গল্প ১ : শিব এবং সেই গরুর গাড়ি

সদগুরু: প্রায় তিনশো বছর আগেকার ঘটনা । কর্ণাটকের দক্ষিণাঞ্চলে এক ভক্ত ছিলেন যাঁর মায়ের বেশ বয়স হয়েছিল । তাঁর মায়ের ইচ্ছে ছিল কাশী যাবেন, আর বিশ্বনাথের কোলে, শিবের কোলে প্রাণ ত্যাগ করবেন। তিনি জীবনে কখনও কিছুই চাননি, কেবল এই একটি জিনিসের জন্য তিনি ছেলের কাছে অনুরোধ করলেন।তিনি বললেন, “দয়া করে আমায় কাশি নিয়ে চল, আমার বয়স হচ্ছে, আমি ওখানে গিয়েই মরতে চাই।”

লোকটি এই বৃদ্ধা মাকে নিয়ে দক্ষিণ কর্ণাটক থেকে জঙ্গলের মধ্য দিয়ে হাঁটা দিলেন কাশীর উদ্দ্যেশে- যা বহুদূর পথ। বয়স হওয়ার কারণে, মা অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তখন তিনি মাকে নিজের কাঁধে তুলে নিলেন, ফলে স্বভাবতই খুব শীঘ্রই তিনি পরিশ্রান্ত হয়ে পড়লেন। নিজেকে চালিয়ে নিয়ে যেতে তাঁর একটাই উপায় ছিল - শিবের কাছে বিনতি করা, “হে শিব, দয়া করে আমার এই একটি কাজে আমাকে ব্যর্থ হতে দিও না, আমার মায়ের এই একটিই অনুরোধ, আমাকে তা পূর্ণ করতে দাও। আমি ওনাকে কাশী নিয়ে যেতে চাই। আমরা তো ওখানে আসছি শুধু আপনার জন্যই। দয়া করে আমাকে শক্তি দিন।”

এইভাবে চলতে চলতে তিনি একটি ঘণ্টার শব্দ শুনতে পেলেন, পেছন পেছন কোনও গরুর গাড়ি এলে যেমন শব্দ হয়। তিনি দেখতে পেলেন একটি এক-বলদে টানা গরুরগাড়ি কুয়াশার মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসছে, যেটা খুব অদ্ভুত কারন সেই অঞ্চলে একটিমাত্র বলদকে গাড়ি টেনে নিয়ে যেতে দেখা যায় তখনই যখন অল্প দূরত্বের রাস্তা অতিক্রম করার থাকে। যখন লম্বা রাস্তা পাড়ি দিতে হয়, জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে, তখন সবসময় দুটি বলদ থাকে। কিন্তু যখন আপনি খুবই ক্লান্ত, আপনি এসব ছোটখাট তারতম্যের দিকে নজর দেন না। গাড়িটি যখন কাছে এল, তিনি চালকের মুখ দেখতে পেলেন না কারণ চালকের মুখ ছিল ঢাকা এবং চারপাশে কুয়াশা।

যুবকটি বললেন, “দেখুন, আমার মা অসুস্থ। যদি দয়া করেন, আমরা কি আপনার খালি গাড়িটিতে চড়ে যেতে পারি?” লোকটি ঘাড় নাড়লেন। তখন দুজনেই গাড়িতে উঠে পড়লেন আর গাড়িও চলতে লাগল। কিছুক্ষণ পর তিনি খেয়াল করলেন এই জঙ্গলের রাস্তাতেও তো গাড়িতে তেমন ঝাঁকুনি লাগছেনা। তখন তিনি নীচে তাকিয়ে দেখলেন গাড়ির চাকা গুলো ঘুরছে না। সেগুলি স্থির, কিন্তু তাও গাড়িটা চলছে। এরপর তিনি বলদটির দিকে তাকালেন। সেটি বসে আছে, এদিকে গাড়িটা তবুও চলছে। তারপর চালকটির দিকে তার নজর গেল। তার গায়ের চাদরটাই শুধু দেখা যাচ্ছিল। কোনও লোক ছিলনা। তিনি তার মার দিকে তাকালেন। তার মা বলে উঠলেন, “ওরে মূর্খ, আমরা ওখানে পৌঁছে গেছি। আর কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন নেই।এটাই সেই জায়গা, আমায় যেতে দে।” এই বলে তার মা সেখানেই দেহ ত্যাগ করলেন। এদিকে বলদ, গাড়ি, আর চালকও উধাও!

যুবকটি নিজের গ্রামে ফেরত এলেন। লোকে ভাবলো, “এ তো খুব তাড়াতাড়ি ফিরে গেল, নিশ্চয়ই ওর মা-কে কোথাও ফেলে রেখে চলে এসেছে। ওনাকে কাশীতে নিয়েই যায়নি।” তারা ওনাকে জিজ্ঞেস করলেন, “মাকে কোথায় ফেলে রেখে এলেন?” তিনি বললেন, “না, আমাদেরকে যেতে হয়নি, শিব নিজেই এসেছিলেন আমাদের জন্যে।” তারা বললেন, “যতসব বাজে কথা!” যুবকটি বলেলন, “আপনারা কি ভাবলেন তাতে কিছু যায় আসেনা, উনি এসেছিলেন আমাদের জন্য, এটাই মোটকথা, আমার জীবন আলোয় ভরে গেছে, নিজের অন্তরে আমি তা জানি। আপনারা না মানতে ছাইলে সেটা আপনাদের ওপর।” তখন তারা জিজ্ঞেস করলেন, “ আচ্ছা ঠিক আছে, তাহলে আমাদের দেখাও, যেভাবে হোক দেখাও যে তুমি শিবকে সত্যি দেখেছ। যে তিনি তোমাদের জন্য এসেছিলেন।” সে বলল, “ আমি জানি না কারন আমি ওনাকে দেখিনি, আমি শুধু গায়ে জড়ানো একটি চাদর দেখেছি, কোনও মুখ ছিলনা, কিচ্ছু ছিলনা, সব শুন্য ।

তারপর সকলেই হঠাৎ খেয়াল করলেন যে সেই লোকটি সেখানে নেই। তারা শুধু তার গায়ের কাপড়টিই দেখতে পেল। তিনি দক্ষিণ ভারতের এক মহান ঋষি হয়ে উঠলেন। তিনি যেখানেই যেতেন, লোকে তাঁকে এক শুন্য মুখ হিসেবেই চিনত।

গল্প ২: মাল্লাঃ একজন শিবভক্ত এবং চোর 

illustration-of-malla-thief

সদগুরু : একজন যোগীর কথা বলি যিনি আমার জন্মস্থানের খুব কাছেই থাকতেন। আমি এই মানুষটি আর যেসব ঘটনা সেখানে ঘটেছিল সে সম্পর্কে শুনেছিলাম, তবে একজন নবীন যুবক হিসাবে আমি এতে খুব একটা আমল দিই নি। তার কথা আমায় একটু উত্তেজিত করেছিল ঠিকই, কিন্তু সেই সময় আমি এটাকে অতটা গুরুত্ব দিই নি।

এক ভক্ত ছিলেন যিনি থাকতেন মাইসোর শহর থেকে ১৬ কিলোমিটার মতো দূরে, অধুনা বিখ্যাত নানজানগুড়ের উপকণ্ঠে। তাঁর নাম ছিল মাল্লা। মাল্লা কোনও প্রচলিত প্রথার অন্তর্গত ছিলেন না বা কোন আনুষ্ঠানিক উপাসনা বা ধ্যানের পদ্ধতিও জানতেন না। তবে শৈশব থেকেই চোখ বন্ধ করলেই তিনি কেবল শিবের মূর্তি দেখতে পেতেন। বোধহয় তার জন্যে ভক্ত শব্দটি যথেষ্ট নয়। ওনার মত লক্ষ লক্ষ মানুষ আছেন। তাঁরা শিবের কয়েদী। তাদের কাছে কোনও বিকল্প নেই। হয়ত আমিও তাঁর হাতে বন্দি হয়েছি। আমরা তাঁকে চাইনি – চাইতে যাওয়ার পক্ষে বেশিই অহংকারী, কিন্তু তাঁর হাতে বন্দি। শিব ছিলেন শিকারি। শুধু জীবজন্তু নয়, এমনকি মানুষকেও তিনি তাঁর ফাঁদে ফেলেছেন। ইনি ছিলেন ঐরকমই আরেকজন।

মাল্লা শিবকে ছাড়া আর কিছুই জানতেন না। তিনি বিশেষ কোনও কাজকর্ম শেখেননি , কাজেই তিনি বন্য প্রকৃতির হয়ে ওঠেন।। কাউকে আটকে, তার কাছ থেকে তাঁর যা প্রয়োজন তা কেড়ে নেওয়া কখনই তাঁর কাছে ভুল বা অন্যায় বলে মনে হয়নি। তাই উনি এটাই করতেন , ফলে লোকে তাঁকে ডাকাত বলে চিহ্নিত করতে লাগল।

লোকেরা যে বন পথ দিয়ে যাতায়াত করত, সেখানে তিনি এক নিয়মিত দস্যু হয়ে দাঁড়ালেন। যে জায়গায় তিনি তাঁর “খাজনা”আদায় করতেন সেই জায়গার নাম হয়ে গেল কাল্লানামুলাই, অর্থাৎ “এক চোরের কোন”। প্রথমদিকে লোকেরা তাঁকে গালমন্দ করত, কিন্তু বছরের শেষ এসে গেলেই তিনি যা টাকাকড়ি তিনি জমাতেন সব খরচ করে দিতেন মহাশিবরাত্রি পালনে । এক বিশাল আনন্দোৎসবের আয়জন করতেন।

সুতরাং, কিছু বছর যেতে, লোকেরা তাঁকে এক মহান ভক্ত হিসাবে স্বীকৃতি দেয় এবং স্বেচ্ছায় তাঁকে সাহায্য করতে শুরু করে। যারা স্বেচ্ছায় দান করত না, তাদের এ ব্যাপারে উৎসাহ দিতে তাঁর কোনও সংকোচ বোধ ছিল না!

কয়েক বছর পরে, দুই যোগী যাঁরা একে অন্যের ভাই ছিলেন, তাঁরা এদিকে আসেন এবং এই লোকটিকে দেখতে পান যিনি একজন দস্যু অথচ এক মহান ভক্তও। তারা ওনাকে বললেন, “আপনার নিষ্ঠা চমৎকার, কিন্তু আপনার আচার-ব্যবহার মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে”। তিনি বললেন, “আমি শুধু এটা শিবের জন্য করছি, এতে সমস্যাটা কি?” তাঁরা তাঁকে বুঝিয়ে রাজি করালেন এবং সরিয়ে আনলেন, তাঁকে অন্যান পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে নিয়ে গেলেন আর জায়গাটার নাম কাল্লানামুলাই থেকে পাল্টে করলেন মাল্লানামুলাই। আজও সেই জায়গাকে মাল্লানামুলাই বলা হয় এবং সেই মহাশিবরাত্রির অনুষ্ঠান যা তিনি উদযাপন করতেন এখন তা ওই জায়গার এক বড় অনুষ্ঠান হয়ে দাঁড়িয়েছে।

যে সময় থেকে তিনি ডাকাতি ছেড়ে সেই যোগীদের সাথে বসলেন, তার ডের বছরের মধ্যে তিনি মহাসমাধি লাভ করেন। এইভাবে তাঁকে মুক্তি দেবার পর, সেই দুই যোগীও বসলেন এবং সেই দিনই তাঁরা দেহ ত্যাগ করলেন।সেই যোগীদের উদ্দেশ্যে আজ সেখানে, যা এখনো মাল্লানামুলাই নামেই পরিচিত, কাবিনি নদির তীরে খুব সুন্দর মন্দির বানানো হয়েছে।

গল্প ৩: কুবের কীভাবে শিবের “সর্বশ্রেষ্ঠ” ভক্ত হয়ে উঠলেন 

সদগুরু: কুবের ছিলেন যক্ষদের রাজা। যক্ষরা হল অন্তর্বর্তী অস্তিত্ব। তারা ইহজগতেও নেই আবার পরলোকেও পৌঁছায়নি – তারা এক অন্তর্বর্তী অবস্থা। কাহিনীটি হল এরকম যে, রাবণ কুবেরকে লঙ্কা থেকে বহিস্কার করে দেন, এবং তখন কুবের-কে মূল ভূখণ্ডে পালিয়ে যেতে হয়। নিজের রাজ্য ও লোকজনদের হারানোর হতাশায় তিনি শিবের উপাসনা শুরু করে দিলেন এবং শিবভক্ত হয়ে যান – এক শিবের উপাসক।

শিব করুণার বশে তাঁকে অন্য আর একটি রাজত্ব দিলেন, সঙ্গে বিশ্বের সমস্ত সম্পদ এবং কুবের হয়ে উঠলেন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। ধন মানেই কুবের – এরকম ভাবেই দেখা হয়। কুবের এক মহান ভক্ত হয়ে উঠলেন এবং যদি কোনও ভক্ত মনে করতে শুরু করেন যে তিনি একজন মহান ভক্ত, তার মানে তিনি সমস্ত কিছুই হারিয়ে ফেলেছেন। কুবের মনে করতে শুরু করেছিলেন যে তিনি একজন মহান ভক্ত, কারণ তিনি শিবকে প্রচুর পরিমাণে নৈবেদ্য দিচ্ছিলেন। শিব অবশ্যই তাঁকে নিবেদন করা পবিত্র ছাই ছাড়া আর কিছু কখনও গ্রহণ করেননি। কিন্তু কুবেরের নিজেকে এক মহান ভক্ত বলে মনে হয়েছিল কারণ তিনি এত কিছু নিবেদন করছিলেন।

একদিন কুবের শিবের কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন, “আমি আপনার জন্যে কি করতে পারি? আমি আপনার জন্য কিছু করতে চাই।” শিব বললেন, “না না, তুমি আমার জন্যে কিছু করতে পারবে না। কি করবে তুমি আমার জন্যে? কারন আমার কোনও কিছুর প্রয়োজন নেই, আমি ঠিক আছি। তুমি বরং আমার ছেলে কে নিয়ে যাও।” তিনি গণপতি কে দেখিয়ে বললেন, “এই ছেলেটি সবসময় ক্ষুধার্ত হয়ে থাকে। ওকে ভাল করে খাওয়াও।”

কুবের বললেন, "এটি কোনও সমস্যা নয়", এবং দুপুরের খাবারের জন্য গণপতিকে নিয়ে গেলেন। তাঁরা তাঁকে খাবার পরিবেশন করলেন, এবং তিনি খেয়েই গেলেন, খেয়েই গেলেন আর খেয়েই গেলেন। তাঁরা তাঁকে পরিবেশন করে গেলেন এবং তিনি খেয়ে গেলেন। কুবের কয়েকশো রাঁধুনি ভাড়া করে প্রচুর পরিমাণে খাবার রান্না শুরু করলেন। তারা এই সমস্ত খাবার তাঁকে পরিবেষণ করলেন এবং তিনি খেতে থাকলেন।

আতঙ্কিত হয়ে গেলেন কুবের, বললেন, "থামুন!" “এভাবে খেতে থাকলে আপনার পেট ফেটে যাবে।” গনপাতি বললেন, “চিন্তা করবেন না, আমার পেট এই শাপ দিয়ে বাঁধা আছে, আমার পেট নিয়ে আপনাকে দুশ্চিন্তা করতে হবে না। আমার ক্ষিদে পেয়েছে, আমাকে খাবার দিন, আপনিই তো বলেছিলেন আমার ক্ষিদে মেটাবেন!”

কুবের তার সমস্ত সম্পদ ব্যয় করে ফেললেন। লোকে বলে যে তিনি অন্যান্য জগতেও লোক পাঠিয়ে খাবার আনিয়েছেন, এবং তারা খাবার পরিবেশন করেছেন। কিন্তু গণপতি শুধু খেয়েই গেলেন আর বলতে থাকলেন, “আমার খিদে এখনও মেটেনি, আরও খাবার কোথায়?” তখন কুবের নিজের মনের ক্ষুদ্রতা বুঝতে পেরে শিবের সামনে মাথা নত করলেন, “আমি জানি, আমার ধন-সম্পত্তি আপনার কাছে ধূলিকণার সমানও নয়। আপনি আমাকে যা দিয়েছেন তারই কিছুটা ফেরত দিয়ে, আমি নিজেকে এক মহান ভক্ত ভেবে ভুল করেছি।” এবং সেই মুহুর্ত থেকে তাঁর জীবন এক অন্য দিশা নিল।

গল্প ৪: ব্রিঘু মহর্ষি এবং শিব অর্ধনারি রূপে

shiva-parvati-bhrigu-as-a-bird-going-around-shiva

সদগুরু : আমরা যখন বলি যোগ, আমরা কোনও বিশেষ ব্যায়াম বা কোনও কৌশল সম্পর্কে বলছি না। আমরা সৃষ্টির বিজ্ঞানের কথা বলছি এবং কী করে সৃষ্টির এই খণ্ডটিকে তাঁর চরম সম্ভাবনায় নিয়ে যাওয়া যায়। আমরা একটি বিজ্ঞান এবং একটি প্রযুক্তি সম্পর্কে কথা বলছি যার মাধ্যমে আমরা আমাদের জীবনের প্রতিটি দিককে একটি চূড়ান্ত সম্ভাবনায় গড়ে তুলতে পারি।

শিব যখন সপ্তঋষিদের কাছে যোগ এবং অস্তিত্বের প্রকৃতিটি ব্যাখ্যা করতে শুরু করেন, তখন একটা সুন্দর ঘটনা ঘটে। পরে সেই সাতটি ঋষির মধ্যে একজন যিনি পরে ভৃগু মহর্ষি নামে পরিচিত হয়েছিলেন তিনি শিবের এক প্রবল ভক্ত ছিলেন। কান্তি সরোবর বা কৃপার দীঘির তীরে এই প্রথম যে যোগ কর্মসূচিটি ঘটছিল তাঁর সাক্ষী ছিলেন পার্বতীও। ভৃগু যথারীতি সকালে আসেন এবং তিনি শিবকে প্রদক্ষিণ করতে চান। পার্বতী পাশেই বসেছিলেন, কিন্তু ভৃগু তাঁদের দুজনের মাঝখান দিয়ে গিয়ে শুধু শিবকে প্রদক্ষিণ করলেন। তিনি শুধু শিবকেই প্রদক্ষিণ করতে চেয়েছিলেন, পার্বতী-কে নয়।

শিব এতে আমোদিত হলেও পার্বতী মোটেও খুশি হননি। তাঁর এটা ভালো লাগেনি। তিনি শিবের দিকে তাকালেন, শিব বললেন, “আরো কাছে সরে এসো, তোমার চারপাশেও ঘুরে যাবে”। পার্বতী আরও কাছে এসে বসলেন। ভৃগু দেখলেন যে তাঁর পক্ষে শুধু শিবের চারপাশ দিয়ে ঘুরে আসার জন্য যথেষ্ট জায়গা নেই, তাই তিনি নিজেকে ইঁদুরে পরিণত করলেন এবং পার্বতীকে প্রদক্ষিণ থেকে বাদ দিয়ে কেবল শিবের চারপাশে ঘুরে গেলেন।

পার্বতী এতে খুব বিরক্ত হলেন। তখন তাঁকে খুশি করতে শিব পার্বতীকে নিয়ে তাঁর কোলে বসালেন। ভৃগু নিজেকে একটি ক্ষুদ্র পাখিতে রূপান্তরিত করে পার্বতীকে বাদ দিয়ে কেবল শিবের চারিপাশে ঘুরে নিলেন। এতক্ষণে পার্বতী রাগে জ্বলছেন, তাই শিব তাকে নিজের মধ্যে টেনে নিলেন এবং তাঁকে নিজের একটি অংশে করে নিলেন । অর্থাৎ পার্বতী তাঁর এক ভাগ হয়ে গেলেন। তিনি হয়ে উঠলেন অর্ধনারী।

ভৃগু এটি দেখলো এবং নিজেকে একটি মৌমাছিতে রূপান্তরিত করে কেবল ডান পা ঘুরে নিল। ভৃগু-র এই শিশুসুলভ ভক্তি মজাদার ছিল, কিন্তু একই সাথে শিবও চান নি যে ভৃগু তাঁর ভক্তিতে হারিয়ে যাক এবং অস্তিত্বের চূড়ান্ত প্রকৃতিটি তাঁর দৃষ্টি এড়িয়ে যাক। সুতরাং তিনি সিদ্ধাসন ধারণ করলেন যেখানে তাঁর পা বা শরীরের অন্য কোনও অংশ প্রদক্ষিণ করার কোনও উপায় ছিল না। যদি তাকে এটি করতে হয় তবে প্রকৃতি ও পুরুষ উভয়েরই নীতিগুলির জন্য তাকে এটি করতে হবে।

এই গল্পটি যা প্রকাশ করছে তা হল আমরা যখন যোগ বলি তখন আমরা এমন একটি মাত্রা সম্পর্কে কথা বলি যা সমস্ত-সমেত। এটি স্বাস্থ্য তৈরির জন্য অনুশীলন বা প্রক্রিয়া নয়। এটি মানুষের পরম কল্যানের জন্যে যাতে জীবনের কোনও দিকই না বাদ পড়ে। এটি সমস্ত মাত্রা ছাড়ানো একটি মাত্রায় পৌঁছনোর জন্যে। এটি হল এমন এক পদ্ধতি সম্পর্কে যা শেখায় কিভাবে কাজে লাগাবেন আপনার কাছে থাকা মানবতন্ত্র-টি - আপনার শরীর, মন, আবেগ এবং শক্তি – ঈশ্বরের কাছে পৌঁছবার এক সিঁড়ি হিসেবে। আপনার চূড়ান্ত প্রকৃতির লক্ষ্যের পথে নিজেকে একটি ধাপ হিসেবে গড়ে তোলার এটি একটি পদ্ধতি।

Editor’s Note: Celebrate Mahashivratri at the Isha Yoga Center with explosive guided meditations accompanied by dance and music, nightlong satsang with Sadhguru, musical performances by eminent artists. Bask in the Grace of Shiva, The AdiYogi! Visit the Mahashivratri webpage for details on the many ways you can participate.