তথ্য ও প্রযুক্তির অত্যধিক চাপ কীভাবে সামলানো যায়
অধুনা সুসংবদ্ধ তথ্য সম্প্রচারের যুগে তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে আতঙ্কিত, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল রাজ্যবর্ধন রাঠোর জানতে চাইলেন সদগুরুর কাছে, এই তথ্য বিস্ফোরণের ফলে উদ্ভুত মানসিক চাপ থেকে বাঁচার জন্য যুব সম্প্রদায়ের কী করণীয় –
কর্ণেল রাজ্যবর্ধন রাঠোর: তারুণ্যের প্রকাশ চ্যালেঞ্জ, লক্ষ্য ও লক্ষ্য পূরণের উচ্চাকাঙ্ক্ষায়। অনেকেই অন্যের তৈরি সাফল্যের ধারণাকে সামনে রেখে দৌড়ায়। এই অত্যন্ত সুসংবদ্ধ তথ্য সম্প্রচারের যুগে কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ ও তথ্য বিস্ফোরণ মিলে অতিরিক্ত চাও তৈরি করছে। এই অতিরিক্ত চাপ আমাদের যুব সমাজের খুশি ছিনিয়ে নিচ্ছে। ক্রমশই যেন যুবসমাজকে অবসাদ গ্রাস করছে। তো এই কঠিন সময়ে তরুণরা কী করে নিজেদের সর্বদাই খুশি রাখতে পারবে ? আমি জানতে চাই, যুবসমাজের খুশির অন্তরালে থাকা সত্যটা কী ?
সদগুরু: নমস্কার রাজ। আমাদের প্রতিটি প্রজন্মেই কিছু মানুষ থাকেন যারা সর্বদাই কোনও না কোনও বিষয়ে অভিযোগ করেই থাকেন। আবার পাশাপাশি এমন মানুষও থাকেন যারা সমকালীন পরিস্থিতিকে সুন্দরভাবে নিজেদের কাজে লাগান।
বর্তমান প্রজন্মের মানুষ সুযোগ, সুবিধা বা স্বাচ্ছন্দ্যের প্রশ্নে পূর্ববর্তী সব প্রজন্ম থেকেই অনেক বেশি এগিয়ে আছে। তবে পৃথিবী কিন্তু হাজার বছর আগের চেয়ে দ্রুত গতিতে আবর্তন করছে না – আজও পৃথিবীর আবর্তন গতি আগের মতোই আছে। কিন্তু আজ যে দূরত্ব কমে এসেছে বলে অনুভূত হচ্ছে তার কারণ উল্কার গতিতে প্রযুক্তির উন্নয়ন।
আজ যারা তথ্যের অত্যধিক চাপ নিয়ে অভিযোগ করছেন, তাদের হাজার বছর আগে মানুষের জীবনযাপন পদ্ধতিটি একবার কল্পনা করা উচিত। সেই সময় মাত্র একশো কিলোমিটার দূরের খবরই তোমার কাছে আসার কোনও উপায় ছিল না। কোনও সুন্দর ঘটনা অথবা কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয়, কোনও ঘটনার জানতে এক দু’মাস সময় লেগে যেত। কিন্তু আজ পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তের ঘটনাই মুহূর্তের মধ্যেই তোমার গোচরে আসছে।
অধুনা প্রযুক্তির যে সীমাহীন উন্নয়নের সাক্ষী আমরা, তা তো এক ধরনের আশীর্বাদ। অথচ আজকের মানুষের জীবনযাপনকে সহজ ও সুখকর করে তোলা প্রযুক্তির বিরুদ্ধে আমাদের অভিযোগের যেন শেষ নেই। প্রযুক্তি নয়, সমস্যা হল, এই ধরনের দ্রুতগতির জীবনযাপনের উপযোগী করে মানুষ নিজেকে সঠিক ভাবে প্রস্তুত করতে সক্ষম হয়নি।
নিজের দক্ষতার বৃদ্ধি ঘটানো
কল্পনা করো, আজ থেকে এক হাজার বছর আগে তুমি এই পৃথিবীতে বাস করতে। সকালে জলের প্রয়োজন হলে তোমাকে হেঁটে হেঁটে নদীতে গিয়ে বালতি ভর্তি জল আনতে হতো। বিশ্বাস করো, এখনকার তরুণদের জল ভর্তি দু’টো বালতি হাতে এক মাইল হেঁটে যাবার মতো শারীরিক সক্ষমতা নেই। এই সাদামাটা কাজটার জন্যও তারা শারীরিক ভাবে যঠেষ্ট সক্ষম নয়।
প্রযুক্তির সহায়তা ছাড়া এবং আজকের এই শারীরিক সক্ষমতা নিয়েই যদি তোমাকে হাজার বছর আগে ওই জল ভর্তি বালতি বইতে হতো, অভিযোগ না করে কি থাকতে পারতে? নিশ্চিত ভাবেই তুমি অভিযোগ করতে, কারণ ওই কাজটি করার মতো শারীরিক সক্ষমতাই নেই তোমার। একই ভাবে, বর্তমান সময়ের রকমারি বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নেবার মতো মানসিক সক্ষমতা যদি তুমি অর্জন করতে না পারো, সেক্ষেত্রে তোমাকে অভিযোগ করতেই হবে।
নিজেকে এমনভাবে প্রস্তুত করা উচিত, যাতে যে কোনও ধরনের পরিস্থিতির উপযোগী হয়ে বেঁচে থাকতে পারো। জীবনের শুরুতে উচ্চাকাঙ্ক্ষা, চাহিদা বা জীবনযাত্রার মান গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হওয়ার কথা নয়। জীবনের প্রাথমিক পর্বে একমাত্র যা তোমার করণীয় হওয়ার কথা তা হল, নিজেকে ক্রমাগত বৃহত্তর সম্ভাবনার উপযোগী করে প্রস্তুত করে যাওয়া। যদি তুমি নিজ সত্তার আত্মিক উন্নতির পিছনে সঠিক পদ্ধতিতে সময় ব্যয় করো, বর্তমান সময়ের যে কোনও পরস্থিতিকেই অনায়াসে সামলাতে তুমি দক্ষ হয়ে উঠবে। সবচেয়ে বড় কথা, আধুনিক জীবনের সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ যেটি, সেই প্রযুক্তির বিরুদ্ধে তুমি কোনও অভিযোগ জানাবার কথা ভাববেই না।
ভারত থেকে তুমি মাত্র চোদ্দ ঘন্টার মধ্যে আমেরিকায় উড়ে যেতে পারছো – আগে কখনও এমন জিনিষ ঘটেনি। তোমার হাতের তালুতে ধরা ফোনটির মাধ্যমে তুমি পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তে থাকা কোনও ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতে সক্ষম হচ্ছো। অথবা বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে ঘটে যাওয়া কোনও ঘটনা, এমনকি মহাকাশে অবিরাম ঘটে চলা বিভিন্ন ঘটনার সাক্ষী হতে পারছো তুমি। তোমার দৃষ্টিশক্তি বা শ্রবণশক্তির অতীত বা ইন্দ্রিয় ক্ষমতার অতীত যা, সেসবও তোমার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় চলে আসছে।
আত্মোন্নতিই মূল লক্ষ্য
আধুনিক প্রযুক্তি অভাবনীয় উন্নতি করে চলেছে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে। সময় এসেছে এখন এই পরিবির্তিত দুনিয়ার সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য তোমার নিজেকে ক্রমাগত উন্নত করে চলার। Inner Engineering কিংবা যোগ শব্দটির অর্থ হল তোমার নিজের জীবনকে উন্নীত করা। আত্মোন্নতির কথা না ভেবে যদি শুধু কাজ কর্মের পরিধিকে বাড়িয়ে চলো, সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত কাজের বোঝা তোমাকে বিপর্যস্ত করবেই। এটা সেই পুরোনো গাড়িকে ফর্মূলা ওয়ান প্রতিযোগিতায় নামিয়ে দেওয়ার মতো, গাড়িটি তো ভেঙ্গে চুরমার হবেই। ঠিক এই ঘটনাই ঘটছে সব মানুষের ক্ষেত্রে।
শুধুমাত্র শিশুদের প্রথাগত শিক্ষার মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের উপযোগী পেশাদার তৈরির বদলে, প্রথম থেকেই তাদের আত্মোন্নতির উপযোগী শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন। আত্ম রূপান্তরের প্রক্রিয়াগুলি জীবনে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কারণ, বাহ্যিক পরিবেশ ও পরিস্থিতির প্রায় পুরোটাই যন্ত্রের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে চলেছে আগামীদিনে। যে যন্ত্রগুলিকে তুমি ব্যবহার করবে, তোমার অন্তর্জগতটি যেন তাদের চেয়ে বেশি বোধসম্পন্ন হয় – এটাই কাম্য।
সম্পাদকের কথা : যে প্রশ্নের উত্তর দিতে সকলেই অপারগ, যদি এমন কোনও বিতর্কিত বা স্পর্শকাতর প্রশ্ন থাকে অথবা যদি কোনও আপাত কঠিন প্রশ্ন নিজেকে ক্রমাগত বিব্রত করতে থাকে, সেক্ষেত্রে জীবনের সব অমীমাংসিত প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার সুযোগ রয়েছে এখানে। সদগুরুকে আপনার প্রশ্ন করুন UnplugWithSadhguru.org.