বিভূতির প্রস্তুত প্রণালী, প্রয়োগ পদ্ধতি ও বিভূতির ব্যবহার উপযোগী শরীরের নির্দিষ্ট স্থান নির্বাচন ইত্যাদি বিষয়ে অতীন্দ্রীয়বাদী ও যোগী সদগুরুর অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণ বর্তমান নিবন্ধটির প্রতিপাদ্য .

 

সদগুরুঃ বিভূতি নামে পরিচিত পবিত্র ভস্মটি শরীরে প্রয়োগের বহুমাত্রিক প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে। প্রথমত, ভৌত শরীরের মধ্যে শক্তির প্রেরণ বা সঞ্চারনের জন্য বিভূতি একটি শক্তিশালী মাধ্যম। Energy Body বা প্রাণ শরীরকে নিয়ন্ত্রণ ও সঠিক দিশা প্রদানে সক্ষম এই পবিত্র ভস্মটি। এছাড়াও ভৌত দেহে বিভূতি প্রয়োগের অপর একটি প্রতীকী তাৎপর্যও রয়েছে। জীবনের নশ্বর প্রকৃতির কথা প্রতি মুহূর্তে মনে পড়িয়ে দেয় এই বিভূতি, মনে হয় যেন ওই পার্থিব শরীরটিকে সর্বদা নশ্বরতার ধরাচূড়া পড়িয়ে রেখেছ তুমি।

সাধারণত যোগীরা শ্মশানের মধ্য থেকে সংগৃহিত ভস্মকেই বিভূতি হিসেবে ব্যবহার করেন। ওই ভস্মটি যদি ব্যবহারের অনুপযুক্ত হয়, সেক্ষেত্রে গোময় হয় পরবর্তী বিকল্প। অন্যান্য উপাদান মিশ্রিত হলেও গোময়ই মূল উপাদান হিসেবে গণ্য হয়। আবার এভাবে প্রস্তুত ভস্মটিও যদি ব্যবহারযোগ্য না হয়, তখন চালের তূষ হয়ে ওঠে পরবর্তী বিকল্প, যা কিনা প্রকৃত পক্ষে ভৌত দেহ নামক ওই বহিরঙ্গের খোলসটির প্রতিই অঙ্গুলি নির্দেশ করে।

পবিত্র ভস্ম ব্যবহারের কারণ কী –

দুর্ভাগ্যবশত, আজকাল বহু জায়গায় এক ধরনের সাদা পাথরের গুঁড়োকে বিভূতি বা পবিত্র ভস্ম বলে চালানোর কলঙ্কময় ব্যবসা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। কিন্তু এটি সঠিক ভাবে প্রস্তুত করলে এবং শরীরের নির্দিষ্ট জায়গায় এটি ব্যবহার করলে, এই বিভূতি জৈব তন্ত্রটিকে যঠেষ্ট সংবেদনশীল এবং উচ্চতর শক্তিকে আহোরণের উপযোগী করে তুলতে পারে। বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে সকালবেলা শরীরের কয়েকটি বিশেষ জায়গায় বিভূতির প্রয়োগ তোমার সামগ্রিক তন্ত্রটিকে ঐশী শক্তি গ্রহণের উপযোগী করে তুলতে পারে। সেই মুহূর্তে শরীরের ঠিক কোন অংশটি কতটা সুগ্রাহী (receptive), তার উপর নির্ভর করে পারিপার্শ্বিক দৈব শক্তিকে তুমি কীভাবে বা কতখানি গ্রহণ করতে সক্ষম হবে। প্রায়শই এটা দেখা যায় যে, একই ব্যক্তি, বস্তু বা বিষয়কে তুমি বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে অনুভব করছ বা ভিন্নতর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছ। জীবনের অনন্ত প্রবাহ সেই মুহূর্তে কীভাবে তোমাকে প্রভাবিত করছে, সেটিই সার্বিক তফাত গড়ে দেয়। সুতরাং, তোমার দেহ তন্ত্রে উচ্চতর মাত্রাগুলি যাতে সর্বদা সুগ্রাহী থাকে, সেদিকেই নজর দেওয়া উচিত। সেই কারণেই, শরীরের কয়েকটি বিশেষ জায়গায় বিভূতির প্রয়োগ তোমার সামগ্রিক তন্ত্রটিকে ঐশী শক্তির প্রতি সুগ্রাহী করে তুলতে সক্ষম।

সেই মুহূর্তে শরীরের ঠিক কোন অংশটি কতটা সুগ্রাহী (receptive), তার উপর নির্ভর করে পারিপার্শ্বিক দৈব শক্তিকে তুমি কীভাবে বা কতখানি গ্রহণ করতে সক্ষম হবে।

শরীরের সামগ্রিক তন্ত্রে শক্তি সঞ্চারনের জন্য প্রয়োজনীয় সাতটি ভিন্ন ভিন্ন শক্তি কেন্দ্র বিদ্যমান, যা জীবনের সাতটি ভিন্ন মাত্রাকে প্রত্যক্ষ অনুভূতিতে এনে দিতে সক্ষম। এই শক্তি কেন্দ্রগুলির প্রতিটিকে এক একটি চক্র বলে অভিহিত করা হয়। এই চক্রগুলি প্রকৃত পক্ষে ভৌত দেহের অভ্যন্তরে শক্তি সঞ্চারণ প্রণালীর বিভিন্ন সংযোগস্থল। শরীরের মধ্যে এই চক্র বা শক্তিকেন্দ্রগুলির কোনও ভৌত অস্তিত্ব নেই, শরীরকে ছেদ করলে এদের কোনটিকেই তুমি দেখতে পাবে না। অতি সূক্ষ্ম এই শক্তি চক্রগুলি মুখ্যত মানবিক বোধি বা চৈতন্যের ভিন্ন ভিন্ন স্তরকে নির্দেশ করে। এই বোধির ব্যাপ্তি বা গভীরতা যত তীব্র হয়, অন্তর্নিহিত শক্তিও সেভাবেই ক্রমস ঊর্ধ্ব চক্রের দিকে ধাবিত হয়। শক্তি প্রবাহে যে চক্রটি বা চক্রগুলি সর্বাধিক কর্তৃত্বশালী হয়, তার বা তাদের নিজস্ব প্রকৃতি অনুযায়ী মানবিক জীবনও সেই ধরনের অভিজ্ঞতার আধার হয়ে ওঠে।

বিভূতির প্রয়োগ পদ্ধতিঃ

প্রথা অনুযায়ী, পবিত্র ভস্মটি বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ ও অনামিকার মাঝে সামান্য পরিমাণে নিয়ে শরীরের মূলত তিনটি স্থানে প্রয়োগ করতে হয়। টিপের আকারে দুই ভ্রূর মধ্যস্থলে স্থিত আজ্ঞাচক্র, কন্ঠদেশে স্থিত বিশুদ্ধ চক্র ও বক্ষদেশের মাঝে পাঁজরার সংযোগস্থলে স্থিত অনাহত চক্রে টিপের আকারে বিভূতির প্রয়োগ বিধি প্রচলিত। অন্যান্য চক্রের তুলনায় ওই চক্রগুলি অধিকতর সংবেদনশীল বলেই ওই স্থানগুলিতে বিভূতির প্রয়োগ প্রচলিত।

বিভূতি প্রয়োগবিধি গভীর অন্তর্জ্ঞান প্রসূত বিজ্ঞান জাত। কিন্তু বর্তমান সময়ে সেই বিশেষ বোধটি লুপ্ত হওয়ার ফলে বিভূতির প্রয়োগ কপালে তিলক রেখা আঁকা ও তার আকার আকৃতি নিয়ে নির্বোধ বিতর্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে।

বিভূতি প্রয়োগবিধি গভীর অন্তর্জ্ঞান প্রসূত বিজ্ঞান জাত। কিন্তু বর্তমান সময়ে সেই বিশেষ বোধটি লুপ্ত হওয়ার ফলে বিভূতির প্রয়োগ কপালে তিলক রেখা আঁকা ও তার আকার আকৃতি নিয়ে নির্বোধ বিতর্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। অনাহত চক্রে বিভূতির প্রয়োগের কথা বলা হয়েছে যাতে জীবন প্রেমময় অনুভূতির প্রগাঢ় অভিজ্ঞতায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। বিশুদ্ধ চক্রে বিভূতির প্রয়োগের ফলস্বরূপ জীবন এক অনন্ত শক্তির আধার হিসেবে অনুভূত হয়। এখানে বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য, শক্তির আধার বলতে শারীরীক সক্ষমতা বা মানসিক কাঠিন্যের কথা বোঝানো হয় না। বিশুদ্ধ চক্রের প্রভাবে মানুষের অন্তর্নিহিত প্রাণশক্তি এতটাই শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে যে, একজন শুধুমাত্র তার নীরব উপস্থিতি দিয়েই চারপাশকে প্রভাবিত করার সক্ষমতা অর্জন করতে পারে। আজ্ঞা চক্রে বিভূতির প্রয়োগের ফলে মানবিক অন্তর্জ্ঞান বা অতীন্দ্রীয় বোধি বিকশিত হয়ে জীবনকে অনুরূপ অভিজ্ঞতায় ভরিয়ে তোলে।

বিভূতির প্রচলন ও প্রয়োগবিধি গভীর অন্তর্জ্ঞান প্রসূত বিজ্ঞানের মননশীলতায় সমৃদ্ধ। কিন্তু বর্তমান সময়ে সেই বিশেষ বোধটি লুপ্ত হওয়ার ফলে বিভূতির প্রয়োগ কপালে তিলক রেখা আঁকা ও তার আকার আকৃতি নিয়ে নির্বোধ বিতর্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। বিভূতি শিব বা ঈশ্বর প্রদত্ত কোনও দৈব উপাদান নয়, বিভূতির প্রয়োগ কোনও বিশ্বাস প্রথার (belief system) উপর নির্ভরশীল নয়। ভারতীয় কৃষ্টিতে বিভূতিকে মানবিক চৈতন্য বিকাশিত করার উপযোগী যন্ত্র হিসেবেই গণ্য করা হয়। সঠিক প্রণালীতে প্রস্তুত করতে পারলে এই পবিত্র ভস্ম থেকে ভিন্নতর প্রাণস্পন্দন বিকীর্ণ হয়। দেহকে ওই স্পন্দনের উপযোগী সুগ্রাহী করে তোলা ও এই অন্তর্জ্ঞান প্রসূত বিজ্ঞানটিকে সঠিক ভাবে কাজে লাগানোই কাম্য।

সম্পাদকের কথা :-ISHA Shoppee তে সঠিক বিধি মেনে, অত্যন্ত যত্ন সহকারে প্রস্তুত, প্রভূত শক্তি প্রদানকারী বিভূতি পাওয়া যায়, যার ব্যবহার নিশ্চিত ভাবেই জীবনকে আরও সুগ্রাহী করে তুলবে।