অঙ্গমর্দনা - নিজের অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে আয়ত্তে আনা
এই সপ্তাহে ধ্রুপদী যোগের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে সদগুরু এক অসাধারণ শক্তিশালী পদ্ধতি অঙ্গমর্দনের বিষয়ে বললেন যা ভৌত এবং শক্তি উভয় শরীরেরই এক অনুশীলন।
ঈশা ধ্রুপদী যোগকে তার সবচেয়ে শুদ্ধ আকারে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে - স্টুডিও কিংবা বইয়ের যোগ নয় বা মূল উপাদানগুলোকে না বুঝে বিশ্বজুড়ে যে নানারকম নতুনত্ব যোগ উপস্থিত করা হয়েছে সেরকম নয় - বরং পুরোদস্তুর ধ্রুপদী যোগ যা হল অসাধারণ শক্তিশালী এক বিজ্ঞান। এটা এমন এক পদ্ধতি যা সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছোনোর এক উপায় হিসাবে অতি সতর্কতার সাথে সুনির্দিষ্ট ভাবে একত্র করা হয়েছে।
গত সপ্তাহে "ধ্রুপদী যোগ" ধারাবাহিকে আমরা উপযোগের বিষয়ে জেনেছিলাম। এই শক্তিশালী অনুশীলনটি আরো অধিক পরিপূর্ণ ভৌত জীবন প্রদান করে।আজকে,আমরা যোগের এক অনন্য পদ্ধতি অঙ্গমর্দনের বিষয়ে দেখবো যা একাধারে ভৌত ও অন্যদিকে শক্তি উভয় তন্ত্রকেই শক্তিশালী করে তোলে।
সদগুরু: অঙ্গমর্দন হল যোগের এক অনন্য পদ্ধতি যা আজকালকার দিনে প্রায় হারিয়েই গেছে। পরম্পরাগত, ধ্রুপদী যোগে অঙ্গমর্দন সবসময়েই বেঁচে ছিল। এটা যোগাসনের মতো নয়, এটা খুবই জোরদার একরকম কসরত যাতে আপনার কোনো সরঞ্জামের দরকার পড়ে না। আপনি কেবল নিজের শরীরটাকেই ব্যবহার করছেন এবং গড়ে তুলছেন সম্পূর্ণ অন্য এক মাত্রার উদ্যম ও শারীরিক শক্তি।
অঙ্গমর্দনায় আপনি মাংসপেশির নমনীয়তা ধীরে ধীরে বাড়িয়ে তুলতে আপনার নিজের শরীরেরই ওজন এবং ভরবেগকে ব্যবহার করেন। যেভাবে আজকাল আমরা শেখাচ্ছি এটা কেবল পঁচিশ মিনিটের একটা প্রক্রিয়া, আর স্বাস্থ্য ভাল রাখার দিক দিয়েও এটা চমৎকার কিছু ঘটাতে পারে। এটা যেমন বিস্ময়কর একটা প্রক্রিয়া, তেমন পরিপূর্ণও। আপনার দরকার শুধু একটা ছয়-বাই-ছয় (ছয় বর্গফুটের জায়গা); আপনার শরীরই সব। তো,আপনি যেখানেই থাকুন না কেন, আপনি এটা করতে পারেন। শরীর গড়ার ক্ষেত্রে এটা যেকোনো ওয়েট ট্রেনিংয়ের মতই কার্যকরী আর এটা শরীরতন্ত্রে অযথা কোনো চাপ সৃষ্টি করে না।
এমনকি আপনি যদি এটাকে কেবল শরীরচর্চার এক ধরণ হিসেবেও দেখেন, তাহলে অঙ্গমর্দন সেই পরীক্ষাও নিশ্চিতভাবে উতরে যাবে। তবে মাংসপেশি শক্তিশালী করা বা মেদ ঝরিয়ে ফেলা এগুলো সব উপরি পাওনা। যেই সাধনাই আপনি করুন না কেন, সে অঙ্গমর্দনই হোক বা অন্য কোনো সাধনা, তার গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল এই যে, আমরা শক্তিতন্ত্রকে একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ের শক্তি ও শক্তির সুসংবদ্ধতায় নিয়ে যেতে চেষ্টা করছি। উদ্দেশ্য হল আপনাকে এমন একটা স্তরে নিয়ে যাওয়া যেখানে আপনার সিস্টেমটি সম্পূর্ণ সক্রিয় থাকবে কারণ সম্পূর্ণ সক্রিয় হলে তবেই এটাকে ধারণার উচ্চতর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। আধা-শরীর বা আধা-সত্তাকে উপলব্ধির পরিপূর্ণ স্তরে নিয়ে যাওয়া যায় না।
"অঙ্গমর্দনা" শব্দটির অর্থ হল শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে নিজের আয়ত্তে আনা। এ জগতে আপনি যে কাজই করতে চান না কেন,আপনার অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ওপর কতটা দক্ষতা আছে তাই নির্ধারণ করে সেই কাজটা আপনি কত ভাল ভাবে করতে পারবেন। আমি কোনো খেলার দলে যোগ দেওয়ার কথা বা এই ধরনের কিছুর নিরিখে বলছি না। আপনি টিকে থাকার জন্য যে কাজ করেন আর মুক্তির জন্য যে কাজ করেন,এই দুই ধরণের কাজের মধ্যে একটা পার্থক্য করে দিচ্ছি। আপনি নিজের ও বিশেষ করে আপনার আশেপাশের আর সবার মুক্তির জন্য যদি কিছু করতে চান,তাহলে অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে আয়ত্ত করার কিছু ক্ষমতা আপনার অবশ্যই থাকতে হবে। অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে আয়ত্ত করার ক্ষমতা মানে অবশ্য এমন নয় যে,আপনি পেশীবহুল হয়ে উঠবেন বা পাহাড় চড়তে পারবেন। সেটাও হতে পারে তবে এটা মূলত শরীরের শক্তি তন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্যই।
উপমা হিসাবে বলা যায়, যদি কেউ একজন হেঁটে আসে, তার হাঁটার ধরণ দেখে আপনি স্পষ্টতই বুঝতে পারবেন যে তার শরীরটা যথেষ্ট অনুশীলিত কি না। আপনি যদি কারোর মুখের দিকে তাকান, তার মন যথেষ্ট অনুশীলিত কি না তা আপনি তার মুখ দেখেই বুঝতে পারবেন। একইভাবে,আপনি যদি খুব ভালভাবে লক্ষ্য করেন, কারোর শক্তি যথেষ্ট অনুশীলিত কি না তাও স্পষ্টত বোঝা যায়। তারা কি করতে পারে কি পারে না তা এটা দিয়েই নির্ধারিত হয়। সম্পূর্ণ আয়ত্ত অর্জন করা মানে আপনার শক্তি প্রবলভাবে সক্রিয় থাকবে। আপনি যদি এখানে বসে থাকেন কেবল, শরীরটা অনেক কিছু করবে; আপনাকে কোথাও গিয়ে কিছু করতে হবে না।
কৃপাকে নিজে থেকে প্রেরিত হতে হলে,আপনার যথাযথ একটা শরীর থাকা প্রয়োজন। আপনার যথাযথ একটা শরীর যদি না থাকে আর প্রভূত পরিমাণ কৃপা যদি আপনার উপর অবতরিত হয়, তাহলে আপনার ফিউজটাই খালি উড়ে যাবে। অনেকেই অনেক বড় বড় অভিজ্ঞতা চান কিন্তু সেসব অভিজ্ঞতাকে ধারণ করার আধার স্বরূপ তাঁরা নিজেদের শরীরটাকে রূপান্তরিত করতে ইচ্ছুক নন। যোগে,আপনি কোনো অভিজ্ঞতার পিছু ছোটেন না, আপনি শুধুই প্রস্তুত হতে থাকেন। আপনার আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়া যদি শুধু কথাবার্তার থেকে বেশি কিছু হয়ে থাকে তার মানে আপনার অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ওপর কিছু নিয়ন্ত্রণ আপনার থাকা আবশ্যক।
সম্পাদকের মন্তব্য: ঈশা হঠ যোগ কার্যক্রমগুলো ধ্রুপদী হঠ যোগেরই এক বিস্তৃত অন্বেষণ যা প্রাচীন এই বিজ্ঞানের বিভিন্ন মাত্রাকে পুনরুজ্জীবিত করে, যা বর্তমান পৃথিবী থেকে বহুল অংশে হারিয়ে গেছে। এই কার্যক্রমগুলো শক্তিশালী নানারকম যোগ অভ্যেসের মধ্যে দিয়ে, যেমন উপ-যোগ, অঙ্গমর্দন, সূর্য ক্রিয়া, সূর্য শক্তি, যোগাসন, ভূত শুদ্ধি ইত্যাদি, অন্বেষণ করার এক অদ্বিতীয় সুযোগ প্রদান করে।