“৩” সংখ্যাটির ম্যাজিক
সুরকার, সঙ্গীতশিল্পী ও শঙ্কর-এহসান-লয় ত্রয়ীর অন্যতম, শঙ্কর মহাদেবন বিষ্মিত ও অভিভূত “৩” সংখ্যাটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য নিয়ে। বর্তমানের মধ্যে অতীত ও ভবিষ্যৎ কীভাবে সম্পৃক্ত আছে তার বিশ্লেষণের মাধ্যমে এই “৩” সংখ্যাটির অন্তর্নিহিত সত্য উদ্ঘাটন করলেন সদগুরু
শঙ্কর মহাদেবন: বিগত পঁচিশ বছর ধরে আমরা তিনজন সুরসৃষ্টি করছি শঙ্কর-এহসান-লয় নামে। আমাকে সর্বদাই যা বিষ্মিত করে তা হল, ৩ সংখ্যাটির ধারণা। এই ৩ সংখ্যাটি জীবনের বিভিন্ন আঙ্গিকের সঙ্গে সম্পর্কিত যেমন, নিউট্রন, প্রোটন, ইলেকট্রন বা ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ। তাই এই ৩ সংখ্যাটির প্রাসঙ্গিকতা, গুরুত্ব ও প্রভাব কী ?
সদগুরু: নমস্কার ত্রিমূর্তি শঙ্কর, এহসান, লয় – কে। আমাদের জীবনে যে ত্রিমূর্তি, ত্রিনেত্র, ত্রিশূল, ত্রিকাল – এগুলির অস্তিত্ব রয়েছে তা প্রকৃত পক্ষে মানবিক জীবনের সূক্ষ্মতম অনুভূতির অভিব্যক্তি।
মানুষের জীবনের যাবতীয় অভিজ্ঞতার মৌলিক প্রকরণের প্রথমটি হল তার স্মৃতি, যা অতীত বা ভূত-কাল; দ্বিতীয়টি হল আমাদের বর্তমানের অভিজ্ঞতা যা এই মুহূর্তের সঙ্গে সম্পৃক্ত; এবং আরেকটি হল তার কল্পনা ও আকাঙ্ক্ষা যা কিনা ভবিষ্যতেরদ্যোতক। জীবনের এই ব্যপ্ত ও প্রগাঢ় অভিজ্ঞতাই আমাদের সংস্কৃতিতে প্রতিভাত হয় “ত্রি-রূপে”: ত্রিনেত্র, ত্রিকাল, ত্রিশূল, এবং তোমাদের এই, ত্রিমূর্তি।.
কিন্তু এই মৌলিক জীবনবোধ প্রত্যক্ষ অনুভূতিতে নিয়ে আসা জরুরী যে, অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ, জীবনের এই তিন মাত্রাই একই সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে আছে বর্তমানের এই মুহূর্তটির মধ্যে। অতীত ও ভবিষ্যৎ মিশে আছে বর্তমানের মধ্যেই, ঠিক এই মুহূর্তে দাঁড়িয়েই ঘটছে অতীত অভিজ্ঞতার স্মৃতিচারণা কিংবা ভবিষ্যতের কল্পনা।
এটা শেখানোর চল শুরু হয়েছে যে, “এই মুহূর্তে বাঁচো”। এটা শেখান যারা, কোনও সন্দেহ নেই যে তারা শুধু বর্তমানের উপাসক! কিন্তু আমি একটা কথা বুঝতে পারিনা যে, কেন ওরা সারা পৃথিবী জুড়েই, বিশেষত আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র এবং তার কুপ্রভাবে ভারতের পশ্চিম প্রান্তের অঞ্চলগুলিতে তোমাকে শুধু এই মুহূর্তেই বাঁচার কথা বলে, তুমি অন্য কোনও মুহূর্তে থাকবেই বা কি করে! ঠিক এই মুহূর্তে ছাড়া তুমি অন্য কোনও মুহূর্তে থাকতেই পারো না। আমাদের জীবনের শিকড় প্রোথিত হয়ে আছে বর্তমান মুহূর্তটিতেই।.
বর্তমানের পূজারী ওই সব শিক্ষকরা যা শেখান তা হল, “অতীতের কথা ভেবো না, ভবিষ্যতের কথা ভেবো না”। মানুষের আজকের মস্তিষ্কের সেরিব্রাল নৈপুণ্যের স্তরে পৌঁছাতে কয়েক লক্ষ বছর লেগেছে, যার ফলস্বরূপ আজ এক প্রাণবন্ত স্মৃতি ও অনন্য কল্পনাশক্তির অধিকারী আজকের মানুষ, কিন্তু তা সত্ত্বেও আজ যে কেউ এসে বলছেন, “মস্তিষ্কের নৈপুণ্যকে জলাঞ্জলি দাও, কেঁচো হয়ে বেঁচে থাকো”। আমি কেঁচোর বিরুদ্ধে নই - এটি অত্যন্ত প্রকৃতি বান্ধব প্রাণী – কিন্তু আজকের মানুষের অনন্য সেরিব্রাল নৈপুণ্যের স্তরে পৌঁছাতে শ্রেষ্ঠতম বিবর্তন প্রক্রিয়াটিকে শুধুমাত্র এক অর্থহীন দার্শনিক তত্ত্বের কারণে জলাঞ্জলি দেওয়া একেবারেই উচিত কাজ নয়।
যারা বলে, “এই মুহূর্তে বাঁচো’, তারা এটা বলে কারণ, স্মৃতিশক্তি ও কল্পনাশক্তি, মানবিক হওয়ার অসাধারণ এই চরিত্র বৈশিষ্ট্যের দুটিই তাদের জীবনের সীমাহীন যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওই দুটিই সাধারণ জীবনের যন্ত্রণার মৌলিক উৎস – দশ বছর আগের ঘটনার স্মৃতি মানুষকে যন্ত্রণা বিদ্ধ করতে পারে, আগামীকালেরও পরের ঘটনার কল্পনা করে এই মুহূর্তে যন্ত্রণার অনুভূতি আসতে পারে।
স্মৃতি এবং কল্পনা নামের অনন্য মানবিক গুণাবলীকে তারাই ত্যাগ করতে চায় যারা তাদের চিন্তাশক্তি ও আবেগকেসামলানোর উপায় সম্পর্কে অবহিত নয়। যদি তুমি আনন্দের সাথে স্মৃতিচারণা করতে জানো এবং উদ্দীপনা আর উচ্ছাস নিয়ে ভবিষ্যতের কল্পনায় মেতে উঠতে পারো, তুমি কি চাইবে ওই দুটি মানবিক গুণকে জলাঞ্জলি দিতে ? আসলে যা হয়, স্মৃতি ও কল্পনার প্রবণতা দুটিই একসময় অদম্য (compulsive) হয়ে ওঠে। ওই অদম্য প্রবণতাগুলিই কষ্ট ও যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই কারণেই চারপাশে সকলকে বলতে শোনা যায়, অতীতকে ভুলে থাকো, ভবিষ্যতের কল্পনা করো না। মানব জীবন পরিচালনের এটি সর্বোত্তম পথ নয়।
জীবনের আঙ্গিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ত্রিকাল, the ত্রিশূল ও ত্রিনেত্রনামের ওই ত্রয়ীর উপস্থিতি। জীবনের ত্রিমাত্রাকে প্রত্যক্ষ অনুভূতিতে নিয়ে আসার সূক্ষ্মতম প্রকরণ হল ওই ত্রয়ী। এবং তোমাদের এই ত্রিমূর্তি, শঙ্কর, এহসান ও লয়-ও রয়েছে এখানে। আরও সুন্দর সুরসৃষ্টির মাধ্যমে তোমরা মানুষকে আরও আনন্দ দিতে থাকো।
সম্পাদকের কথা: যে প্রশ্নের উত্তর দিতে সকলেই অপারগ, যদি এমন কোনও বিতর্কিত বা স্পর্শকাতর প্রশ্ন থাকে অথবা যদি কোনও আপাত কঠিন প্রশ্ন নিজেকে ক্রমাগত বিব্রত করতে থাকে, সেক্ষেত্রে জীবনের সব অমীমাংসিত প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার সুযোগ রয়েছে এখানে। সদগুরুকে আপনার প্রশ্ন করুন UnplugWithSadhguru.org.