সোশ্যাল মিডিয়ায় মনোযোগ আকর্ষণ কি ভুল ?
সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের জীবনের কাহিনী পোস্ট করার মধ্যে এই মুহূর্তের মজা থাকলেও, কুড়ি বছর পরে আজকের পোস্ট, স্ন্যাপ ও গ্রাম’গুলিকে নিয়ে কী অনুভূতি হতে পারে তোমার ? সত্যের সাথে যুবসমাজ অনুষ্ঠানের মধ্যে জনৈক ছাত্রের প্রশ্ন ছিল, সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের আবেগ প্রকাশের মাধ্যমে অন্যের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাওয়া কি ভুল ?
প্রশ্ন: সদগুরু, আমরা, এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা শুধু মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাই। মনে হয়, এখনকার অধিকাংশ ছেলেমেয়ে ওই কথাটির সঙ্গে একমত হবে। আমাদের সুখ, দুঃখ, আজ কী করেছি, কী খেয়েছি, কার সঙ্গে দেখা করেছি, সব কিছুই আমরা হোয়াটসয়্যাপ, ফেসবুক, স্ন্যাপচ্যাট, ইন্সটাগ্রাম ইত্যাদিতে পোস্ট না করে থাকতে পারি না। বিশেষ করে কোনও সমস্যার ক্ষেত্রে, সমাধান না খুঁজে বা আলাদা করে বন্ধুর সঙ্গে কথা না বলে আমরা সারা পৃথিবীকে জোড় করে জানাতে চাই যে, আমরা দুঃখে আছি। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ধরনের অনুভূতির প্রকাশের মাধ্যমে মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা কি ভুল ?
সদগুরু: এটা ঠিক ভুলের ব্যাপার নয়। আজ তোমরা জীবনের যে পর্বে দাঁড়িয়ে আছো, এখন ঠিক বা ভুল কোনও কিছু বললেও খুব একটা যায় আসে না। এমনকি সেটা ঠিক না ভুল, প্রশ্নটা সেটা নিয়েও নয়, কিন্তু এটা যে সম্পুর্ণ ব্যক্তিগত বিষয় তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। একটা জিনিস তোমাদের বুঝতে হবে যে, বিশেষ করে ডিজিটাল মিডিয়ায় আজকের কথাটা থেকে যাবে তোমার সারা জীবনের জন্য। এখন যদি সেটাকে তুমি মুছে ফেলতেও চাও, ইতিমধ্যেই কেউ হয়তো সেটাকে নিয়ে গুজবে মেতেছে, এবং সেটাই আবার সামনে চলে আসতে পারে এমন একটা সময়ে যখন তোমার জীবনে সেটা সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয়। আর আজ তুমি যা আছো দশ বছর পরে হয়তো সেটাই তোমাকে লজ্জায় ফেলে দিতে পারে।
সোশ্যাল মিডিয়া আজ অবিশ্বাস্য মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। মানব জাতির ইতিহাসে আগে কখনও এভাবে জনসংযোগ করা কারও পক্ষে সম্ভব হয়নি। কিন্তু জনসংযোগের নামে আমরা কী করছি, সেটাই প্রশ্ন। আমার মনে হয়, এই বিষয়টা নিয়ে আরও একটু চিন্তা ভাবনা করার দরকার আছে। হাতে আইসক্রিম নিয়ে বা অন্য কোনও ভাবে তুমি যে সেলফি তুলছো, সেটা ঠিক না ভুল আমি সে প্রশ্নেই যাচ্ছি না – এটা ছোটখাটো স্ফূলিঙ্গের মতো। এটাই আগামীকাল তোমাকে লজ্জায় ফেলে দিতে পারে। যদি তুমি তা না হও, তাহলে সব ঠিকই আছে। তোমার কখনই বলব না যে তোমার এটা করা উচিত বা ওটা করা উচিত নয়। কিন্তু আর একটু বেশি বিচক্ষণ হলে সেটা সারাজীবন তোমাকে পাশে থেকে সাহায্য করবে, কারণ তোমার আজকের করা কোনও কাজের জন্য অনেক দিন পরে না পস্তাতে হয়, সেটাই দেখতে হবে।
সম্পাদকের কথা: যে প্রশ্নের উত্তর দিতে সকলেই অপারগ, যদি এমন কোনও বিতর্কিত বা স্পর্শকাতর প্রশ্ন থাকে অথবা যদি কোনও আপাত কঠিন প্রশ্ন নিজেকে ক্রমাগত বিব্রত করতে থাকে, সেক্ষেত্রে জীবনের সব অমীমাংসিত প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার সুযোগ রয়েছে এখানে। সদগুরুকে আপনার প্রশ্ন করুন UnplugWithSadhguru.org.