আয়ুষ্মান খুরানা: নমস্কার সদগুরু জী। আমি আয়ুষ্মান খুরানা, আমি রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত সচেতন মানুষ। রাজনৈতিক দিক থেকে ভারত অত্যন্ত বিপজ্জনক জায়গায় আছে... যেহেতু এটা বহুত্ববাদী সমাজ - আমরা বহু সংস্কৃতি, ধর্ম, অঞ্চল, জাতি, বর্ণের দেশ। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে চরম ডানপন্থা ও বামপন্থা দুটোই খুব বিপজ্জনক আর আমার রাজনৈতিক অবস্থান সম্ভবত মধ্যপন্থা। আপনার মতে সঠিক অবস্থান কোনটা? 

সদগুরু: আয়ুষ্মান - মানে দীর্ঘ জীবন যার। একটা জীবিত গণতন্ত্র মানে তুমি কখনই নির্দিষ্ট কোনও অবস্থান নেবে না। ইউনাইটেড স্টেটসে এটা চূড়ান্ত রূপ ধারন করেছে। যেন এটা দুটো আলাদা ধর্মে পরিণত হয়েছে আমেরিকায় – হয় তুমি ডেমোক্র্যাট, না হয় রিপাবলিকান। ব্যাপারটা যেন এরকম হয়ে গেছে – “আমার দাদু রিপাবলিকান ছিলেন, আমার বাবা রিপাবলিকান ছিলেন, তাই আমিও রিপাবলিকান”। 

একটি ঘটনার কথা বলি। আমেরিকার “রেড স্টেট” বলে পরিচিত এবং রিপাবলিকান দলের ঘাঁটি একটি প্রদেশে ডেমোক্র্যাটরা নির্বাচনী প্রচার করছিল। এক ডেমোক্র্যাট জনৈক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করল, “তুমি ডেমোক্র্যাটদের ভোট দাও না কেন”? উত্তরে ব্যক্তিটি বলল, “আমার দাদু রিপাবলিকান, আমার বাবা রিপাবলিকান, তাই আমিও রিপাবলিকান”। ডেমোক্র্যাট সমর্থকটি ঈষৎ বিরক্ত হয়ে বলল, “তোমার দাদু যদি একজন নির্বোধ হতো আর তোমার বাবা যদি একজন মূর্খ হতো, তাহলে তুমি কী করতে”? সেই ব্যক্তিটি উত্তর দিলেন, “সেক্ষেত্রে আমি ডেমোক্র্যাট হতাম”।

আমি কি ডানপন্থী, বামপন্থী বা মধ্যপন্থী? যখনই তুমি এই জাতীয় কোনও অবস্থান নিচ্ছো, তুমি গণতন্ত্রকে ধ্বংস করছো এবং সামন্ততান্ত্রিক (feudalism) ব্যবস্থায় ফিরে যাচ্ছো

ওদের প্রতীকটা কি কখনও দেখেছো ? একটি জীবিত গণতন্ত্রে, কখনই তোমার কোনও অবস্থান নেওয়া উচিত নয়। এই প্রাথমিক কথাটাই আমরা ভুলে গিয়েছি। আমাদের দেশও ঠিক ওই দিকেই যাচ্ছে, যেখানে প্রশ্ন উঠবে, “তুমি এদিকে আছো না ওদিকে”? এটা হওয়া উচিত এরকম যে, ঠিক আছে.... আমি পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে কিছু ভাবিনি, আমি দেখতে চাই কে কীভাবে কাজ করছে, কে বেশি কার্যকরী ! 

আমি কি ডানপন্থী, বামপন্থী বা মধ্যপন্থী? যখনই তুমি এই জাতীয় কোনও অবস্থান নিচ্ছো, তুমি গণতন্ত্রকে ধ্বংস করছো এবং সামন্ততান্ত্রিক (feudalism) ব্যবস্থায় ফিরে যাচ্ছো : “আমরা এই সম্প্রদায়ের মানুষ মানে শুধু এখানেই ভোট দেবো”! এভাবে চলতে থাকলে গণতন্ত্রই আর থাকবেনা। 

একটি জীবিত গণতন্ত্রে কখনই তোমার কোনও অবস্থান নেওয়া উচিত নয়। এই প্রাথমিক কথাটাই আমরা ভুলে গিয়েছি।

গণতন্ত্রের অর্থ হল, কী ধরনের নির্বাচনী অবস্থান তুমি নিতে চাও, প্রতি মুহূর্তে তার মূল্যায়ণ করে যেতে হবে। এবং আজ যে অবস্থান তুমি নিচ্ছো, সেটিও চিরস্থায়ী নয়। এই মুহূর্তে, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে, আমার মনে হয়, মীমাংসা হয় মাত্র চার থেকে পাঁচ শতাংশ মানুষের ভোটে, এরাই স্থির করে কে জিতবে বা কে হারবে। বাকিরা সবাই আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখে। 

ভারতে এই সংখ্যাটা সম্ভবত দশ থেকে বারো শতাংশের কাছাকাছি, হয়তো বা সর্বচ্চ পনেরো শতাংশ। কিন্তু আমার ধারনা এই আগামী নির্বাচনের মুখে আমরাও আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মতো সংখ্যায় পৌঁছবো - এই গণতন্ত্রান্তিক ব্যবস্থা আজ এতটাই বিকৃত হয়ে উঠছে। তোমাকে থাকতেই হবে কোথাও একটা দিকে। আজ তুমি বলতে পারো না যে তোমার কোনও অবস্থান নেই!

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, বিন্দুমাত্র রক্তপাত ছাড়াই ক্ষমতার পরিবর্তন হওয়া – এটাই গণতন্ত্রের মহিমা।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, বিন্দুমাত্র রক্তপাত ছাড়াই ক্ষমতার পরিবর্তন হওয়া – এটাই গণতন্ত্রের মহিমা । বিশ্বাস করো, এমনকি একটি পরিবারের মধ্যেও রক্তপাতহীন ক্ষমতার হস্তান্তর সম্ভব হয় না, যদি সেই পরিবারটি যথেষ্ট সম্পদশালী হয়। কিন্তু গণতন্ত্রের মহিমা এটাই যে, এতবড় দেশেও ক্ষমতার হস্তান্তর হচ্ছে এক বিন্দু রক্তপাত ছাড়াই। 

কিন্তু যত বেশি তুমি গোষ্ঠীগত মানসিকতাসম্পন্ন হয়ে উঠবে, তুমি আবার এই সামাজিক ব্যবস্থাটিকে এতটাই বিপথগামী করে তুলবে যে, তখন ক্ষমতার পরিবর্তন করতে চাইলে জনযুদ্ধ শুরু হবে। এই মুহূর্তে ব্যাপারটা এতটাই কুৎসিত হয়ে উঠছে যে, এমনকি স্যোশাল মিডিয়াতেও “ডিজিটাল” দস্যুরা নেমে পড়েছে একে অপরের বিরুদ্ধে কুৎসার ফুলঝুরি ছোটাতে। যেন একেবারে গোষ্ঠীযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। 

আমি যা বলতে চাইছি তা আমাকে চূড়ান্ত অপ্রিয় করে তুলতে পারে জানি, কিন্তু তবুও বলব, রাজনৈতিক দলগুলির সদস্য হওয়ার প্রথাটি অবিলম্বে বাতিল করা উচিত, কারণ এগুলো এক একটি উপজাতিতে পরিণত হচ্ছে। সময় এসেছে গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের পরিণত হওয়ার।

এভাবেই যদি কুৎসা, কুৎসা আর কুৎসার স্রোত বইতে থাকে, তাহলে সেদিনটা বোধ হয় খুব দূরে নয় যেদিন বন্দুক অথবা তরবারি নিয়ে মানুষ প্রকাশ্যে আসবে বিরুদ্ধ মতের মানুষকে জবাই করতে। এর প্রমাণ আমরা ইতিমধ্যেই পেয়েছি, শুধুমাত্র WhatsAPP-এর মাধ্যমে তথ্য আদানপ্রদান করে একটি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হিংস্র আক্রমণ শাণিত হতে দেখেছি আমরা।

 

আমি যা বলতে চাইছি তা আমাকে চূড়ান্ত অপ্রিয় করে তুলতে পারে জানি, কিন্তু তবুও বলব, রাজনৈতিক দলগুলির সদস্য হওয়ার প্রথাটি অবিলম্বে বাতিল করা উচিত, কারণ এগুলো এক একটি উপজাতিতে পরিণত হচ্ছে। সময় এসেছে গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের পরিণত হওয়ার। সুতরাং, আয়ুষ্মান তোমার কোনও অবস্থান নেওয়াই উচিত নয়। কোনও সরকারের মেয়াদ শুরুর সাড়ে চার বছর পর, চার থেকে ছমাস সময় নাও কি হয়েছে, তা মূল্যায়ন করার জন্য। সেই সাড়ে চার বছরে যা যা হয়েছে তারজন্য কি ক্ষমতাসীন দলকে আরও একবার সুযোগ দেওয়া যায় নাকি একদল নতুন মানুষকে ক্ষমতায় আনা উচিত। প্রত্যেক নাগরিকের এই বিষয়টা নিয়ে ভাবা উচিত শেষ তিন থেকে ছ’মাসের মধ্যে। 

সম্পাদকের কথা: যে প্রশ্নের উত্তর দিতে সকলেই অপারগ, যদি এমন কোনও বিতর্কিত বা স্পর্শকাতর প্রশ্ন থাকে অথবা যদি কোনও আপাত কঠিন প্রশ্ন নিজেকে ক্রমাগত বিব্রত করতে থাকে, সেক্ষেত্রে জীবনের সব অমীমাংসিত প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার সুযোগ রয়েছে এখানে। সদগুরুকে আপনার প্রশ্ন করুন UnplugWithSadhguru.org.

Youth and Truth Banner Image