কুম্ভ মেলা – মানবজাতির বৃহত্তম সমাবেশ
বিশ্বের সবচেয়ে বড় আধ্যাত্মিক সমাবেশ - কুম্ভ মেলার পেছনের গুরুত্ব আর বিজ্ঞান নিয়ে সদগুরু আলোকপাত করছেন। তিনি প্রয়াগে গিয়ে কুম্ভ মেলার যে অভিজ্ঞতা করেছেন তারও বর্ণনা করলেন।
महाकुम्भ मेला: क्या है इसका विज्ञान?
கும்பமேளா – ஏன் இவ்வளவு சிறப்பு?
...সূর্যের দৈনন্দিন ধরিত্রী পরিক্রমায় সূর্যালোকের তলে এই ধরায় ভারতকে সবচেয়ে অসাধারণ দেশ হিসাবে গড়তে মানুষ এবং প্রকৃতি উভয়েই প্রচেষ্টায় কোনও ত্রুটি রাখেনি। - মার্ক টোয়েইন
2001 সালে মহা কুম্ভ মেলার সময়, 6 কোটি মানুষ এলাহাবাদে জমায়েত হয়েছিল। আমি কখনও এমন কোথাও যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা অনুভব করিনি, কিন্তু এই মেলা নিয়ে এত আলোচনা হচ্ছিল দেখে এই অবিশ্বাস্য আকারের মহৎ অনুষ্ঠানটি দেখতে আমি কোয়েম্বাটুর থেকে সেখানে নিজেই গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।
এটি বিশ্বের সবচেয়ে অবিশ্বাস্য দৃশ্যগুলোর মধ্যে একটি। আমি সেখানে প্রায় রাট ২ টোয় পৌঁছাই এবং দেখি দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সব ধরনের মানুষ সেখানে বসে ছিল। তাঁদের ঘুমানোর জায়গা ছিল না, তাই ছোট ছোট আগুন জ্বালিয়ে তাঁরা নিজেদের ভাষায় গান, নৃত্য ও সংস্কৃতিতে মেতে ছিলেন। মানবতার সবচেয়ে খারাপ এবং সবচেয়ে ভালো সবাই সেখানে জড়ো হয়েছিল – সুযোগের সন্ধানে থাকা প্রত্যেক ধরনের প্রতারক যেমন এসেছিল, তেমনই উপস্থিত হয়েছিলেন অনেক মহান যোগীও। হাজার বছর ধরে মানুষ এভাবে সমবেত হয়ে আসছেন। এটি একটি ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি যাকে আপনি মেরে ফেলতে পারবেন না, এবং এর একটি নির্দিষ্ট সামাজিক গুরুত্ব রয়েছে। কিন্তু এর একটি নির্দিষ্ট আধ্যাত্মিক শক্তিও রয়েছে।
পৃথিবী এবং চাঁদ চক্রে চলাচল করে।.সকলের উপরেই এই চক্রগুলো প্রভাব ফেলে, কিন্তু এই চক্রগুলো হয় আমাদের বন্দি করতে পারে, অথবা এক জীবন চক্র থেকে অন্য জীবনে উত্তরণের একটি মাধ্যম হতে পারে। যে মুক্তি চায়, সে ক্রমাগত খুঁজছে কীভাবে নিজের তৈরি করা চক্র থেকে মুক্তি পাবে। বিভিন্ন ধরনের চক্র আছে, সবচেয়ে লম্বা চক্রটি 144 বছরের; প্রতি 144 বছর অন্তর সৌরজগতের মধ্যে খুব উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা ঘটে, যার উদযাপনে একটি মহাকুম্ভ মেলা হয়।
কুম্ভ মেলা দেশের নির্দিষ্ট কয়েকটি স্থানে অনুষ্ঠিত হয় এবং এই স্থানগুলিকে কেন্দ্র করে একটি সম্পূর্ণ শক্তি ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছিল। যেহেতু গ্রহটি ঘুরছে, তাই এটি একটি কেন্দ্রাতিগ শক্তি উৎপন্ন করে। 0 থেকে 33 ডিগ্রি অক্ষাংশে, এই শক্তি আপনার ব্যবস্থায় প্রধানত উল্লম্বভাবে কাজ করছে, এবং বিশেষ করে 11 ডিগ্রিতে, শক্তিগুলি সোজা ঊর্ধ্বমুখী হয়। তাই, প্রাচীন কালে এই স্থানগুলিকে খুঁজে চিহ্নিত করা হয়েছিল যাতে মানুষ সেখানে এসে উপকৃত হতে পারেন। অনেক স্থান ঘটনাক্রমে নদীর মিলনস্থলে অবস্থিত এবং সেই এলাকায় স্নান করলে উপকার লাভ হয়। বিশেষ দিনে এই জায়গাগুলোতে থাকলে দুর্লভ সুযোগ পাওয়া যায়, তাই মানুষ এই সুযোগ নিতে সেখানে জড়ো হয়। এইসব মানুষের মধ্যে অনেকেই কৃষক এবং সাধারণ মানুষ, যাঁরা সীমিত সম্পদ সম্বল করেই দীর্ঘ দূরত্ব ভ্রমণ করে সেখানে শুধু মুক্তি লাভের আকাঙ্ক্ষায় চলে আসেন। পৃথিবীর অন্য কোথাও সমগ্র জনজাতি এত তীব্রভাবে মুক্তির জন্য আকাঙ্ক্ষা করে না।
বেশিরভাগ ভারতীয়রাই ভারতে কত গভীর আধ্যাত্মিক কাজ আগে হয়েছে আর এখনও হচ্ছে, তা জানে না। এই ভূমি সর্বদা বিশ্বের আধ্যাত্মিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত হয়ে এসেছে, শুধুমাত্র কারণ অন্য কোনও সংস্কৃতিই অভ্যন্তরীণ বিজ্ঞানের দিকে এতটা প্রজ্ঞার সাথে তাকায়নি। এখানে মুক্তি বা নির্বাণই সর্বোচ্চ লক্ষ্য হয়ে এসেছে, এবং এমনকি ঈশ্বরকেও এখানে সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর একটি ধাপ হিসেবে দেখা হয়।
দুর্ভাগ্যবশত, আজকের যে আধ্যাত্মিক সংস্কৃতি আমরা দেখি তা অনেকভাবেই বিদেশি আক্রমণে নষ্ট হয়েছে আর দীর্ঘদিনের দারিদ্র্যের জন্য বিকৃত হয়েছে। তবুও, আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়ার মূল সারটি বিনষ্ট হয়নি, এবং বিনষ্ট করা যাবেও না। সময় এসেছে এই গভীর ঐতিহ্যকে পূর্ণ মর্যাদা দিয়ে এর থেকে উপকার পাওয়ার।