কোথায় পাবো সুখের খোঁজ ?
অভিনেতা বিজয় দেব্রাকন্ডার প্রশ্ন ছিল, কোথায় পাওয়া যায় সুখের খোঁজ ? কীভাবে সুখী হওয়া যায় ? সদগুরু বিশ্লেষণ করলেন - সুখ এবং সব ধরনের আবেগই আসলে ভিন্ন ভিন্ন কেমিষ্ট্রির প্রকাশ এবং কীভাবে একটি জৈবনিক প্রযুক্তির সাহায্যে আমরা নিজেদের ভিতর পচ্ছন্দসই কেমিষ্ট্রি উৎপন্ন করতে পারি।
বিজয় দেব্রাকন্ডা : হাই সদগুরু ! আমরা অর্থ রোজগারের জন্য প্রচুর পরিশ্রম করি এটা ভেবে যে, অর্থই আমাদের সুখে রাখবে। ইদানিং সবচেয়ে বেশি মার্কেটিং চলছে সুখ নিয়ে। আমরা মদ্যপান করছি সুখের আশায়। কোনও মহিলার সঙ্গে থাকতে চাইছি সুখের আশায়। কিন্তু সত্যিকারের সুখ কোথায় পাবো ? কীভাবে আমরা সুখী থাকতে পারবো ? আমরা এমন একটা সময়ে আছি যে, নিজেরাই জানি না কোথায় পাবো সেই সুখ ? সুখ আসলে কী ? একজন সুখী মানুষ দেখতে কেমন হয় ? তার কাজটাই বা কী ? এটা বলবেন না যে, সুখের জন্য নিজের ভিতরে দেখো। এই উত্তর সন্তুষ্ট করে না। আমাকে সত্যটা বলুন।
সদগুরু : নমস্কার বিজয়! তোমার প্রশ্ন, একজন সুখী মানুষ দেখতে কেমন হয় ? আমাকে দেখতে কেমন লাগে তোমার ? এখন আমাদের ভাবনা দেখে মনে হয়, সুখ যেন এক পণ্য বা কোনও উপলব্ধির স্তর। না। যখন তোমার জীবনটা সহজ হয়ে যাবে এবং যখন তুমি নিজেই সহজ হয়ে উঠবে, সুখ হল তার স্বাভাবিক পরিণতি। এই সহজ হয়ে থাকার অর্থ কি ? এটাকে নানভাবে দেখা যেতে পারে। এখন এই “অন্তর্জগৎ” নিয়ে কিছু বলা যাবে না কারণ তুমি তো আগেই আমাকে শর্ত দিয়ে রেখেছো।বিজ্ঞানও আজ দেখিয়ে দিয়েছে যে, প্রত্যেকটি মানবিক অনুভূতির পিছনে একটি রাসায়নিক ভিত্তি রয়েছে। যাকে তুমি শান্তি বলো, তা এক ধরনের কেমিষ্ট্রি। সুখ আর এক ধরনের কেমিষ্ট্রি, একই কথা প্রযোজ্য আনন্দ, দুঃখ, যন্ত্রণা ও পরমানন্দের ক্ষেত্রেও।
অন্য কথায়, তুমি একটি জটজটিল কেমিক্যাল স্যুপ । শুধু একটাই প্রশ্ন, তুমি কি সুন্দর স্যুপ না পচে যাওয়া স্যুপ ? যদি সুন্দর স্যুপ হও, তুমি সুস্বাদু হবে। অন্যের জন্য নয়, নিজের জন্য। তুমি নিজের জন্য যদি সুস্বাদু হও, তাহলে শুধু এখানে বসে থেকেই তোমার মধ্যে একটি সুখকর অনুভূতি হবে ওই সুস্বাদু স্যুপটির কারণে, আর তখন সকলেই বলবে যে, তুমি সুখী। যদি তোমার অনুভূতি অতীব সুখকর হয়, মানুষ বলবে তুমি আনন্দে আছো। যদি সর্বোচ্চ সুখ অনুভব করো, সবাই বলবে যে, তুমি পরমানন্দে আছো।
সুতরাং, অধিকাংশ মানুষের বোঝার মতো করে এটাই বলতে হয় যে, তোমার কেমিষ্ট্রিকে বদলানোর প্রয়োজন। আর আমাদের হাতে একটি পূর্ণাঙ্গ জৈবনিক প্রযুক্তিই রয়েছে যা দিয়ে আমরা তোমার পচ্ছন্দসই কেমিষ্ট্রি তৈরি করে দিতে পারি। এখন যদি আমি তোমাকে নিজের ভিতরে আনন্দময় কেমিষ্ট্রি উৎপন্ন করতে শেখাই, তুমি আনন্দে থাকবে। যখন তুমি আনন্দে থাকতে শিখবে, তখন আর সুখের খোঁজ করতে হবে না তোমাকে। সুখের খোঁজ করতে যাওয়াটাই হল সবচেয়ে বড় ভুল। তোমার জীবনটা হতে হবে আনন্দের অভিব্যক্তি । যখন তোমার জীবন তোমারই উপলব্ধির অভিব্যক্তি হয়ে উঠবে, তখন তুমি কী করো বা না করো, তা দিয়ে জীবনের মান নির্ধারিত হবে না। নিজের ভিতরে কী অনুভব করছো, সেটিই জীবনের গুণগত মান নির্ধারণ করবে।
আমি দুঃখিত, “ভিতরে” শব্দটা আবার বলে ফেললাম! কিন্তু ওই কেমিষ্ট্রি আদৌ তোমার ভিতরে নেই - ওটা তোমার বাইরেই আছে। কিন্তু যদি তুমি ঠিকঠাক স্যুপ তৈরির পদ্ধতি জানো, আনন্দে থাকাটা কোনও সমস্যাই নয়, ওটা তার স্বাভাবিক পরিণতি। আমরা একটা টেকনোলজি বা মেথডলজি শেখাতে পারি তোমাকে, যার সাহায্যে তুমি সঠিক প্রকরণের স্যুপ তৈরি করে নিতে পারবে নিজের ভিতরেই। এটাকেই আমি বলি Inner Engineering, নিজের কেমিষ্ট্রিকে তুমি এমন ভাবে তৈরি করো যাতে এটা নিজের প্রকৃতিতেই আনন্দে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে, কোনও বাহ্যিক বস্তুর মুখাপেক্ষী যেন না হয়। যদি তুমি কোনও ব্যক্তি বা বস্তুর কাছ থেকে সুখ ছিনিয়ে নিতে চাও, তাহলে নিশ্চিত ভাবেই তুমি হতাশ হবে কারণ, বাইরে কোথাও কিছু পাবে না, যদি না আনন্দের কেমিষ্ট্রি তৈরি হয় নিজের ভিতরে।
সম্পাদকের কথা : যে প্রশ্নের উত্তর দিতে সকলেই অপারগ, যদি এমন কোনও বিতর্কিত বা স্পর্শকাতর প্রশ্ন থাকে অথবা যদি কোনও আপাত কঠিন প্রশ্ন নিজেকে ক্রমাগত বিব্রত করতে থাকে, সেক্ষেত্রে জীবনের সব অমীমাংসিত প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার সুযোগ রয়েছে এখানে। সদগুরুকে আপনার প্রশ্ন করুন UnplugWithSadhguru.org.