সাফল্যের দ্বার উন্মুক্ত করার চাবিকাঠি
প্রকৃত সাফল্য লাভের জন্য কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত এবং আমাদের মনে সাফল্য সম্পর্কে যে ধারণা আছে, সেটা যে কত সীমিত, তা স্পষ্ট কথায় বিশ্লেষণ করেছেন সদগুরু।
কী দেখতে পাচ্ছো তুমি?
একবার শার্লক হোমস্ এবং ওয়াটসন পর্বতারোহণে গিয়েছিলেন। যাত্রাপথে রাত্রি নেমে আসায় তাঁবুর মধ্যে ওনারা শুয়ে পড়েছিলেন। হঠাৎ মাঝরাতে শার্লক হোমস কনুইয়ের আলতো ধাক্কায় ওয়াটসনকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে প্রশ্ন করলেন, “কী দেখতে পাচ্ছো তুমি”?
ওয়াটসন সোজা উপরে তাকিয়ে বললেন, “আমি পরিষ্কার আকাশ এবং তারা দেখছি, অনেক তারা দেখতে পাচ্ছি”।
শার্লক হোমস জানতে চাইলেন, “তোমার কাছে এর অর্থ কী?
ওয়াটসন তার উত্তরে বললেন, “এর মানে হল আগামীকাল আরও একটা সুন্দর, ঝকঝকে দিন আসতে চলেছে। তা, তোমার কাছে এর অর্থ কী”?
শার্লক হোমস বললেন, “আসলে এর মানে হল যে, কেউ আমাদের তাঁবুটা চুরি করে নিয়েছে”।
তুমি জীবনের প্রতিটি আঙ্গিকে সফলভাবে পদচারণা করতে পারো, যদি তুমি জীবনকে তার সঠিক পরিপ্রেক্ষিতে দেখতে শেখো। তা না হলে সাফল্যের পথে অনতিক্রম্য বাধার উদয় হবেই। সফলতার পথে এগোচ্ছো মানে, তুমি অন্যের তুলনায় অপেক্ষাকৃত দ্রুত হেঁটে চলেছো। যদি তুমি অন্যের তুলনায় দ্রুত হাঁটতে থাকো, কিন্তু তোমার বোধ বা উপলব্ধির স্তরে প্রয়োজনীয় স্বচ্ছতা যদি না থাকে, সেক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবেই তুমি অন্যের তুলনায় অনেক বেশি পীড়িত ও বিপর্যস্ত হবে, প্রতিমুহূর্তে সবকিছুর সঙ্গে তোমার সংঘাত বা সংঘর্ষ হবে।
যদি তুমি সফলভাবে কোনও কাজ করতে চাও, সেক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতাই সব সময় শেষ কথা বলবে না। এটা শুধুমাত্র নির্ভর করে চারপাশে ঘটে চলা জীবনের বাস্তবতা সম্পর্কে তোমার বোধ বা উলব্ধির স্বচ্ছতা কতখানি, তার উপর। যদি তুমি শুধু আজকের দিনটাকে পরিষ্কারভাবে দেখো, তুমি হয়তো লটারীর টিকিট বিক্রি করে টাকাপয়সা বানানোর চেষ্টা করবে। যদি তুমি আগামীকালটাও স্পষ্ট দেখতে পাও, তবে কোনও সুষ্ঠু ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুমি বিক্রি করতে চাইবে। আর পঞ্চাশ বছর পরেও কী হবে, আজ যদি সেটা পরিষ্কার দেখতে পাও, তবে তুমি নিশ্চিতভাবেই সম্পূর্ণ অন্যকিছু করবে।
ভুল জিনিষ ভুল সময়ে
যে সমস্ত মানুষ ব্যর্থ বলে পরিচিত, তারাও কিন্তু যথেষ্ট শিক্ষিত, বুদ্ধিমান এবং সক্ষমতার অধিকারী। কিন্তু জীবনের নির্দিষ্ট কোনও মুহূর্তে কিছু কিছু বিষয় তাদের উপলব্ধির মধ্যে আসেনি। তুমি হয়তো ভুল সময়ে একটি ভুল সম্পত্তির অংশ কিনেছো। তুমি হয়তো ভুল সময়ে ভুল ব্যবসা শুরু করেছো। তুমি হয়তো ভুল সময়ে ভুল মানুষকে দিয়ে কোনও কাজ করাতে গেছো। এগুলো সবই কিন্তু তোমার ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে, আবার ঠিক এর বিপরীতটাই তোমাকে সাফল্য এনে দেবে।
যে সব মানুষেরা সফলতা অর্জন করেছেন তারা ব্যতিক্রমী প্রতিভার অধিকারী নাও হতে পারেন, কিন্তু তাদের উপলব্ধি বা বোধের স্বচ্ছতা যে ছিল, নিশ্চিতভাবে বলা যায় সেটা। তুমি কী বলতে চাইছো, সেটা তখনই উপলব্ধি করে, সেই অনুযায়ী তারা বুঝিয়ে দিতে পারে বিষয়টির ইতিবৃতান্ত তোমাকে বুঝিয়ে দিতে পারে।
সুতরাং, সাফল্যের সন্ধানে যেয়ো না, নিজের নৈপুণ্যকে বাড়িয়ে যাও – উপলব্ধির স্তরকে আরও উন্নত করে যাও। যদি তুমি নিজেকে যোগ্যতার উচ্চশিখরে নিয়ে যাও, তখন তুমি যে কাজই করো না কেন, সাফল্য আসবেই। তোমার দক্ষতা যদি তীক্ষ্ণ, তবে তুমি সম্ভাবনার নির্দিষ্ট দিকে বাড়তে পারো, সফলতা তোমার জীবনের লক্ষ্য হবে না। এটা এরকম হবে যে, সাফল্যই তোমাকে অনুসরণ করবে।
যদি কোনও ব্যক্তি মানুষ অসীম সম্ভাবনা এবং অনন্য দক্ষতার আধার হয়ে ওঠে, সারা পৃথিবীই তখন আকর্ষিত হয় সেই পুরুষ বা মহিলাটির দিকে। তুমি সারা পৃথিবীকে খুঁজে বেড়ানোর পরিবর্তে যদি অন্তর্নিহিত নৈপুণ্য আর সম্ভাবনাকে বিকশিত করতে পারো, তোমাকেই খুঁজবে সারা পৃথিবী।
সম্পাদকের কথা: যে প্রশ্নের উত্তর দিতে সকলেই অপারগ, যদি এমন কোনও বিতর্কিত বা স্পর্শকাতর প্রশ্ন থাকে অথবা যদি কোনও আপাত কঠিন প্রশ্ন নিজেকে ক্রমাগত বিব্রত করতে থাকে, সেক্ষেত্রে জীবনের সব অমীমাংসিত প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার সুযোগ রয়েছে এখানে। সদগুরুকে আপনার প্রশ্ন করুন UnplugWithSadhguru.org.