কীভাবে আমি তীব্র যৌন কামনা থেকে মুক্ত হব?
প্রশ্নকর্তা: কীভাবে আমি তীব্র যৌন কামনা থেকে মুক্ত হব?
সদগুরু : আমরা সব সময় এ-ভাবেই ভাবি যে কী করে কোনও কিছু থেকে ছাড়া পাব। আপনি জোর করে কোনও কিছু থেকে মুক্ত হতে পারবেন না। আপনি যদি জোর করে কোন কিছু ছাড়াতে চেষ্টা করেন, এটা অন্য কোনও ভাবে জেগে উঠবে এবং আপনার ভিতর অন্য কোনও রকম বিকৃতি দেখা দেবে। আপনি যদি এটা ছাড়াতে চেষ্টা করেন তাহলে আপনার মনে এবং চেতনায় কেবল এটাই ঘুরবে। কিন্তু আপনি যদি এখন যা জানেন, তার চেয়ে আরও গভীর কিছুর খোঁজ পান যেটা কম তাৎপর্যপূর্ণ, সেটা নিজের থেকেই ঝরে/ সরে যাবে। আপনি কি দেখেছেন, যাঁরা কোনো বৌদ্ধিক বা চিন্তাশীল কাজ-কর্মের সাথে গভীরভাবে যুক্ত তারা যৌন সম্পর্কের বদলে একটা বই পড়তে পছন্দ করবেন।আপনি যে যৌনতার পিছনে দৌড়াচ্ছেন তার কারণ হল, এখন আপনি এটাই সবচেয়ে আনন্দের জিনিস বলে জানেন। যদি কেউ আপনাকে বলে, "এটা খারাপ, তুমি এটা ছেড়ে দাও," আপনি কি ছেড়ে দেবেন? কিন্তু আপনি যদি তার থেকেও বড় কিছুর স্বাদ পান, তখন কি আর কাউকে এটা ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে দিতে হবে? এটা নিজে থেকেই চলে যাবে। কাজেই আপনাকে শুধু প্রয়োজনীয় কাজগুলো করার জন্য কিছু সময় দিতে হবে, যা-তে একটা বৃহত্তর সম্ভাবনা আপনার কাছে বাস্তব হয়ে ওঠে। আপনি যদি অনেক বড় কিছুর নাগাল পান, অনেক বেশি স্ফূর্তিদায়ক এবং অনেক বেশি আনন্দদায়ক, তখন স্বাভাবিকভাবেই ছোট-ছোট স্ফূর্তিগুলো সরে যাবে। আপনি এটা ছেড়ে দেননি, ব্যাপারটা হল—আপনি ওটা আর এখন করেন না কারণ আপনি নিজের জন্য অনেক বড় কিছুর সন্ধান পেয়েছেন।
আপনার জীবনের অনেক ক্ষেত্রেই এটা ঘটেছে। আপনি যখন শিশু ছিলেন, তখন আপনার কাছে এই জগতের যে অর্থ ছিল বা মূল্য ছিল সেগুলো পরে বাতিল হয়ে গিয়েছিল, কারণ আপনি এমন কিছু খুঁজে পেয়েছিলেন যেগুলো আপনার বেশি মূল্যবান মনে হয়েছিল। এখানেও তাই। আপনি যদি আরও গভীর অনুভবের কিছু খুঁজে পান, আরও গভীর খুশি ও আনন্দের কিছু, তখন এগুলো নিজে থেকেই চলে যাবে।
যৌনতা আপনার একটি ছোট্ট অংশ। মানুষ অতিরিক্ত কামনাপ্রবণ হয়ে গেছে তার একমাত্র কারণ হল নির্বোধ নীতিকথা, কারণ তারা জোর করে এটা ছাড়াতে চাইছেন। আপনি যখন কাউকে 'পুরুষ' বা 'মহিলা' বলেন, এটা কেবলএকটা সামান্য শারীরিক পার্থক্যের প্রশ্ন... যেটা একটি বিশেষ প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার জন্য তৈরি। কেন আমরা একটা অঙ্গকে এতখানি গুরুত্ব দিচ্ছি? শরীরের কোনও অঙ্গকেই এত গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই। কোন অঙ্গকে যদি সেরকম গুরুত্ব দিতেই হয় তাহলে তা ব্রেন হতে পারে, যৌনাঙ্গ নয়।
দুর্ভাগ্যবশত, এসব উল্টো হয়ে গেছে। কারণ সব জায়গায় বোকা-বোকা কথা বলে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে- " আপনাকে পবিত্র হতে হবে, আপনার এসব চিন্তা করা চলবে না।" মানুষের মধ্যে এগুলোই ভরে গেছে এবং পুরোপুরি বিশৃঙ্খল অবস্থা। মানুষ যদি জীবনকে তার মতো করে দেখে, যৌনতা জীবনে নিজের ঠিক জায়গাটা খুঁজে নেবে—জীবনের একটা সামান্য অংশ; এটা এত বড় ব্যাপার হয়ে উঠবে না। সেরকমই হওয়া উচিত। অন্য সমস্ত প্রাণীদের ক্ষেত্রে তাই হয়। পশুরা সব সময়এটা নিয়ে চিন্তা করে না। যখন এটা তাদের মধ্যে থাকে, তখন থাকে। না হলে তারা সব সময় চিন্তা করে না যে কে পুরুষ আর কে নারী। মানবজাতিই কেবল এটা নিয়ে আটকে গিয়েছে। তারা এক মুহূর্তের জন্যও এটা ছাড়তে পারে না কারণ এসব নির্বোধ শিক্ষা এবং নীতিকথা তাদের মাথায় ঢুকে গেছে, যেগুলোর জীবনের সাথে কোনওযোগ নেই।
যদি তারা জীবনকে তার মতো করে দেখে, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বেশিরভাগ মানুষ এটা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে। অনেক মানুষ এর মধ্যে না গিয়েও এর থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে। জীবনের ফোকাসটাই ভুল-ভালহওয়ার জন্য ভুল-ভালবিকৃত এবং অতিরঞ্জিত হয়ে গেছে, এটাই আসল কথা। না হলে আপনি দেখতেন, অধিকাংশ মানুষের এতে কোনও আগ্রহ থাকত না বা খুব সাধারণ আগ্রহ থাকতো। এখন এটা যে রকম তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে তা হত না।