প্রকৃত ধ্যানমগ্ন হয়ে ওঠা
সদগুরু ব্যাখ্যা করছেন যে যোগের উদ্দেশ্য হল যা "আপনি নন" তার জন্য একটা জায়গা তৈরি করা, এবং এইসঙ্গে অবধূতদের বিষয়েও বিশদে বলছেন।
Read in Telugu: అవధూతలు ఎటువంటివారు??
সদগুরু: যোগের সমগ্র উদ্দেশ্যটাই হল আপনি যা নন সেই সব বিভিন্ন মাত্রাগুলো আপনার মধ্যে প্রতিষ্ঠা করা। "আপনি নন" বলতে আমি যা বোঝাতে চাই তা হল: আপনি যা কিছুর সঙ্গে অভিন্ন বোধ করেন এই মুহূর্তে সেটাই "আপনি"। কিন্তু আপনার এই সীমাবদ্ধ অভিন্নতাবোধকে ছাড়িয়ে নিজের ভিতর একটা জায়গা তৈরী করাটাই যোগ। প্রথমদিকে এটা শুরু হয় একটা ক্ষুদ্র বিন্দু হিসেবে। কিন্তু আপনি যদি এর জন্য জায়গা করতে শুরু করেন, আপনি যদি আপনার ছাইপাঁশের বোঝা খালি করতে থাকেন তখন এই জায়গাটাও প্রসারিত হতে শুরু করে। তারপর একটা দিন আসে যখন এটাই সমস্ত কিছু পরিব্যাপ্ত করে আর আপনার ছাইপাশগুলো শুধু চতুর্পাশে ভেসে বেড়ায়। ইচ্ছে হলে আপনি এগুলোকে তুলে ব্যবহার করতে পারেন, তা নাহলে এগুলো আপনাকে স্পর্শ করতেও পারবে না। আপনার যখন এইরকম অবস্থা হয় তখন আমরা বলি আপনি প্রকৃতই ধ্যানমগ্ন হয়েছেন, আপনি সমাধিস্থ, একটা সমভাবাপন্ন অবস্থা যেখানে এটা-সেটা কোনওকিছু আপনাকে প্রভাবিত করে না।
অবধূত
অর্থহীন একরাশ সাজ সরঞ্জাম ছাড়া, আপনি এ দুনিয়াতে বাঁচতে পারবেন না। আপনি কোনও রকম খেলা খেলতে জানবেন না। আপনি অবধূতের মত হয়ে যাবেন। আজকাল যে কেউ এই নামটা নিয়ে নিচ্ছেন, "আমি অবধূত; আপনিও অবধূত।" সেটা অন্য ব্যাপার। অবধূত হলেন এমন একজন যিনি এমন একটা বিশেষ অবস্থায় থাকেন যেখানে তাঁরা শিশুর মত হয়ে পড়েন - তাঁরা কিছুই জানেন না। তাঁদের আপনাকে খাইয়ে দিতে হবে, তাঁদের বসিয়ে দিতে হবে, দাঁড় করিয়ে দিতে হবে। তাঁরা এমন এক তুরীয়ানন্দে স্থিত যে তাঁরা জীবনের অন্য আর কোন দিকই কীভাবে সামলাতে হয় তার খোঁজ রাখেন না।
ইনি এমন এক ব্যক্তি যিনি তাঁর মনকে সম্পূর্ণ বিসর্জন দিয়েছেন - তিনি অর্থহীন ছাইপাঁশ থেকে পুরোপুরি মুক্ত। একটি শিশুর মত তাঁর দেখাশোনা করতে হবে; নইলে এ পৃথিবীতে তিনি বাঁচতেই পারবেন না। এইরকম অবস্থা হয়তো চিরকাল চলবে না, কিন্তু কিছু নির্দিষ্ট সময়ের জন্য থাকতে পারে। এমন লোক আছেন যারা বছরের পর বছর অবধূতের মতো থেকে যান। এটা অত্যন্ত আনন্দময় এবং চমৎকার এক অবস্থা, কিন্তু আবার আপনাকে দেখাশোনা করার জন্য আপনার কোন একজনকে দরকার হবে, তা নাহলে আপনি এই অবস্থায় বাঁচতে পারবেন না।
আমার কাছে, লোকজনকে এইসব অবস্থার মধ্যে ঠেলে দেওয়াটাই খুব সহজ-সরল ব্যাপার হত। এটা খুবই আনন্দময় এবং চমৎকার, কিন্তু তাদের দেখাশোনা করার জন্য লোকজন কোথায় পাওয়া যাবে? বিশ্বে আজকের সামাজিক পরিস্থিতিতে, একে কোন যথার্থ বিকাশ হিসেবে দেখা হবে না। এইরকম ব্যক্তিকে লোকেরা ভাববেন তাঁর মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছে এবং তাঁর পাগলা গারদে যাওয়া প্রয়োজন। তিনি অত্যন্ত খুব আনন্দের মধ্যেই থাকবেন কিন্তু তাতে ওঁদের কিছু যায় আসে না।
ভারতবর্ষে এই ধরণের অবস্থাগুলোর গুণকীর্তন করা হতো - অবধূতেরা পূজিত হতেন। দক্ষিণ ভারতে বেশ কয়েকজন অত্যন্ত চমৎকার অবধূতদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ ছিল। তাঁরা এমনই অবিশ্বাস্যরকম সত্বা ছিলেন কিন্তু কোন সাহায্য ছাড়া তাঁরা জীবনধারণে অক্ষম।
অল্প খানিক সময়ের জন্য এইরকম অবস্থায় যাওয়া মানুষের জন্য মঙ্গল এইজন্য যে এটা আপনার কর্মিক পরিকাঠামোর সর্বনিম্ন তলা ঝাঁট দিয়ে পরিষ্কার করার মত। এটা এই রকম, যেন কর্মিক কাঠামোর ১১০ টা তলা আছে, আর এই অবস্থায়, আপনি সর্বনিম্ন তলা ঝাঁট দিচ্ছেন, যেটা আপনি অন্য কোন অবস্থায় করতে সুযোগ পান না - কোন মানুষের জন্য এত গভীরে নেমে নিজেকে পরিষ্কার করতে বিপুল পরিমাণে সচেতনতার প্রয়োজন। কিন্তু এই ধরণের অবস্থায় একজন খুব সহজেই সর্বনিম্ন তলদেশ পরিষ্কার করতে পারেন। তিনি কোন কাজই করছেন না, তিনি কোন কিছুই জানেন না, কিন্তু তার কোন কর্ম নেই, কোন বন্ধন নেই, তাই তার জন্য সবকিছুই পরিষ্কৃত।
যোগীরা এইরকম অবস্থায় নিমগ্ন থাকেন কিছু কিছু সময়ের জন্য কারণ মুক্ত হওয়ার এটাই সবথেকে দ্রুত উপায়। কিন্তু আবার একই সময়ে প্রায় সব ক্ষেত্রেই এই অবধূতেরা তাদের দেহ অবধূত অবস্থায় থাকা কালীন ত্যাগ করতে পারেন না। এই একটা জিনিস মানুষের চেতনায় ঠিক বসানো আছে। আপনি ওই অবস্থায় শরীর ত্যাগ করতে পারেন না। আপনার শরীরকে ছাড়বার সময় আপনাকে সচেতন অবস্থায় আসতেই হবে। আর এই অবস্থার বাইরে থাকার ওই কয়েকটা মুহূর্তে, আপনি আবার একবার কর্ম সৃষ্টি করেন। আমাদের জানা আছে এই ধরনের মানুষদের যারা অবধূত অবস্থায় জীবন ধারণ করেছেন, প্রায় সম্পূর্ণরূপে মুক্ত, কিন্তু শেষ মুহূর্ত গুলোতে, তারা যখন এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতেন, তারা আবার তাদের কার্মিক পরিকাঠামোর মধ্যে ফিরে যেতেন। শুধুই সাধারণ কর্ম, বিরাট কিছু ব্যাপার নয়, কিন্তু তারা জানতেন না কিভাবে জট ছাড়িয়ে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করতে হয়।
একরাশ অর্থহীন সাজ-সরঞ্জাম
কাজেই, অর্থহীন একরাশ সাজ সরঞ্জাম ছাড়া, আপনি এই পৃথিবীতে বাঁচতে পারবেন না। এই অর্থহীন ছাইপাঁশগুলো উদ্ভূত হচ্ছে আমাদের মধ্যে প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া দ্বৈততার ভুল বোঝাবুঝি থেকে। আপনি যদি সকল দ্বৈততা অতিক্রম করে যান, আপনার অন্তরে যদি একটা মুক্ত জায়গা থাকে, তাহলে দ্বৈততা গুলো শুধু আপনার বাইরেই কাজ করে। আপনি যদি ইচ্ছে করেন, আপনি আপনার খেলা খেলতে পারেন, অন্যথায় আপনি যেভাবে আছেন সেভাবেই ঠিক আছেন। তখন ছাইপাঁশগুলো আপনার মধ্যে বিদ্যমান থাকলেও সেগুলোর সঙ্গে আপনার কোন সম্পর্ক নেই। আপনার ইচ্ছা করলে, আপনি ব্যবহার করতে পারেন, কিন্তু তা বলে এগুলো আর আপনি নন।
Editor’s Note: Find more of Sadhguru’s insights as he explores the realm of the enlightened in the ebook “Encounter the Enlightened.”