যোগ এ এতো "নিয়ম" কেন?
যোগ শিখলে কি প্রচুর নিয়ম পালন করতে হয়? সদগুরু ব্যাখ্যা করছেন - যোগ নিয়ম কানুনের ব্যাপার নয়, এটা হল মানব দেহের জ্যামিতিকে বোঝা।
யோகாவில் ஏன் இத்தனை “விதிமுறைகள்”?
একজন নতুন শিক্ষার্থীর কাছে যোগ যুক্ত জীবনযাত্রা গ্রহণ করা মানে প্রচুর নতুন নিয়ম পালন করা মনে হতে পারে। তবে সদগুরু ব্যাখ্যা করছেন, মানব দেহের জ্যামিতিকে বোঝা কোন মানুষের তৈরী নিয়ম নয় বরং ন্যূনতম সংঘাতের সাথে বাঁচার এক উপায়।
প্র: আমি 'হঠযোগ শিক্ষক প্রশিক্ষণের' মধ্যে রয়েছি। এখানে কীভাবে সঠিকভাবে বসতে হয়, কী খেতে হবে এবং কেমনভাবে খেতে হবে, এমনকি কীভাবে শ্বাস নিতে হবে সবকিছু পূঙ্খানুপুঙ্খভাবে নজর দেওয়া হয়। নিজেকে হাসিখুশি রাখা, আর এইসব নতুন নিয়ম-কানুন পালন করতে গিয়ে নিজেকে শোচনীয় করে তোলার মধ্যে সীমারেখাটা কোথায়?
সদগুরু: প্রথম কথা, এগুলো কোন নতুন নিয়ম - কানুন নয়। এইগুলো নিশ্চিতভাবে কোন কানুন নয়। হয়ত এগুলোকে আমরা নিয়ম বলতে পারি - সেটা এটাকে দেখার একটা দৃষ্টিভঙ্গি। ভারতীয় সংস্কৃতিতে কখনও কোন ধর্মাদেশ ছিল না। আর ঈশ্বর ভারতীয়দের আদেশ দিতে পারেন না - কারণ ওরা তর্ক করবে। তারা অজস্র প্রশ্ন করবে। আমরা যখন কৈলাশ যাত্রায় গেছিলাম, একছন ভারতীয় অংশগ্রহণকারি একটা বেশ জটিল প্রশ্ন নিয়ে সামনে এলেন। আমি বললাম, "দেখুন, এটা একটা ভারতীয় সমস্যা। আপনি ভাবতে থাকেন কীভাবে আরও জটিল একটা প্রশ্ন নিয়ে আসা যায়।" একজন চীনা ভদ্রমহিলা একমত হয়ে বললেন, "ঠিক বলেছেন! আমি রাষ্ট্রপুঞ্জের হয়ে কাজ করি আর আমি বরাবরই অবাক হয়েছি কেন শুধু ভারতীয়রাই এতো প্রশ্ন করেন।" আমাদের দীর্ঘকালের ঐতিহ্য সবকিছুকে প্রশ্ন করার।
ঈশ্বর তাঁর দূত এবং তার সন্তানকে অন্যান্য জায়গায় পাঠিয়েছিলেন, তাই লোকজন এটা দাবী করতে পারেন যে তাদের যাকিছু নিয়মকানুন আছে সব ঈশ্বরের দেওয়া আর তাকে প্রশ্ন করার সাহস কারোর ছিল না। এখানে ঈশ্বর স্বয়ং এসেছিলেন এবং এমনকি তিনি কার সাথে কথা বলবেন সেটাও খুব সন্তর্পণে বেছে নিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও প্রশ্নের শেষ নেই। আপনারা জানেন অর্জুন কৃষ্ণকে কতো প্রশ্ন করেছিলেন! কৃষ্ণের পক্ষে অর্জুনকে ধর্মাদেশ দেওয়া সম্ভব হয় নি। তিনি তাকে বোঝানোর চেষ্টা করতে থাকেন, কিন্তু অর্জুনের অজস্র প্রশ্ন ছিল।
ভারতীয় সংস্কৃতিতে জীবনকে যা পরিচালিত করে তাকে আমরা "ধর্ম" বলে উল্লেখ করি। গৌতম বুদ্ধ সেটাকে "ধম্ম" বলে উল্লেখ করতেন। দুর্ভাগ্যবশত আজকের দিনে মানুষ সচরাচর ধর্মকে "রিলিজিয়ন" ভেবে ভুল বোঝেন; কিন্তু ধর্ম মানে নিয়ম - কোন শিক্ষা, দর্শন, বিশ্বাস ব্যাবস্থা বা রিলিজিয়ন নয়।
অস্তিত্বের নিয়ম
মানুষের তৈরী অনেক নিয়ম আছে যা সমাজ ও জগতের নানারকম বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে যাতে করে ওগুলো যতটা সম্ভব নির্বিঘ্নে চলতে পারে। যেমন ধরুন ভারতে রাস্তার বাঁদিকে আপনার গাড়ি চালানোর কথা। এটা কোন পরমসত্য নয় কিন্তু এটা একটা চুক্তি - যেটা নির্বিঘ্নে যানবাহন চলাচলের জন্য তৈরী করা হয়েছিল। আরেকটা বিষয় হলো গাড়িগুলোকে সেভাবেই তৈরী করা হয়েছে। সেই রকমই অনেক আইন ও বন্দোবস্ত রয়েছে যা সমাজকে পরিচালিত করে, যাতে করে আমরা একে অপরের সাথে সংঘর্ষে না জড়িয়ে পড়ি। কিন্তু সমাজ আর মানবসৃষ্ট আইন তৈরীর আগেও জীবন নির্বিঘ্নেই ঘটত এবং এর ক্রমবিবর্তন ঘটেছে। সেটা ঘটার জন্যে এসবের পরিচালনকারী কিছু মৌলিক নিয়ম অবশ্যই থাকতে হবে।
উদাহরণ দিতে হলে - ধরুন আপনি যদি জঙ্গলে হেঁটে যান, আপনি হয়ত এর নিয়মগুলোকে বুঝে উঠতে পারবেন না, কিন্তু জঙ্গলটা কোটি কোটি বছর ধরে বিদ্যমান। জঙ্গলটা ধ্বংস না হয়ে গিয়ে বা প্রাণীগুলো সব নিজেদের পরস্পরকে ধ্বংস না করে এটার এত দীর্ঘকাল ধরে টিকে থাকার জন্য অবশ্যই কিছু নিয়ম রয়েছে যা এটাকে পরিচালনা করছে। এই সংস্কৃতিতে মানুষজন সেই সমস্ত নিয়মগুলোর প্রতি মনযোগ দিয়েছিলেন যা পরিচালনা করছে মহাবিশ্বকে, আমাদের অন্তরের প্রকৃতিকে এবং সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে। এবং তাঁরা সেগুলো বুঝে উঠতে পেরেছিলেন - কল্পনা করে নয় বা নিছক বিশ্বাস দিয়ে নয় বরং জীবনের নানান ক্ষেত্রে নিরন্তর পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে।
কীভাবে বসতে হয়, সেটা আমি আবিষ্কার করিনি। মানব শরীরটা নির্মিত হয় একটি নির্দিষ্ট উপায়ে৷ ধ্যানলিঙ্গের সামনে নন্দী যেভাবে বসে রয়েছে - একটা ষাঁড়ের জন্য সেটা সঠিক উপায়। কিন্তু আপনি মানুষ হয়ে জন্মেছেন, কাজেই আপনার দেহের জ্যামিতিটা অন্যরকম। সমস্ত ভৌত জিনিস ও জীবনের সমস্ত ভৌত বিষয়গুলোর একটা জ্যামিতিক ভিত্তি আছে। আপনি যদি ভৌত কোনকিছুর জ্যামিতিটা বুঝতে পারেন - তা সেটা মানব শরীর হোক, একটা ষাঁড় বা একটা যান্ত্রিক বস্তু - আপনি সেটাকে তার সর্বোচ্চ কার্যক্ষমতায় ব্যবহার করতে পারবেন।
এই গ্রহের বাকি সমস্ত জীবই তাদের দেহের জ্যামিতি বোঝে এবং কীভাবে সেটাকে পরিপূর্ণভাবে ব্যবহার করা যায় তা জানে। একমাত্র মানুষেরাই সেটা করে না, কারণ তারা নিজেদের উপর ছাড়া বাকি সবকিছুতেই মনযোগ দেয়। কাজেই ঈশা 'হঠ যোগের' নির্দেশগুলো নতুন নিয়ম নয়। আপনি যদি নিজের দেহের জ্যামিতির প্রতি মনোযোগ দেন - তাহলে আপনি একটা নির্দিষ্টভাবে ওঠা-বসা করবেন যাতে করে আপনার শরীরের ন্যুনতম শক্তি খরচ হয় অথচ সর্বাধিক প্রভাব ফেলতে পারে। ভৌত জগতে আপনার কর্মদক্ষতা নির্ভর করে আপনার এই জ্যামিতিটা বোঝার উপর। অন্যভাবে বললে, আপনি সামাজিক অনুকরণ থেকে সচেতনতার দিকে অগ্রসর হচ্ছেন।
আমরা যদি সমস্ত আসবাবপত্র সরিয়ে দিই - আপনি আপনার শরীরের জ্যামিতি খুঁজে পাবেন। খাবারের ক্ষেত্রেও তাই৷ মানুষের দেহতন্ত্রটি নির্দিষ্ট ধরনের খাবারের জন্য ডিজাইন করা। কিন্তু টিকে থাকার চেষ্টায় বা সংস্কৃতিগত প্রভাবের কারণে মানুষজন হয়ত নানান্ ধরনের সব খাবার খেয়েছেন। বাস্তবে পৃথিবীর কোন প্রান্তে কেউ যদি এক চাপ মাংস খেয়ে থাকে তবে সেটা টিকে থাকার জন্য, পছন্দের জন্য নয়। হয়ত তারা সেখানে অন্যকিছু চাষ করতে পারেননি বা তারা চাষবাস করতে জানতেন না। পরবর্তী কালে এটা একটা পছন্দের বিষয় বা বলতে পারেন তাদের সংস্কৃতির একটা অংশ হয়ে দাঁড়ায়। যদি ব্যাপারটা টিকে থাকার জন্য হয়ে থাকে তাহলে একদম ঠিক আছে। এটা কোন নৈতিক মূল্যবোধের বিষয় নয়। ব্যাপারটা এই যে যদি আপনি যন্ত্রে ভুল জ্বালানি ভরেন, কর্মদক্ষতা আশা করতে পারেন না।
একটি সুদক্ষ জীবন
দক্ষতা মানে শুধু কোন একটা জিনিস ভালো করে করা নয়। একবার যখন আপনি মানুষ হয়ে জন্মেছেন, তার মানে আপনি একটা বুদ্ধিমত্তা নিয়ে এসেছেন যাতে করে যাকিছু করা প্রয়োজন আপনি তা সবই করতে পারেন এবং সর্বোপরি মানবসত্তার সম্পূর্ন গভীরতা এবং সর্বোচ্চ মাত্রার নাগাল পান। মানব জীবনকে তার সার্থকতায় পর্যবসিত করতে, বিপুল বৈচিত্র্যময় কিছু করার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে, সর্বোপরি সেই মানের সংবেদনশীলতা আনতে যাতে করে আপনি মানুষ হওয়ার সমস্ত মাত্রাকে উপলব্ধি করতে পারেন - যদি আপনার খাদ্য, শরীরের চালচলন বা মানসিকতা এটা ঘটতে না দেয়, তাহলে আমি বলবো এটা একটা অক্ষম জীবন। সঠিক জিনিস করাটা নৈতিক মূল্যবোধ, স্বর্গের টিকিট বা সামাজিক স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য নয়। সঠিক জিনিস করাটা একজনের জীবন সর্বাধিক ফলপ্রসূ হওয়ার জন্য। এবং বিভিন্ন মানুষ এটাকে বিভিন্ন ভাবে দেখেন। কিন্তু শেষমেশ, যতক্ষণ না আপনি জানতে পারেন জীবন কোন নিয়মে পরিচালিত হচ্ছে, ততক্ষণ আপনি যতখানি কর্মদক্ষ হতে পারতেন ততখানি কর্মদক্ষ হতে পারবেন না।
আপাত দৃষ্টিতে মিথ্যাও ফল দেয় বলে মনে হতে পারে। একবার এমনটা ঘটেছিল - দুটো গাড়ি একে অপরের সাথে ধাক্কা খেল। একটার চালক ছিলেন একজন ডাক্তার আর অন্যটার চালক ছিলেন একজন উকিল। সংঘর্ষের পর তারা কোন রকমে গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলেন। উকিলটি তার গাড়ির ভেতর থেকে একটা হুইস্কির বোতল বার করে বললেন, "আমাদের এখন ফূর্তি করা উচিত। এত ভয়ানক একটা দুর্ঘটনা ঘটল অথচ আমরা কেউই আহত হই নি। আসুন মশাই!" তিনি বোতলটা ওনার হাতে দিলেন। দুর্ঘটনার কারণে ডাক্তারটি কিছুটা ঘাবড়ে ছিলেন, তাই তিনি একটা বড়ো লম্বা চুমুক দিয়ে বোতলটা উকিলকে ফেরত দিলেন। উকিল সেটাকে গাড়িতে রেখে দিলেন। ডাক্তারটি জিজ্ঞাসা করলেন, "আপনি খাবেন না?" উকিলটি বলল, "পুলিশরা যাওয়ার পর।"
কখনও কখনও চালাকি কাজ দেয়। কিন্ত আপনি যদি বারবার এই ধরনের জিনিস করতে থাকেন, অন্যেরা জেনে যাবে কী করতে হবে এবং জীবনও বুঝে যাবে আপনার সাথে কী করা দরকার। যদি আপনি জীবন পরিচালনকারি নিয়মগুলোর সাথে ঐক্যে না থাকেন, আপনি অবধারিতভাবে জীবনের প্রক্রিয়ায় পিষ্ট হবেন। অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রেই জীবনে তেমন কোন বড়ো বিপর্যয় ঘটেনা। বাইরের জগত হয়ত তাদের প্রতি সহৃদয় থেকেছে, কিন্তু শেষমেশ জীবন তাদের ভেতর থেকে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। এটা ঘটার কারণ জীবনের পরিচালনকারি নিয়মগুলোর সাথে ঐক্যের অভাব, এছাড়া আর অন্য কোনও কারণে নয়। এর পরিণামে ঘর্ষণ আসবেই। নিজের মধ্যে ঘর্ষণের জন্য আসে যন্ত্রণা আর ভোগান্তি, উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা, কষ্ট, দুঃখ, পাগলপন - যে নামে ডাকবেন। ঘর্ষণের পরিনাম নির্ধারণ করে সময়ের সাথে সাথে আপনার মুখে কতখানি বিরক্তির ছাপ পড়বে। যদি কোন ঘর্ষণ না থাকে, আপনার মুখে হাসি থাকবে।
মানুষের মধ্যে যে এতসব সম্ভাবনার দরজা খুলে গিয়েছে - তার কারণ প্রকৃতি একটি নির্দিষ্ট নিয়মের কাঠামো মেনে চলে। যেহেতু যেমন চলার কথা প্রকৃতি সেইভাবেই চলছে - তাই আপনি একজন মানুষ হতে পেরেছেন। এটা যদি অন্যভাবে চলত তাহলে আপনি হয়ত একটা ষাঁড় বা একটা গাছ হয়ে আসতেন।
যদি আপনি মনযোগ দেন এবং বোঝেন মানব দেহতন্ত্র নিজেকে কীভাবে এবং কেন তৈরী করেছে, যদি আপনি এই নিয়মগুলোর মেনে চলেন এবং এদের সাথে ঐকতানে থাকেন, আপনার গঠনতন্ত্র চলবে ন্যূনতম ঘর্ষণের মধ্যে দিয়ে। যদি কোন ঘর্ষণ না থাকে, আপনি হতাশাগ্রস্ত বা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবেন না। আপনি রোজ রোজ কষ্টও তৈরী করবেন না। যদি আপনি না জানেন কীভাবে নিজের গঠনতন্ত্রকে ঐক্যে আনতে হয়, অন্তত কৃপা দিয়ে নিজের জীবনকে সহজ করুন। আপনার কাছে কোন সুন্দর যন্ত্র থাকলেও প্রয়োজনীয় তেল না দিলে ওটা বিকট শব্দ করবে। এখানেই দরকার পড়ে কৃপার। আপনার যন্ত্র সঠিকভাবে ঐক্যে নেই, তবুও কৃপা সেটাকে ঘর্ষণমুক্ত করবে।
Editor’s Note: Isha Hatha Yoga programs are an extensive exploration of classical hatha yoga, which revive various dimensions of this ancient science that are largely absent in the world today. These programs offer an unparalleled opportunity to explore Upa-yoga, Angamardana, Surya Kriya, Surya Shakti, Yogasanas and Bhuta Shuddhi, among other potent yogic practices.