৃথিবীর পঁচিশ জন গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র নেতার নাম উল্লেখ করে বলেছিলাম, “ওই ব্যক্তিদের মাত্র পাঁচ দিনের জন্য আমার কাছে এনে দিন। একজন সাদামাটা মানুষের জন্য আমার দুই থেকে তিন দিন লাগে, কিন্তু যেহেতু ওনারা রাজনৈতিক নেতৃত্ব, তাই ওনাদের জন্য আমার পাঁচটা দিন প্রয়োজন। মাত্র ওই ক’টা দিনের জন্য ওনাদের আমার কাছে এনে দাও। মাত্র, গোটা পৃথিবীটাই বাসযোগ্য হয়ে উঠবে”।
একমাত্র প্রশ্ন
বর্তমান ভৌগোলিক বিশ্বের পচিশ জন রাষ্ট্রনায়ক যদি ইচ্ছুক হন, তাহলে পৃথিবীর প্রতিটি অভুক্ত মানুষের মুখে প্রয়োজনীয় আহারটুকু আমরা তুলে দিতে পারবো সহজেই। প্রতিটি শিশুই তৃপ্ত ও পরিপূর্ণ উদর নিয়ে রাতে ঘুমাতে যাচ্ছে, নিশ্চিত হবে সেটা। এটুকু করতে কয়েক দশক লাগার কথা নয়। মাত্র দুটো বছরের মধ্যেই আমরা নিশ্চিত করতে পারি সেটা। পর্যাপ্ত খাদ্য, প্রযুক্তি, পরিবহণ বা আরও যা কিছু প্রয়োজন, সব কিছুই রয়েছে এখানে। এমনকি বিগত পঁচিশ বছর আগেও যা ছিল না, আজ তার সব কিছুই রয়েছে আমাদের হাতে। শুধু একটি মাত্র জিনিস, মানবিক সদিচ্ছাটুকুর অভাব রয়েছে এখানে। মানুষের এই সদিচ্ছাটুকু জাগাতে কতটা সময় লাগা উচিত ? শুধু প্রশ্ন হল, আমরা কি এটা ঘটাবার জন্য আগ্রহী, না কি শুধু অভিযোগ করতে করতে এক কোণে বসে চোখের জল ফেলতে আগ্রহী ? আমাদের যার যতটুকু ক্ষমতা আছে, সেটুকুই কাজে লাগিয়ে ভাবনাকে কাজে পরিণত করতে আমরা উৎসাহী কি না, সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
সম্পাদকের কথা: যে প্রশ্নের উত্তর দিতে সকলেই অপারগ, যদি এমন কোনও বিতর্কিত বা স্পর্শকাতর প্রশ্ন থাকে অথবা যদি কোনও আপাত কঠিন প্রশ্ন নিজেকে ক্রমাগত বিব্রত করতে থাকে, সেক্ষেত্রে জীবনের সব অমীমাংসিত প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার সুযোগ রয়েছে এখানে। সদগুরুকে আপনার প্রশ্ন করুন UnplugWithSadhguru.org.