কর্মক্ষেত্রকে উন্নত করার ৪টি উপায়
আপনি কোনও সংস্থার নেত্রিত্ববর্গের অংশ হন বা কর্মীবর্গের অংশ, দায়িত্বটা আপনারই আপনার চারপাশের কর্মক্ষেত্রটিকে সুন্দর করে তোলার। সদগুরু কিছু উপদেশ দিচ্ছেন এটা কিভাবে করা যায় সেই বিষয়ে।
#১ কঠোর পরিশ্রম বন্ধ করুন
সদগুরু: ঠিক ছোটবেলা থেকেই, কেউ আমাদের আনন্দ, প্রীতিময় ভাবে পড়াশোনা করতে বা কাজ করতে বলেনি। লোকেরা শুধু এটাই বলে এসেছেন, “যখন তুমি অধ্যয়ন করবে, কঠোর অধ্যয়ন করবে। যখন তুমি কাজ করবে, কঠোর ভাবে কাজ করবে”। লোকেরা সব কিছুই কঠোর ভাবে করে, তারপর অভিযোগ করে যে জীবন কঠিন হয়ে গেছে।
অহং-এর প্রকৃতিই এমন যে এটা সব কিছুই কঠোর ভাবে করতে চায় কারণ এর একমাত্র উদ্বেগ হল অন্যদের থেকে এক পা এগিয়ে থাকা। এভাবে বেঁচে থাকাটা খুবই মর্মান্তিক। যখন সব জায়গাতেই কাজের এটাই ধরন, তখন সবকিছু কঠোর ভাবে করাটাই স্বভাবত লোকেদের কাছে সন্তুষ্টির উৎস হয়ে ওঠে। তারা যদি কিছু আনন্দের সাথে করে, তখন তারা মনে করেন তারা কোনও কাজই করেনি।
এটা কি চমৎকার নয় যে আপনি অনেক কিছু করছেন তবুও বোধ হচ্ছে যেন কিছুই করেননি? এভাবেই হওয়া উচিত। আপনি হয়তো দিনের ২৪ ঘণ্টাই কাজ করে চলেছেন, তবু যদি আপনার এমন বোধ হয় যে আপনি কিছুই করেননি, কেবল তখনই আপনার এটা মনে হবে না যে আপনি পৃথিবীর বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছেন। যদি আপনি এগুলোকে নিজের মাথার ওপর বহন করেন, আপনার ক্ষমতাগুলো কখনও পুরো প্রকাশ তো পাবেই না, তার ওপর রক্তচাপ, ডায়বিটিস আর আলসার বাঁধিয়ে বসবেন।
#২ প্রতিযোগিতার ঊর্ধ্বে যাও
সদগুরু: মানুষের প্রকৃত প্রতিভার চূড়ান্ত প্রকাশ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আসে না। যখন আপনি কারোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দৌড়নোর চেষ্টা করেন, তাহলে আপনি কেবল তার থেকে এক পা এগিয়ে থাকার কথা চিন্তা করবেন, তার বেশী নয়। আপনার চুড়ান্ত প্রতিভা কি সেটা নিয়ে ভাববেন না। মানুষের প্রতিভা প্রকাশ পায় কেবল চরম স্বস্তির অবস্থায়। আপনার মন, আপনার শরীর সর্বোত্তমভাবে কাজ করে এবং সম্পূর্ণ প্রকাশ পায় কেবল যখন আপনি আনন্দপূর্ণ, শান্তিপূর্ণ এবং স্থির নিজের ভেতর। সাধারনত, আপনি যদি লোকেদের স্থির হতে বলেন, তারা শিথিল হয়ে পরে। যদি লোকেদের বলেন তীব্র হতে, তারা উত্তেজিত হয়ে পরে। পার্থক্যটা দেখতে পারছেন? আপনাকে তীব্র এবং স্থির হতে শিখতে হবে। আপনি যদি তীব্রতা এবং স্থিরতাকে একসঙ্গে বজায় রাখতে পারেন, তবে আপনার যা প্রতিভা আছে তা সব সময়ই সম্পূর্ণ ব্যাবহার হবে।
#৩ স্বেচ্ছাসেবী: একটি শিল্প
সদগুরু: যখন আপনি একজন স্বেচ্ছাসেবী হিসাবে কাজ করেন তখন আপনার কাজটি একটি উপহার হিসাবে অর্পণ করেন, কিন্তু আপনার বাড়ি বা কর্মস্থানে সেই একই কাজ করতে আপনার অরুচি ধরে। কর্ম একই, আপনিও একই, কিন্তু আপনিই কখনও সেটিকে আনন্দময় করে তুলছেন, আবার কখনও অসহ্য। তাই আপনি আপনার কর্মক্ষেত্রে যেটাই করছেন সেটিকে একটি উপহার হিসাবে অর্পণ করছেন না কেন? কে আটকাচ্ছে আপনাকে?
আপনাকে অবশ্যই সর্বদা স্বেচ্ছাসেবী হতে হবে। স্বেচ্ছাসেবীর অর্থ হল স্বেচ্ছায় নিজের জীবন নির্বাহ করা। এই মুহূর্তে আপনি যদি বলেন, "আমি একজন স্বেচ্ছাসেবী", তাহলে এর অর্থ কি? আমি যে কাজটি করছি, সেটি স্বেচ্ছায় করছি। ঠিক? সুতরাং, এটা স্থির করা আপনারই হাতে। আপনি স্বেচ্ছায় আপনার জীবন পরিচালনা করতে পারেন, অথবা অসম্মত ভাবে। আপনি যদি স্বেচ্ছায় আপনার কর্ম করেন তবে সেটি একটি প্রেমের আধ্যায় হয়ে ওঠে, এটি আপনার স্বর্গে পরিণত হয়। যদি আপনি এটি অনিচ্ছাকৃত ভাবে করেন তবে এটি নরকে পরিণত হয়। তাই স্বেচ্ছাসেবী হওয়ার অর্থ কোনো অনুষ্ঠানে থালা বাসন ধোয়া নয় বা সব্জি কাটা নয়। এর অর্থ সমস্ত ধরণের পরিস্থিতিতে স্ব-ইচ্ছুক হতে শেখা, যাতে জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত স্বেচ্ছায় পরিচালনা করেন, অনিচ্ছায় নয়। কারণ যে মুহূর্তে আপনার জীবনে অনিচ্ছা প্রবেশ করবে, তখন যদি আপনার সাথে সব থেকে সুন্দর জিনিসটিও ঘটে, তাও আপনার মনে হবে জীবন আপনাকে শাস্তি দিচ্ছে।
#৪ সহকর্মীর সর্বশ্রেষ্ঠ দিক
সদগুরু: আপনি যদি কোনো কার্য সিদ্ধি করতে চান, বা কোনো সংস্থা পরিচালনা করতে চান বা এই বিষয়ে যে কোনো কিছুই করতে চান না কেন আপনি সব সময়ই সকলের থেকে সর্বোত্তমটাই পাবেন যখন চারপাশের সকলে আপনাকে ভালবাসবে। কেবলমাত্র তখনি আপনি তাদের থেকে তাদের সর্বোচ্চ গুণগুলো বের করে আনতে পারবেন। কিন্তু তাদের ভালবাসা পেতে গেলে প্রথমে আপনাকে তাদের ভালোবাসতে হবে, সে তারা যেরকমই হোক না কেন। লোকেরা যখন আপনাকে ভালোবাসবে কেবল তখনি তারা আপনার জন্য সর্বোৎকৃষ্ট কাজটি করবে আপনার জন্য।