স্থির হয়ে বসে দেহ ও মনকে স্থির করা
দীর্ঘ সময় ধরে স্থির হয়ে বসে থাকতে গেলে কী দরকার এই প্রসঙ্গে একটি প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন সদগুরু এবং মন, দেহ, আবেগ ও শক্তিকে স্থির করার গুরুত্ব সম্পর্কে বলছেন।
প্রশ্নকর্তা: সদগুরু, আমার ইচ্ছা করে আমি যদি দীর্ঘ সময় ধরে এমনিই বসে থাকতে পারতাম, তবে আমি আমার দেহটি স্থির রাখতে পারি না। এই সীমাবদ্ধতাটিকে আমি কীভাবে অতিক্রম করতে পারি?
সদগুরু: স্থির হয়ে বসে থাকতে গেলে, আপনার শরীরকে অবশ্যই বিশেষভাবে প্রস্তুত করা দরকার - হঠযোগের ভূমিকা সেই দিশাতেই। কিন্তু আপনার শরীর যদি ভালো অবস্থায় থাকেও, তবুও আপনি স্থির হয়ে বসে থাকতে পারবেন না, যতক্ষণ না আপনি আরো অন্যান্য কিছু আঙ্গিককেও স্থির করছেন।
যোগের আটটি অঙ্গ আছে – যম ও নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধারণা, ধ্যান, এবং সমাধি। এগুলি ধাপ নয় - এগুলি হলো অঙ্গ। আপনার যদি আটটি অঙ্গ থাকে,আপনার দরকার অনুযায়ী কোনটি আগে ব্যবহার করবেন সেটা আপনার পছন্দ। কোন অঙ্গটি আগে সঞ্চালনা করবেন সে বিষয়ে তেমন কোনো নিয়ম আছে কি? আপনি যেহেতু ভারতের - ভাববেন না যেন আপনাকে সবসময় ডান পা'টাই আগে বাড়াতে হবে। জীবনের নির্দিষ্ট কিছু আঙ্গিক আছে যেখানে আপনার ডান পা আগে ফেলা ভালো আবার এমন নির্দিষ্ট কিছু আঙ্গিক আছে যেখানে আগে বাম পা ফেলাই শ্রেয়। কোন পা'টা আগে বাড়াবেন নির্ভর করছে কাজের উপর। একইভাবে, যোগের কোন অঙ্গটিকে প্রথমে ব্যবহার করবেন নির্ভর করে আপনি কোথায় আছেন তার উপর।
মানবজাতির ইতিহাসে দীর্ঘকাল ধরে, শরীরটাই ছিল সবথেকে বলিষ্ঠ দিক এবং সবচেয়ে বড় বাধা। অতএব, প্রথমেই লোকেদের হঠযোগ করানো হত। কয়েকশো বছর আগে, মাত্র ৫-১০% মানুষের মানসিক সমস্যা ছিল। বাকিদের কেবল শারীরিক সমস্যা ছিল। এমনকি আজও গ্রামগুলিতে, বেশিরভাগ লোকেরই শুধু শারীরিক সমস্যা রয়েছে, মানসিক সমস্যা নয়। কিন্তু সাধারণত, শেষ কয়েকটি প্রজন্মে, লোকজনের শারীরিক সমস্যার চেয়ে মানসিক সমস্যা বেশি, কারণ তাঁরা তাঁদের শরীরের চেয়ে মনকে বেশি ব্যবহার করেন। মনুষ্যজাতির জন্য এটি একটি বিরাট পরিবর্তন। ১০০ থেকে ২০০ বছর আগে অবধিও মানুষ মনের থেকে শরীরকে বেশি ব্যবহার করতেন।
যেহেতু আমি একজন সমসাময়িক অতীন্দ্রিয়বাদী, আমি এখানে যাঁরা আছেন তাঁদেরকেই দেখছি। তাঁদের সমস্যাগুলি যেহেতু শারীরিকের তুলনায় বেশিরভাগটাই মানসিক, তাই আমরা সাধারণত ক্রিয়া এবং ধ্যান দিয়েই শুরু করি, যেটা প্রধানত শক্তি এবং মনের স্তরে কাজ করে আর কেবল তারপরেই হঠযোগে যাই।
আপনি যদি স্থির হয়ে বসে থাকতে চান, শুধুমাত্র আপনার শরীরের উপর কাজ করাটাই যথেষ্ট হবে না - আপনাকে আপনার মনের উপরেও কাজ করতে হবে। বিশেষ করে এই প্রজন্মের জন্য সমগ্র দেহতন্ত্র তথা মন, আবেগ, শরীর এবং শক্তিকে স্থির করার দিকে মনোযোগ দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। আগেকার যুগের মানুষদের চেয়ে এখনকার মানুষরা বেশি বুদ্ধিমান - এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা। বিষয় শুধু এটাই যে যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে মানুষের মন আজ বেশি নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা যেভাবে গঠিত, অনিবার্যভাবেই তা বিক্ষুব্ধ মননের দিকে নিয়ে যায়। একজন শিশু কবিতা থেকে শুরু করে গণিত সবই পড়ছে - উভয়ই সংযুক্ত, কিন্তু এমন কেউ নেই যিনি সংযোগ সাধনটি করে দেবেন। সঙ্গীত শেখার পর তারা রসায়ন শিখতে যায় - এ'দুটো সংযুক্ত, কিন্তু এমন কেউ নেই যিনি সংযোগ সাধনটি করে দেবেন কারণ সঙ্গীত বিভাগ আর রসায়ন বিভাগের মধ্যে সুসম্পর্ক নেই।
সবকিছুই খাপছাড়াভাবে পড়ানো হয় কারণ মোটের উপর কেউ জানতে চাওয়ার ভালোবাসা থেকে পড়ছে না। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে একটা চাকরি পাওয়ার জন্য সবাই পড়ছে। এটা নিজেকে শিক্ষিত করার খুব ধ্বংসাত্মক উপায় আর বাঁচার জন্যেও খুব করুণ একটা উপায়। কিন্তু এটা যতই অর্থহীন হোক না কেন, পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই এভাবে থাকাকে বেছে নিয়েছেন।
সম্প্রতি, আমি একটি খুব উচ্চমানের সান্ধ্যকালীন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম যেখানে কোণের দিকটায় মদ্য পরিবেশন করা হচ্ছিল। নিমন্ত্রণকর্তা বললেন, "সদগুরু এখানে আছেন, আসুন আমরা মদ্য পরিবেশন থেকে বিরত থাকি।" কিন্তু কিছু লোকজন এটা হাতছাড়াই করতে পারছিলেন না। একজন মন্ত্রী ছিলেন, তিনি এসে বললেন, "আমি নিশ্চিত সদগুরু বাস্তবধর্মী মানুষ - উনি কিছু মনে করবেন না।" আমি বলি, "সারা পৃথিবী আবার কখন মদ্যপ হয়ে গেল?" আজকাল, বিষয়টা এরকম হয়ে দাঁড়িয়েছে যে আপনি যদি বাস্তবধর্মী হন, আপনি অবশ্যই পান করেন, নচেৎ, আপনি এই পৃথিবীরই নন।
আমরা সম্পূর্ণ ভুলভাবে মানব মনের চর্চা করছি। তাহলে আমরা কীকরে মন শান্তিপূর্ণ ও আনন্দময় হবে বলে আশা করতে পারি? এটি কাজ করবে না। যদি না আপনি সঠিক জিনিস করেন, সঠিক জিনিসটি আপনার সাথে ঘটবে না। এখানে এমনিই বসলে আপনার শরীর যদি স্বাচ্ছন্দ্যে না থাকে, আপনি চিকিৎসাগতভাবে স্বাভাবিক বলে ঘোষিত হলেও, অবশ্যই, এতে কিছু গণ্ডগোল রয়েছে। আমি এটা জেনে অবাক হয়েছিলাম যে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মেডিকেল পাঠ্যবই অনুযায়ী, সপ্তাহে দু'বার শৌচালয়ে যাওয়া স্বাভাবিক বলে মনে করা হয়। যোগের সংস্কৃতি অনুসারে, যোগীদের দিনে দুবার শৌচালয়ে যাওয়া উচিত, কারণ দেহতন্ত্রে মলমূত্র অবশিষ্ট থাকা উচিত নয়। যা বেরিয়ে যাওয়া উচিত তা যেন অবিলম্বেই বেরিয়ে যায়। প্রথমেই যখন সকালে আপনি ঘুম থেকে ওঠেন,এটা হয়ে যাওয়া উচিত। সপ্তাহে দু'বার মানে গড়ে, আপনি তিনদিন ধরে এটিকে আপনার শরীরে রাখেন আর আপনি আশা করেন যে আপনার মন ঠিক থাকবে? মন ঠিক থাকবে না কারণ আপনার মলাশয় এবং আপনার মন সরাসরি সংযুক্ত।
মলাশয়টি মূলাধারে অবস্থিত যা আপনার শক্তিতন্ত্রের ভিত্তি। মূলাধারায় যা কিছুই ঘটে না কেন কোনো না কোনোভাবে সমগ্র দেহতন্ত্রেই তা ঘটে - আর বিশেষ করে আপনার মনে। আজকালকার বৈজ্ঞানিকগণ এরকম সিদ্ধান্তে পৌঁছোচ্ছেন কারণ তাঁরা একটি অণুবীক্ষণ যন্ত্রের তলায় ভাগে ভাগে মানুষের বিষয়ে পড়াশোনা করেন। অতএব, প্রতিটি অংশ সম্পর্কে, তাঁরা আলাদা আলাদা সিদ্ধান্তে উপনীত হন। সমগ্রকে বাইরে থেকে উপলব্ধি করা যায় না - এটি কেবলমাত্র অন্তর থেকেই উপলব্ধি করা যায়।
নিজের সাধনা করুন, আরো প্রাকৃতিক খাবার অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আপনার ডায়েট পরিবর্তন করুন আর আপনি দেখবেন যে মাস দুয়েকের মধ্যেই, আপনি স্থির হয়ে বসতে পারবেন।
Editor’s Note: Isha Hatha Yoga programs are an extensive exploration of classical hatha yoga, which revive various dimensions of this ancient science that are largely absent in the world today. These programs offer an unparalleled opportunity to explore Upa-yoga, Angamardana, Surya Kriya, Surya Shakti, Yogasanas and Bhuta Shuddhi, among other potent yogic practices.