পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব
বাড়ি এবং পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখলে তার কোন গভীরতর প্রভাব কি আধ্যাত্মিক উন্নতির উপর পড়ে? সদগুরু পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব আলোচনা করছেন।
ছোটবেলায় নিজেকে এবং নিজের চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব মা-বাবা এবং অন্যান্য গুরুজনরা আমাদের উপর একরকম চাপিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু সামাজিক এই প্রত্যাশা ছাড়াও, আপনার আধ্যাত্মিক উন্নতির উপর পরিচ্ছন্ন বাড়ি এবং পরিচ্ছন্ন পরিবেশের কোন গভীরতর প্রভাব থাকে কি? সদগুরু পরিচ্ছন্ন রাখার গুরুত্ব আলোচনা করছেন।
সদগুরু: শৌচ, বা পরিচ্ছন্নতা একজনের আধ্যাত্মিক উন্নতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। পরিচ্ছন্নতা কেবলমাত্র শরীরের ব্যাপারে নয়। এটা আমাদের চারপাশের পরিবেশ সম্পর্কেও বটে। আমাদের ইন্দ্রিয় দিয়ে প্রত্যক্ষ করা প্রত্যেকটি জিনিস আমাদের মধ্যে হয় কলুষতা অথবা কল্যাণ সৃষ্টি করতে পারে।
আমরা যা কিছু প্রত্যক্ষ করি, যদি সেটা আমাদের ইন্দ্রিয়ের কাছে আনন্দদায়ক হয় তাহলে আমরা সেটাকে একরকম ভাবে অনুভব করি। আর যদি সেটা আমাদের ইন্দ্রিয়ের কাছে অপ্রীতিকর হয় তাহলে আমাদের অভিজ্ঞতায় সেটা কুৎসিত হয়ে যায়। যদি আমাদের চারপাশ পরিচ্ছন্ন না থাকে বা অন্যভাবে বললে, যদি আমাদের পরিপার্শ্ব আমাদের ইন্দ্রিয়ের কাছে মনোরম না হয় - তখন যে প্রতিচ্ছবি আমরা আমাদের মনে সৃষ্টি করি, আমাদের অভিজ্ঞতার আসনে তার যে অভিক্ষেপ ঘটে সেটা অপ্রীতিকর হয়ে যায়। যখন আপনি এই ধরনের অপ্রীতিকর অনুভূতি সৃষ্টি করেন, পরম সুখানুভুতির অভিজ্ঞতায় পৌঁছানো এবং সচেতনভাবে আপনার অভিজ্ঞতার প্রকৃতি সৃষ্টি করা কঠিন হয়ে ওঠে।
আপনি অসুখী নাকি আনন্দিত - সেটা মূলত আপনি নিজের ভেতরে কী করছেন তা দিয়েই নির্ধারিত হয়। একটি আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়ার অর্থ হল আপনি বলতে যা কিছু বোঝায়, তা যেন সচেতনভাবে ঘটে - আপনার জীবনের অভিজ্ঞতা আপনার দ্বারাই নির্ধারিত হয়। যদি এমনটা ঘটাতে হয়, তবে এটা গুরুত্বপূর্ণ যে আমাদের ইন্দ্রিয়গুলো যেন কোনকিছুকে অপ্রীতিকর হিসেবে প্রত্যক্ষ না করে।
যেভাবে আপনি আপনার বিছানা গোছান…
আমি নিশ্চিত যে প্রত্যেকটি সংস্কৃতিতে কোন এক সময় আপনাকে বলা হয়েছে - আপনার মা-বাবা না হলেও অন্তত আপনার দাদু- ঠাকুমা বলে থাকবেন - কীভাবে আপনার নিজের জামাকাপড় এবং বিছানার চাদর রাখতে হয় সেই সম্পর্কে। বিশেষত ভারতে, তারা বলেন যে যদি আপনার শয্যার উপকরণগুলো কোঁচকানো এবং অগোছালো থাকে- ভূত এসে বাসা বাঁধবে। যখন আপনি ঘুমাবেন, তারা আপনার সঙ্গে ঘুমাবে এবং আপনাকে বিরক্ত করবে। ইংরেজিতে একটি কথা প্রচলিত আছে, "যেভাবে আপনি আপনার বিছানা গোছাবেন, সেভাবেই আপনি তার উপর শুয়ে থাকবেন।" এটা মূলত আপনার চারপাশের বিন্যাসের ব্যাপারে। আজকাল বিজ্ঞানীরা বলছেন যে সমগ্র অস্তিত্ব একই শক্তি যা লক্ষ রকম ভাবে ভিন্ন ভিন্ন আকারে নিজেকে প্রকাশ করছে। যেমন শক্তি বিভিন্ন আকার সৃষ্টি করে, তেমনি আকারও শক্তি উৎপাদন করতে পারে। এবং আপনার চারপাশের প্রত্যেকটি আকার একটি বিশেষ ধরনের শক্তি উৎপাদন করছে।
আমরা যে ধরনের আকার নির্মাণ করি, যে ধরনের অবয়ব আমাদের চারপাশে রেখে থাকি এবং যে ধরনের নির্মাণের মধ্যে আমরা বসবাস করি, এসবই আমরা যা কিছু, তার উপর প্রভূত প্রভাব ফেলে। অন্তর্মুখী দৃষ্টি আনা এবং আমাদের আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করতে আমরা এক রকম আবহ তৈরী করতে পারি যদি আমরা যেভাবে বসি, যেভাবে আমরা নিজেদের সাজিয়ে রাখি এবং যেভাবে আমরা চতুর্দিকে জিনিসপত্রগুলোকে রাখি এই সমস্ত ব্যাপারে আর একটু বেশি সচেতন হয়ে উঠি। যদি আপনি 'ক' বিন্দু থেকে 'খ' বিন্দুতে যেতে চান, সম্ভবত আপনি যে কোন কিছুর মধ্যে দিয়ে যেতে পারেন, কিন্তু যদি একটি সঠিক রাস্তা তৈরী থাকে, আপনি সহজেই সেখানে পৌঁছে যেতে পারেন। সেইভাবে যদি আমাদের চারপাশের স্থান- বিন্যাস এমনভাবে সজ্জিত থাকে যা আমাদের দৃষ্টি অন্তর্মুখী করতে সহায়ক, এটা অনেক বেশি সহজে ঘটবে।
Editor’s Note: Isha Kriya is a free online guided meditation that has the potential to transform the life of anyone who is willing to invest just a few minutes a day. Try it out!